ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

হুন্ডির মাধ্যমে যাচ্ছে, আসছে ইয়াবা

বছরে হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে মিয়ানমারে

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ৩০ অক্টোবর ২০২০

বছরে হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে মিয়ানমারে

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারে। দুবাই ও মালয়েশিয়ায় গিয়ে ইয়াবা কেনার এই টাকা পাচার করছে মাদককারবারিরা। দুবাই ও মালয়েশিয়ায় গিয়ে এবং হুন্ডির মাধ্যমে দুই ভাবেই পাচার করা হচ্ছে টাকা। ওষুধ, স্বর্ণালঙ্কার, বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়েও নিয়ে আসা হচ্ছে ইয়াবা নামের এই মাদক। মিয়ানমারে পাচার করা টাকার ইয়াবায় সয়লাব হচ্ছে গোটা দেশ। দেশে ইয়াবার ব্যাপক চাহিদার কারণেই টাকা পাচার করার মাধ্যমে চালান আনার কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তকারীদের দাবি। চলতি বছরের গত প্রায় ১০ মাসে ৫০ লাখের বেশি ইয়াবার চালান উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মিয়ানমার থেকে আসা আটককৃত ইয়াবার চালানের বাজার মূল্য ২ শতাধিক কোটি টাকা। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনেছে রোহিঙ্গা গডফাদাররা। ইয়াবার চালানের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। যার মধ্যে রোহিঙ্গার সংখ্যাই সর্বাধিক। আটক করা রোহিঙ্গারা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, আলোচ্য সময়ে প্রায় দশ গুণ ইয়াবা পাচার হয়ে এসেছে যার বাজার মূল্য দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। ইয়াবা চালান ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিট। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও দেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ইয়াবা-মাদকের বিষয়ে যে গবেষণা করেছে তাতে দেখা যায়, দেশে আসা মাদক উদ্ধার বা আটক হয় মাত্র ১০ শতাংশ। বাদ বাকি ৯০ শতাংশই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়া মাদক বা ইয়াবা হাত বদল হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক ছড়িয়ে পড়ায় তা বিপুলসংখ্যক মানুষকে আসক্ত করে তুলছে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো সত্ত্বেও মাদক বিশেষ করে ইয়াবার চালান আসা বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সারাদেশে গত এক বছরের ৩ কোটি ৫৩ লাখ ২৫ হাজার ৬১০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই পরিমাণ মাদক ইয়াবা আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্টগার্ড। মিয়ানমারে প্রতি পিস ইয়াবার দাম পড়ে গড়ে ৩০ টাকা। এই হিসাব অনুযায়ী উদ্ধার হওয়া ও উদ্ধারের বাইরে থাকা সব মিলিয়ে ৩০ কোটি ইয়াবার মূল্য বাবদ ৯০০ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে। মিয়ানমারে যে ইয়াবার মূল্য ৩০ টাকা, সেটাই দেশে আসার পর কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে যেই পরিমাণ ইয়াবা দেশে আসছে তার মূল্য দাঁড়ায় কয়েক হাজার টাকা। এই পরিমাণ টাকাই দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারে। গত মাসে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মাঝিরঘাটে ট্রলারে তল্লাশি চালিয়ে ১৩ লাখ পিস ইয়াবাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেন র‌্যাব-১৫ সদস্যরা। তবে এই বিপুল পরিমাণ ইয়াবা মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে নাকি বাকিতে আনা হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্তে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, দেশের ইয়াবার বড় কারবারিরা এসব ইয়াবার মূল্য পরিশোধের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে দুবাই ও মালয়েশিয়া। সেখানে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করে বড় ডিলাররা ইয়াবার মূল্য শোধ করে। এছাড়া ওষুধ, স্বর্ণালঙ্কার, বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়েও নিয়ে আসা হচ্ছে এই মাদক।
×