ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বহু মাধ্যমে বিচিত্র বিনোদন

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

বহু মাধ্যমে বিচিত্র বিনোদন

কালের বিবর্তনে বদলে গেছে বিনোদনের ধরন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিনোদনের নতুন রূপ। তথ্যপ্রযুক্তির অকল্পনীয় বিপ্লবে বিনোদন এখন বিরাজ করছে মানুষের হাতের মুঠোয়, ড্রয়িংরুমের টেলিভিশনে, ল্যাপটপ এবং কম্পিউটারে। বছর পনেরো আগেও বিনোদনের চিত্র এমনটা ছিল না। শিশুরা এখন আর সবুজ শ্যামল মাঠে খেলাধুলা করে না। কানামাছি, গোল্লাছুট, বৌচি, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলি- শৈশবের ক্রীড়া বিনোদনের জনপ্রিয় এসব খেলা আজ বিলুপ্তির পথে। ডিজিটাল স্ক্রিনে নানা ধরনের ভিডিও গেমসের মধ্যেই শিশুদের বিনোদনের সীমা এখন আবদ্ধ। কিছু কথা এখনও মনে পড়ে। কিভাবে শৈশবে দাপিয়ে বেড়িয়েছি খেলার মাঠে। বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলেছি। কাঠফাটা রোদে পুড়ে ক্রিকেট খেলেছি। কখনও নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছি। সাঁতার কেটেছি। বিকালবেলা না ঘুমিয়ে মাকে ফাঁকি দিয়ে বাইরে ভাইবোনদের সঙ্গে খেলতে গিয়েছি। খোলা আকাশে ঘুড়ি উড়িয়েছি। সন্ধ্যায় দেরি করে বাড়ি ফেরার কারণে মায়ের হাতের মার খেয়েছি। এসব নির্মল প্রাকৃতিক আনন্দ থেকে বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা একদম বঞ্চিত। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রতি সপ্তাহে বাংলা ছায়াছবি এবং প্রতি মাসের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি দেখার জন্য আমাদের বাসায় পাড়াপড়শীদের আসর বসতো। উঠান ভর্তি মানুষের ভিড়ে আমাদেরই ঘরে বসে থাকার জায়গা হতো না। তখন মানুষ যতটা আগ্রহ আর আনন্দ নিয়ে একটি বাংলা ছায়াছবি দেখতো, এখন ঘরে বসে ইউটিউবে একশটি সিনেমা দেখলেও সেই আনন্দ বা তৃপ্তিটুকু পাওয়া যাবে না। তথ্যপ্রযুক্তি অগ্রগতি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য কল্যাণকর বিষয়। তবে সবকিছুরই নেতিবাচক ও ইতিবাচক দুটো দিকে থাকে। আমাদের উচিত হবে ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করে নেতিবাচক দিকগুলো বর্জন করা। বিনোদন ব্যক্তিকে আনন্দ প্রদান করে। তবে তার জন্য বিনোদন সুস্থধারার হওয়া চাই। অসুস্থধারার বিনোদন ব্যক্তিসত্তাকে নষ্ট করে এবং অনেকক্ষেত্রে মানসিক বিকৃতিও ঘটায়। বর্তমানে ফেসবুক, ইউটিউব - তরুণ প্রজন্মের কাছে বিনোদনের মূল কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ফেসবুক এবং ইউটিউবের মতো ডিজিটাল মাধ্যমে নানা ধরনের অপসংস্কৃতিমূলক কন্টেন্ট রয়েছে। যা তরুণ প্রজন্মের সুস্থ মানসিকতা নষ্ট করতে পারে। এছাড়া ইন্টারনেটে পর্নোছবি দেখাকে অনেকে বিনোদন বলে মনে করেন। যা মোটেও বিনোদন নয়। বরং এসব অশ্লীল কন্টেন্ট ব্যক্তির সঠিক মানসিক বিকাশের পথে বড় বাধা। আমাদের উচিত হবে অপসংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে নিজস্ব জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির আলোকে বিনোদন গ্রহণ করা। তবেই আমাদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ নিশ্চিত হবে এবং সকলের মাঝে আদর্শ সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে। তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা থেকে
×