ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪ মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

৪ মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্ত বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৫ কোটি ৪০ লাখ (৪.০৫ বিলিয়ন) ডলার। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৩৫৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে লেনদেন ভারসাম্যে কোনো উদ্বৃত্ত ছিল না; বরং ১৫২ কোটি ১০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। তবে এই বড় উদ্বৃত্তে ¯^স্তি দিলেও মহামারীর প্রকোপ ফের বাড়তে থাকায় তা কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হয়েছিল ৪৮৪ কোটি ৯০ লাখ (প্রায় ৫ বিলিয়ন) ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে। তার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল আরও বেশি, ৫১০ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে তা কমে ৩২৩ কোটি ৬০ লাখ (৩.২৩ বিলিয়ন) ডলারে নেমে এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৫৭২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ এক হাজার ২৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করেছে। আর আমদানিতে ব্যয় করেছে এক হাজার ৫৭৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবেই এই তিন মাসে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এই চার মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ। আর আমদানি ব্যয় কমেছে ১৩ শতাংশ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এই কঠিন সময়ে লেনদেন ভারসাম্যে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত খুবই ভালো। প্রণোদনা প্যাকেজসহ সরকারের নানা তৎপরতায় মনে হচ্ছিল, মহামারীর সঙ্কট খুব দ্রুতই কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সেটা দীর্ঘ হবে। মির্জ্জা আজিজ বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্ব অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে; এখনও দিচ্ছে। এর শেষ কোথায়, তা কেউ জানে না। এখন খুব সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে আমাদের। আত্মতুষ্টিতে না ভুগে, বিশ্ব পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে সেবা খাতে ঘাটতি ছিল ১১১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর এ বছরের একই সময়ে তা কমে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়। আর্থিক হিসাবেও (ফাইনানশিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তে চলে এসেছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৭৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল। চার মাসে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে তা ২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্তে চলে এসেছে। গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ১৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
×