ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্যুরিস্ট কোচের স্বচ্ছ আলোতে চলবে কক্সবাজারমুখী ট্রেন

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ট্যুরিস্ট কোচের স্বচ্ছ আলোতে চলবে কক্সবাজারমুখী ট্রেন

মাকসুদ আহমদ, কক্সবাজার থেকে ফিরে ॥ খোলামেলা পরিসরে ট্যুরিস্টরা দেখতে চান প্রকৃতি। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ চলছে প্রকৃতির কোলঘেঁষে। পাহাড়, নদী কোনটিই বাদ নেই এ রেললাইনকে ছেড়ে। ট্যুরিস্টদের জন্য চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রথম ধাপের রেললাইন প্রকল্পে যুক্ত হবে ট্যুরিস্ট কোচ। ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামু থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় থাকা ঘুমধুম পর্যন্ত আরও প্রায় ২৯ কিলোমিটারসহ মোট ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এখন মাটি ভরাট ও ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। চলছে ৯টি স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণের কাজও। সিঙ্গেল লাইনে ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবে ট্যুরিস্ট কোচ সংবলিত ট্রেন। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্প দীর্ঘদিনের সমীক্ষার প্রতিফলন। বর্তমান সরকার পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর শুধু পর্যটন খাতই বিকশিত হবে না, রেলে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। শুধু পর্যটকদের উদ্দেশেই নয়, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। দুটি পর্যায়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প পরিচালকের দফতর থেকে জানা গেছে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) রেলওয়ের করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করাই হচ্ছে এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি দুটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন হবে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু হতে মিয়ানমার সীমান্তের নিকটে থাকা ঘুমধুম পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার পথেও বসানো হবে সিঙ্গেল লাইনে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক। মূলত পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে মেগা প্রকল্পের মধ্যে এটিকেও দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী প্রকল্প দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে রেল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পটি মূলত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত তথা ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সৈকতকে ঘিরে এদেশে পর্যটন শিল্পকে উন্নয়নের দ্বারে পৌঁছে দেয়ার টার্গেট। পর্যটনে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে বিশ^ দরবারে পরিচয় করার সময়টুকু পার হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু সে অনুযায়ী পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হয়নি কক্সবাজারে। একমাত্র সড়কপথ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। তবে শুধু ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান চলাচল করলেও তা বিভিন্ন সময়ে বন্ধ থাকে। এই প্রথম চট্টগ্রাম থেকে শুধু নয়, সিলেট ও ঢাকা থেকেও কক্সবাজার ছুটে যাওয়ার সুযোগ থাকবে পর্যটকদের। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে। মহাসড়কের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে মাছ, লবণ ও রাবারের কাঁচামাল এমনকি বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন হয়ে থাকে।
×