ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর ৩৫তম স্প্যান শনিবার বসার সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২৯ অক্টোবর ২০২০

পদ্মা সেতুর ৩৫তম স্প্যান শনিবার বসার সম্ভাবনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের ৮ ও ৯ নম্বর পিয়ার পিলারের ওপর ৩৫তম স্প্যান ২-বি বসানোর পূর্ব সিদ্ধান্ত থাকলেও নাব্য সংকটের কারণে তা হয় তো সম্ভব নাও হতে পারে। তবে নাব্য সংকট নিরসন হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শনিবার (৩১ অক্টোবর) বা রবিবার (১ নবেম্বর) বসতে পারে পদ্মা সেতুর ৩৫তম স্প্যান। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ৮ ও ৯ নম্বর পিয়ার পিলারের ওপর সফলভাবে স্প্যান ২-বি বসানো গেলে দৃশ্যমান হবে সেতুর সোয়া ৫ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার দুপুরে পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ৩৫তম স্প্যান বসানো গেলে বাকি থাকবে ৬টি স্প্যান। ৩৪তম স্প্যান বসানোর ৬ দিনের মাথায় বসতে যাচ্ছে স্প্যান ২-বি। চলতি মাসে তিনটি স্প্যান বসানো হয়েছে। এটি নিয়ে সংখ্যা দাঁড়াবে চারটি। তবে প্রাকৃতিক কারণ বাধা হয়ে দাঁড়ালে শিডিউল পরিবর্তন হতে পারে। ওই দুই পিলারের কাছে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন প্রকৌশলীরা। পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) ৩৫তম স্প্যান বসানোর কথা ছিল। সম্প্রতি পদ্মা পানি কমে পলি জমে যাওয়ায় দেখা দেয় নাব্য সংকট। অথচ, কয়েকদিন আগেও ৮ ও ৯ নম্বর পিলারের কাছে পানির গভীরতা ছিল প্রায় ৭০ ফুট। বর্তমানে পানি আছে প্রায় ৭ ফুট। এমন পরিস্থিতি থাকলে ভাসমান ক্রেনটি স্প্যান বহন করে নিয়ে যেতে পারবে না। এজন্য সেখানে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। ড্রেজিং শেষে পর্যাপ্ত গভীরতা আসলে স্প্যান রওনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, যেখানে স্প্যান বসবে সেখানে নাব্য সংকট। এরজন্য ড্রেজিং চলছে। এখনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি। তবে নাব্য সংকট নিরসন হলে ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বরের মধ্যে বসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। পদ্মা সেতুর মূল সেতুর প্রকৌশলী জানান, সেতুর ৮ ও ৯ নম্বর পিলারের অবস্থান লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীতে। মূল নদীতে স্প্যান বসানোর জন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়। মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ায় অবস্থিত কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ধূসর রঙয়ের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটি বহন করে নিয়ে যাবে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ভাসমান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’। এখনো স্প্যান রওয়ানা দেওয়ার কোনো সময় নির্ধারণ করেনি সেতু কর্তৃপক্ষ। কেননা স্প্যান রওয়ানা দেওয়ার জন পদ্মা নদীর অনুকূল পরিস্থিতি থাকা জরুরি। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) অথবা শনিবার (৩১ অক্টোবর) যেকোনো দিন স্প্যান বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে। পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর জন্য দুই দিন সময় নেওয়া হয়ে থাকে। এই সময়ের মধ্যে স্প্যান পিলারের ওপর বসিয়ে দেওয়া হলে। যেসব স্প্যান বসানো বাকি এগুলোর অবস্থান মাওয়া প্রান্তে। সকল দুর্যোগ কাটিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে-এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। ‘করোনা ও বন্যার কারণে প্রায় ৪মাস স্প্যান বসানোর কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও অন্য সব কাজ চলমান ছিলো। বর্তমানে নদীর স্রোত ও পানির গভীরতা অনুকুলে আসায় একের পর এক স্প্যান বসানোর কাজ চলছে। মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। এদিকে, ৪১টি স্প্যানের ওপর ২ হাজার ৯১৭টি রোড স্লাব বসানো হবে। এ পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১ হাজার রোড ¯স্লাব । এছাড়া, রেললাইনের জন্য লাগবে ২ হাজার ৯৫৯টি রেল ¯স্লাব । এ পর্যন্ত বসানো হয়েছে ১ হাজার ৬০০ রেলওয়ে ¯স্লাব । সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল সেতুটি কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে। পদ্মা সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে।
×