ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বত্র পলিথিন!

প্রকাশিত: ২০:০৭, ১৭ অক্টোবর ২০২০

সর্বত্র পলিথিন!

পলিথিনের অপব্যবহার দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান। দৈনন্দিন পণ্য বেচাকেনায় পলিথিনের প্রাসঙ্গিকতা অনিবার্য হলেও এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশ দূষণ হওয়ার আশঙ্কাকে কোনভাবেই এড়ানো যাবে না। এমনিতে শিল্পোন্নয়নের বর্জ্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকে চরম হুমকির মুখে ফেলে দেয়। সেখানে বর্জ্যরে আর এক বিষাক্ত জিনিসই হলো প্লাস্টিক এবং পলিথিন। যা পচনযোগ্য তো নয়ই, বরং যত্রতত্র ফেলার কারণে হরেক রকম বিপর্যয়ও সামলাতে হয়। ড্রেন, নালা, নর্দমায় বর্জ্য পলিথিন যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও বিপন্ন করে তোলে, সেটাও কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এমন সব অব্যবস্থাপনাকে বিবেচনায় এনে এক সময় তা নিষিদ্ধ করা হলেও কখনও এর উৎপাদন কিংবা ব্যবহারে ভাটা পড়েনি। সর্বক্ষণ সচল এই বর্জ্য পণ্যটি সাধারণ মানুষের বিপণন কর্মে যে ভূমিকা রাখে তার উল্টো প্রভাবে যাপিত জীবন সুরক্ষিত থাকে না। এই অসহনীয় বর্জ্যটি নষ্ট না হওয়ার দুর্ভোগ পোহাতে হয় অতি সাধারণ মানুষকেই। বিষাক্ত পলিব্যাগের বর্জ্যে সবচাইতে বেশি ক্ষতি হয় জমির পলিমাটির। কারণ এটা কোন অবস্থাতেই নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হয় না। ফলে যেখানে সেখানে পড়ে থাকায় বায়ু দূষণ তো হয়ই, তার ওপর মাটির উর্বরা শক্তিকেও ক্ষয় করে দিতে পারে। এমন সব আশঙ্কার বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের অবগত নয় তা বলা যাবে না। এই চিত্র শুধু রাজধানী শহরের নয়, সারা বাংলাদেশের। এর বহুল ব্যবহার কখনও থামানো যায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী থেকে শুরু করে বিধি বিধানকেও তোয়াক্কা করার বিপরীতে অবাধে এমন ব্যবস্থা এখনও সারাদেশকে বিপন্ন অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। দেশজুড়ে আছে হাজারেরও বেশি পলিথিন উৎপাদনের কারখানা যা বহু আগেই ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব ক্ষতিকর জিনিসের ব্যাপারে কঠোর নজরদারি না থাকার ফলেই অপচনশীল পলিথিনের উৎপাদনও ব্যবহার কমানো যায়নি। শুধু তাই নয়, বেআইনী এই ভয়ঙ্কর বর্জ্যটিকে প্রাকাশ্যে বহন করতে দেখা যায় নির্বিঘেœ। শুধু তাই নয়, ময়লা আবর্জনার সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে পরিবেশ নষ্ট করতেও যথেষ্ট। তারপরেও এ নিয়ে উৎপাদক আর এর ব্যবহারকারীদের কোন বিপত্তি ঘটতে দেখাও যায় না। শুধু নালা, নর্দমা কিংবা আবর্জনার স্তূপেই নয়, এই ঘৃণ্য বর্জ্যটি কোন কোন সময় সুপেয় পানির আধারে গিয়েও মেশে। তাছাড়া নদ-নদীর নাব্য নষ্ট করতে পলিথিনের কোন জুড়িই নেই। এমন বিপজ্জনক পদার্থটি কেন এখনও টিকে আছে তাও বলা মুষ্কিল। অনুমোদন না পেয়ে কারখানা তৈরি কিংবা উৎপাদনও যে কিভাবে করা হয় সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে। তবে নিষিদ্ধ করার সময়েও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করা হয়েছিল পলিথিনের বিকল্প কিছু ভাবতে। তেমন পরামর্শ ও নির্দেশনাও এসেছিল বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে। পাটশিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে নজরকাড়া। সোনালি আঁশের স্বর্ণালী অধ্যায় মুছে যাওয়ার উপক্রম হলেও তা নতুনভাবে জাগিয়ে তোলাও কোন ব্যাপার নয়। পাটশিল্পজাত বাজার ব্যাগের বিকল্প আসলে অন্য কিছুতে হবে না। ভাবতে হবে পলিথিনকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে তার জায়গায় পাট উৎপাদিত ব্যাগ ব্যবহার করার প্রাসঙ্গিকতা ও যৌক্তিকতা। তবে ইতোমধ্যে অনেক পাটকল বন্ধ হওয়ার দুর্দশাও উঠে এসেছে। আবার সেখানে লাগামহীন পলিথিনের কারখানা ও উৎপাদন প্রত্যেকের দৃষ্টিসীমার মধ্যেই। ফলে সমাজ ও পরিবেশকে ধ্বংস করলে তার প্রতিক্রিয়ায় মানুষের স্বাস্থ্য ও প্রাণ ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা বেড়েই যায়। যা সর্বসাধারণের জন্য এক অশনিসঙ্কেত। সুতরাং নতুন কর্ম পরিকল্পনায় পাটশিল্পকে নবোদ্যোমে কাজে লাগিয়ে বাজারের ব্যাগ তৈরির কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি করা নিতান্ত জরুরী। এতে পরিবেশ সুরক্ষিত থাকা ছাড়াও মানুষের ওপর ঝুঁকি কমে আসবে, সঙ্গে বন্ধ হওয়ার উপক্রম পাটকল এবং অগণিত বেকার শ্রমিকের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাও সময়ের দাবি। যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতনতা দায়বদ্ধতার অপেক্ষায়।
×