ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মামুনুল-ফয়জুলকে ৩ দিনের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২০

মামুনুল-ফয়জুলকে ৩ দিনের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ নবীজীর অবমাননা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধী মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ সাত দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আগামী ৩০ নবেম্বরের মধ্যে মামুনুল-ফয়জুলকে গ্রেফতার না করলে পরেরদিন সারা দেশে একযোগে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। আজ শনিবার ২৮ নবেম্বর বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল শেষে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এতে আরোও বক্তব্য রাখেন সুপ্রীম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ভাস্কর শিল্পী রাশা, গৌরব ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাবি শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এসময় বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্র্মী উপস্থিত ছিল। প্রতিবাদ সমাবেশে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, “মহানবী (সা:) এর অবমাননা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বিরোধিতাকারী মামুনুল-ফয়জুল গংদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এরা ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গতে আসবে, আমরা তাদের হাত ভেঙ্গে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিবো। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।” ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, “সৌদিআরব, ইরান, ইরাক, তুরস্কসহ বিশ্বের সকল মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। মৌলবাদীরা ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্য নিয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরী করার চেষ্টা করছে। ইসলামের দৃষ্টিতে ভাস্কর্য বৈধ। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের মূল উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সরকার পতনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। সময় এসেছে এদের লাগাম টেনে ধরার।” আল মামুন বলেন, “সম্প্রতি একটি ইসলামী ধর্মসভায় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক কর্তৃক মহানবী (সা:) কে প্রকাশ্য দিবালোকে অবমাননা করা হয়েছে। মহানবী (সা:) কিভাবে ঠোঁট নাড়াতেন এটা তিনি দেখেছেন এবং হুবহু বলে দিতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে মহানবী (সা:) এর কোন অবয়ব দেখানো সম্পূর্ণ হারাম। ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক প্রকাশ্য দিবালোকে মহানবী (সা:) এর অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে নবীজীকে অবমাননা করেছেন। নবীজীকে অবমাননা করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।” তিনি আরো বলেন, “কিছুদিন আগে মৌলবাদী অপশক্তি মামুনুল হক ও ফয়জুল করিম কর্তৃক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙ্গে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। জাতির পিতার ভাস্কর্য অপসারণের দাবি যারা তুলেছে, সেই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ না নিলে আমরা দেশ ও জাতির ‘সমূহ বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা প্রকাশ করছি।” মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাত দফা দাবিগুলো হলো: মহানবী (সা:) কে অবমাননা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করার অপরাধে মামুনুল-ফয়জুলকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জেলা, উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয নির্মাণ করতে হবে; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অবিলম্বে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং পবিত্র মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা বন্ধ করতে হবে; বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে; ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- নিশ্চিত করতে হবে; মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে; সকল মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
×