ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মহাসঙ্কটেও দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি, ভবিষ্যতেও হব না

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ২২ নভেম্বর ২০২০

করোনা মহাসঙ্কটেও দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি, ভবিষ্যতেও হব না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাকালেও দেশের দুষ্ট চক্রের কালো হাত থেমে নেই। সে কারণেই মাস্ক কেলেঙ্কারি, করোনা টেস্ট জালিয়াতি, ত্রাণ-সামগ্রী আত্মসাত, চিকিৎসা জালিয়াতির মতো ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। একই সঙ্গে করোনাকালের এই মহাসঙ্কটেও আমরা দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি, ভবিষ্যতেও হব না বলে অঙ্গীকার করেছেন তিনি। দুদকের ষোড়শ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্থাটি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ মন্তব্য করেন। দুদক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম সোহেল, গোয়েন্দা অনুবিভাগের পরিচালক মীর মোঃ জয়নুল আবেদীন শিবলী, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ আক্তার হোসেন, যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুস সায়াদাত প্রমুখ। দুদকের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয় ও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ এতে অংশগ্রহণ করেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা আত্মজিজ্ঞাসা বা আত্মসমালোচনার একটি প্লাটফরম। এর মাধ্যমে দুদকের প্রতিটি কর্মীর নিজ নিজ দর্শনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। এমন সময় এবারের প্রতিষ্ঠাবার্র্ষিকী উদ্যাপন হচ্ছে, যখন শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন বা বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বই মহাসঙ্কট কাল অতিক্রম করছে। চেয়ারম্যান বলেন, করোনাকালেও আমরাও দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই আমাদের ৭০ জনেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তিনজন প্রতিশ্রুতিশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হারিয়েছি। তারপরও দুর্নীতি পরায়ণদের সুখকর সময় পার করতে দেয়া হচ্ছে না। আমাদের কাজটি ধন্যবাদহীন। এ কারণেই দুর্নীতির মূলোৎপাটনে দেশের সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদসহ সকলের সমন্বিত সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা দায়িত্ব¡ নিয়ে বলেছিলাম, কমিশন সব সময় গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। কারণ গঠনমূলক সমালোচনাই কর্ম প্রক্রিয়াকে শাণিত করে। সঠিক পথ দেখায়। সবাই সবকিছু জানে না, তাই অন্য কেউ যদি ভাল পথ দেখায় তা গ্রহণ করতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা সমালোচনার প্রতি উত্তর দেই না বরং তা গ্রহণ করি। নিজেদের পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, আমরা আইনী দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধÑ তাই আমাদের ঝুঁকি নিতে কোন ভয় নেই। আমরা ঝুঁকি নিয়েছি। আমরা সবাই সমন্বিতভাবেই ঝুঁকি নিয়েছি। কোন হুমকি-ধমকি আমাদের আইনী দায়িত্ব পালনে নিবৃত্ত করতে পারেনি। আমরা সবাই একই সমতলে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘ কর্ম-জীবনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তাতে আমার মনে হয়েছে, দুদক কর্মকর্তাদের যে প্রজ্ঞা রয়েছে তা আন্তর্জাতিক মানের। আপনাদের সবার মননে যদি দুর্নীতিবিরোধী জাগরণ সৃষ্টি করতে পারেন, তা হলে তা দুর্নীতিবিরোধী গণজাগরণে রূপান্তরিত হবে। তাই আসুন, আমরা সবাই শপথ গ্রহণ করি, আমাদের সক্ষমতা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা যা কিছু আছে তা দিয়ে জনগণের কল্যাণে তাদের সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী গণজাগরণ সৃষ্টি করি। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমি আজও বলব দুর্নীতিমুক্ত মাইন্ডস্টে সম্পন্ন নাগরিক গড়তে হলে পরিবারের পরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে নৈতিক মূল্যবোধ বিকশিত হয় এমন শিক্ষার প্রয়োজন। একটি মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন জাতি গঠনে শিক্ষা বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, সমাজে কেউই দুর্নীতি চায় না। সমাজের কতিপয় ব্যক্তি দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের সংখ্যা সত্যিই নগণ্য। তাই সমাজের কাছে আমাদের অঙ্গীকার থাকতে হবে। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে সবসময় বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের সকলের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি মানে অপরাধ বা অপরাধীর সঙ্গে আপোস নয়। সকল প্রকার ভয়-ভীতি, লোভ-লালসার উর্ধে উঠে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে শেষ দিন পর্যন্ত জনগণের কল্যাণে দুর্নীতি প্রশমন, দমন, প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করব, এটাই হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার। আলোচনা সভায় দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষিত হয়েও যারা দুর্নীতি করছেন, তারা জঘন্য অমানবিক অপরাধ করছেন। তাদের মানবিক গুণাবলী নেই বরং পাশবিক গুণাবলী রয়েছে। সবাই সন্তানদের জজ-ব্যারিস্টার, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, সরকারী বড় কর্মকর্তা বানাতে চান। এটা ভাল কথা। তবে সন্তানদের মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিও একই সঙ্গে বাবা-মাকে করতে হবে। দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, লকডাউনকালে যখন সকল অফিস আদালত বন্ধ ছিল, তখনও দুদক মামলা করেছে, আসামি গ্রেফতার করেছে। সকল কার্যক্রম ডিজিটালি সম্পন্ন করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির কারণেই দুদকের ৯০ শতাংশেরও বেশি নথি ই-নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
×