ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এমসি কলেজের ওই ছাত্রাবাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

এমসি কলেজের ওই ছাত্রাবাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ সিলেট মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে সিলেটে অবস্থান করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। আজ মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার পরিচালক কলেজ ও প্রশাসন অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী ছাড়াও রয়েছেন ওই বোর্ডের সহকারী পরিচালক কলেজ অধ্যাপক লোকমান আহমদ এবং সিলেট মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আঞ্চলিক পরিচালক নূর এ আলম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত সাড়ে ছয় মাস যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ছাত্রাবাস কীভাবে খোলা থাকে? সেখানে ছাত্ররাও কী করে অবস্থান করে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ’ তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের বিষয়টি মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করবে। আমরা কলেজ প্রশাসনের কোনো গাফিলতি, নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিলে কি না, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখবো। এ নিয়ে কলেজ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলছি। লোকজনের সঙ্গে কথা বলছি। প্রয়োজনে নির্যাতিত তরুণীর সঙ্গেও কথা বলবো। কমিটি তিনদিনের মধ্যে প্রাথমিক ও এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে। ’ আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির অপর সদস্য সিলেট মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আঞ্চলিক পরিচালক নূর এ আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ নিয়ে আরও কাজ করছি। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। বুধবার বিকেল পর্যন্ত এ ইস্যুতে কাজ করে যাবো। বিশেষ করে কলেজ বন্ধ থাকলেও ছাত্রাবাস খোলা থাকা এবং ছাত্র অবস্থান করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ’ এর আগে বিকেল ৫টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এমসি কলেজে এসে পৌঁছে। এসময় তারা প্রায় এক ঘণ্টা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও কলেজ গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর ছাত্রাবাসে যান তদন্ত কমিটির সদস্যরা। ছাত্রাবাসের নবনির্মিত ভবনসহ বিভিন্ন হল পরিদর্শন করেন। এসময় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন তারা। তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষও গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আনোয়ারুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদসের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে আটকে রাখে দু’জন। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটক রেখে নারীকে ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ সুরমার নবদম্পতি শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেটকার যোগে এমসি কলেজে বেড়াতে যান। বিকেলে এমসি কলেজের ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী স্বামী-স্ত্রীকে ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে প্রথমে মারধর করেন। পরে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেন। ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যেকেই ছাত্রাবাসে থাকেন। তারা টিলাগড় কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার গ্রুপের অনুসারী। এ ঘটনায় শনিবার ভোর রাতে ছয়জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে অভিযুক্ত করে নগরের শাহপরান থানায় এ মামলা (২১(৯)২০২০) দায়ের করেন ধর্ষিতার স্বামী। মামলায় এজাহার নামীয় আসামিরা হলেন— সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)। এছাড়া, ঘটনার পর অভিযানে নেমে সাইফুরের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন শাহপরান (র.) থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকার। ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানকে আসামি করে মামলা (নং-২২(৯)২০২০) দায়ের করেন তিনি।
×