ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জনমনে নানা প্রশ্ন

তুফান কাহিনী- মানুষের মধ্যে কৌতূহল বাড়ছে, সেই সঙ্গে শঙ্কাও

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২০ জানুয়ারি ২০২১

তুফান কাহিনী- মানুষের মধ্যে কৌতূহল বাড়ছে, সেই সঙ্গে শঙ্কাও

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ চাঞ্চল্যকর বহুল আলোচিত বগুড়ার তুফান কাহিনী নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের মাত্রা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শঙ্কা। সুধীজনের কথা- তুফান সরকার তার ক্যাডার এবং ঘটনার আড়ালের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা কি ফের ছাড়া পেয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে! আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলেছে, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তুফান সরকারের ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এখন বিচারের অপেক্ষা। এদিকে তুফান সরকারের জামিন হলেও কারাগার থেকে ছাড়া পাননি। ধর্ষণ মামলার জামিনের নথি কারাগারে পৌঁছেছে। তুফান সরকারের বিরুদ্ধে আরও ছয়টি মামলা আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় জামিন থাকলেও ‘প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট’ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় তুফান সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। উল্লেখ্য, প্রায় পৌনে চার বছর আগে এক শিক্ষার্থী ভাল কলেজে ভর্তির প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। পরে তরুণী ও তার মা বিচার চাইলে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। ঘটনায় অভিযোগ ওঠে মূল নায়ক তুফান সরকার ও তার ১০ সহযোগীর বিরুদ্ধে। তাদের গ্রেফতার করা হয়। রবিবার ধর্ষণ মামলায় জামিন পেয়েছেন তুফান সরকার। বগুড়ার মানুষ পূর্বের ঘটনা মনে করে অবাক হয়ে যাচ্ছে। কি করে ধর্ষণের শিকার তরুণী ও তার মা আদালতে ঘটনা অস্বীকার করল। সাধারণের বড় কৌতূহল- কিভাবে সাড়া জাগানো নিন্দনীয় ঘটনার আপোস হতে পারে। এই আপোসে কত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে অপরাধী চক্রকে। প্রভাবশালীরা যদি ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ ঘটিয়ে অর্থের জোরে পার পেয়ে যায় তাহলে সমাজের মূল্যবোধ কোথায় থাকে? বিবেক কোথায় থাকে? সমাজে ঘুন পোকা ঢুকে সামাজিক দূষণ বাড়িয়ে দিলে তার দায় কে নেবে? নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রভাবশালী ও তাদের বখাটে সন্তানদের দ্বারা ধর্ষণসহ যত জঘন্য অপরাধ ঘটে তার সিংহভাগই বহু অর্থের বিনিময়ে গোপন আঁতাতে মীমাংসা হয়ে যায়। ধর্ষণের অনেক ঘটনা মিউচুয়াল সেক্স বলে চালিয়ে দেয়া হয়। লাজ-লজ্জায় অনেক ঘটনা চাপা দেয়া হয়। একই ধরনের কথা বললেন একজন এ্যাডভোকেটও। তিনি বলেন, বিচার হয় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। সেখানে ভিকটিম নিজেই যদি সব অস্বীকার করে তাহলে কিছু করার থাকে না। বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ত্বাইফ আল মামুন বলেন, সামাজিক মূল্যবোধের যখন আকাল পড়ে যায় তখন অপরাধীরা পথ খুঁজে পায়। ধর্ষণের মতো নিন্দনীয় ঘটনা বন্ধ করতে আইনের পাশাপাশি সামাজিক অবস্থানকে শক্ত করা দরকার। সমাজের দায়বদ্ধতা বাস্তবায়ন দরকার। তুফান সরকারের ঘটনার শিকার তরুণীর বিয়ে থা হয়ে গেছে। সে এখন ঘরসংসার করছে। তার মা এখন ভাল আছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তুফান সরকারের লোকজন মেয়ে ও মায়ের কাছে গিয়ে আকুলি বিকুলি করেছে। অনেক অর্থের বিনিময়ে আপোসের প্রস্তাব দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত মা মেয়ে রাজি হয়েছে। এ বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নরেশ মুখার্জী বলেন, মামলার অভিযোগ গঠনের পর আদালতে আপোসের কোন সুযোগ নেই। আদালতের বাইরে কোন কিছু ঘটেছে কিনা সেটা আসামিপক্ষের বিষয়। দুর্বল সাক্ষ্য অথবা সাক্ষ্য না দিলে মামলার গতি-প্রকৃতি দুর্বল হয়ে যায়। এতে অভিযুক্তের পার পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
×