ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

হাজার কোটির মালিক কেরানী আবজাল

স্বাস্থ্যখাত যেন লুটপাটের সোনার খনি

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

স্বাস্থ্যখাত যেন লুটপাটের সোনার খনি

শঙ্কর কুমার দে ॥ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সঙ্কটময়কালে রুগ্ন স্বাস্থ্য খাত যেন লুটপাটের সোনার খনি। ড্রাইভার, দারোয়ান, পিওন, কেরানি থেকে শুরু করে কান টানলেই মাথা চলে আসার প্রবাদের মতো ওপরের স্তরে বিস্তৃত রথি মহারথির হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষিত অভিযান পরিচালনায় ধরা পড়েছে শত কোটি টাকার মালিক ড্রাইভার মালেক। এখন ড্রাইভার মালেক নামই সবার মুখে মুখে। কিন্তু ‘তোমরা কি ভুলে গেছ মল্লিকাদের নাম’- সেই গানের মতোই হয়তবা অনেকেই এখন ভুলে গেছে হাজার কোটি টাকার মালিক করনিক আবজাল হোসেনের নাম। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির মডেল আবজাল হোসেন গত বছরের মার্চ মাসে চোরাইপথে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে চলে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। প্রায় দেড় বছর পলাতক থেকে গত আগস্ট মাসে স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে। এরপর টানা চৌদ্দ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের নির্দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে কারাগারে। প্রশ্ন উঠেছে, দেড় বছর পলাতক থাকার পর স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাবন্দী হওয়ার কারণ কি? এটার রহস্যই বা কোথায় ? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিতে জড়িতদের তালিকা তৈরি করেছে র‌্যাব, দুর্নীতি দমন কমিশন ও গোয়েন্দা সংস্থা। এই তালিকায় প্রাথমিক অবস্থায় অর্ধশতাধিক জনের নামের একটি তালিকা তৈরি করেছে তদন্তকারী সংস্থা। বিগত দশ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়েছে নীচ থেকে ওপরের স্তরের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তদন্তের শুরুতেই স্বাস্থ্যখাতের ড্রাইভার, পিওন, দারোয়ান, কেরানি, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরাই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার ঘটনা বের হয়ে আসার তথ্য পায় তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তের বিস্তৃতি যতই ওপরের দিকে যাচ্ছে ততই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের হয়ে আসার মতো ওপরের তলার রাঘব-বোয়ালদের নামও বের হয়ে আসছে। চুনোপুঁটিদের ধরা পড়ার ঘটনা এখন দৃশ্যমান। চুনোপুঁটিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই রাঘব-বোয়ালদের নাম বের করে আনার বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই ধরা পড়েছে ড্রাইভার মালেক, এর আগে ধরা পড়েছে করনিক আবজাল হোসেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য খাতের একজন করনিক হয়ে হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার প্রথম বের হয়ে আসে আবজাল হোসেনের নামটি। আবজাল-রুবিনা দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে গত বছরের ১০ জানুয়ারি আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। রুবিনা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতবছরের ১৭ জানুয়ারি দুদকে হাজির থাকতে বলা হলেও তিনি সময় চেয়ে আবেদন করেন। এর আগে আবজাল ও রুবিনার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। তারপর এই দম্পতি পালিয়ে যায়। বাংলাদেশ থেকে চোরাইপথে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। তার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে তখন ব্যাপক হৈ-চৈ শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, আবজালকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে পলাতক ছিল আবজাল। কিন্তু হঠাৎ করেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আবজাল আদালতে আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা আসে। গত ২৬ আগস্ট আবজাল হোসেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে আইনজীবী শাহিনুর ইসলামের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চৌদ্দ দিনের রিমান্ডে আনে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন কারাগারে আটক আবজাল হোসেন। আবজাল হোসেন দেড় বছর পলাতক ছিল। কারাগারে যেতে হবে জেনেও কেন স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে কারাবন্দী হলো? এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গিয়ে বের হয়ে আসে পর্দার অন্তরালে থাকে রাঘব- বোয়ালদের নাম। তারাই পরামর্শ দিয়েছে, কারাগার থেকে একদিন না একদিন জামিন হবেই। তখন তার দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত হাজার হাজার কোটি টাকার অগাধ ধন, সম্পদ রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু এই আশায় গুড়ে বালি পড়েছে আবজালের। দুদকের রিমান্ডে আবজাল ॥ দুর্নীতির আলাদা দুটি মামলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অফিস সহকারী আবজাল হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে নেয়া হয় দুদক কার্যালয়ে। সংস্থাটির উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এক পর্যায়ে দুদক সচিব দিলওয়ার বখত জানান, দেশ-বিদেশে আবজাল হোসেনের কত সম্পদ আছে তা খতিয়ে দেখছে দুদক। গত ২ সেপ্টেম্বর তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায়, তার স্ত্রী রুবিনা খানমও অভিযুক্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী আবজাল হোসেন। অনিয়ম-দুর্নীতি করে তার ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়েছে। তার ধনসম্পদের উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসল। জানা গেছে, বড় একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি পুরো স্বাস্থ্য খাত। হাসপাতালের জন্য কি যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে, মেডিক্যালে ভর্তির বিষয়াদি, বিভিন্ন পদে নিয়োগ-বদলি, বিদেশে প্রশিক্ষণসহ সবকিছুই এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। সারাদেশের স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরও সিন্ডিকেটের জিম্মায়। এরাই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছে। সম্প্রতি দুদকের জালে আটকা পড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেরানি-স্টেনোগ্রাফার আবজাল-রুবিনা দম্পতির সম্পদের পরিমাণ দেখে হতবাক সারাদেশের মানুষ। এই আবজালের আরেক সহযোগী আছেন, তারও দেশে-বিদেশে রয়েছে অঢেল সম্পদ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুদকের তদন্তে আবজাল-রুবিনা দম্পতির দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় মিলেছে। নামে-বেনামে আরও বিপুল সম্পদ থাকতে পারে বলে তাদের অনুমান। আবজালের সম্পদ জব্দ (ফ্রিজ) ॥ আদালত সূত্র বলছে, গতবছরের ২২ জানুয়ারি আবজাল ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের সম্পদ জব্দ (ফ্রিজ) করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের আদেশে আবজাল দম্পতির স্থাবর অস্থাবর যাবতীয় সম্পদ হস্তান্তর বা লেনদেন বন্ধ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়। আবজাল হোসেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিক্যাল এ্যাডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদফতরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে ব্যবসা করেন। আবজালের বিরুদ্ধে গতবছরের ২৭ জুন মামলা করে দুদক। মামলার পর থেকে আবজাল পলাতক ছিলেন। আবজালের সম্পদ হাজার কোটি টাকার ॥ দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আবজাল সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো বেতন পান। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তার ও তার স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লটও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি। অনুসন্ধানে জানা যায়, আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৫টি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে ক্যাশিয়ার পদে বদলি হন। এই ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমান পদে যোগ দেন। সম্প্রতি তাকে সাতক্ষীরায় বদলি করা হলেও দুই মাসের মধ্যেই ঢাকা ফিরে আসেন আবজাল। আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অফিস সহকারী বা কেরানি হিসেবে চাকরি নিলেও আবজাল হোসেন অল্প সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্যমতে, বিএনপি আমলে নিয়োগ পেলেও সব আমলেই সমানভাবে প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, কাজ না করে বিল তুলে নেয়ার মতো কাজগুলো করেছেন আবজাল। আবজাল দম্পতি ছাড়াও তার পরিবারের অন্তত ১০ জনের বিরুদ্ধে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তোলার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের সূত্রে জানা গেছে। আবজালের তদন্তেই বের হয়ে আসে সিন্ডিকেট ॥ গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœœকারী স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, কেন্দ্রীয় ওষুধাগার, ঠিকাদারসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে তালিকায়। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তালিকা তৈরি করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেটদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন, অনেকের বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে, সাময়িক বরখাস্ত, বদলিসহ নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি আবুল কালাম আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। স্বাস্থ্য খাতের অনেক বিষয়ের তদারকি করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশ পাওয়ার পর স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে তদন্ত ॥ কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) বিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শহীদউল্লাহ গত ৩০ মে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে লেখা এক চিঠিতে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির কিছু তথ্য তুলে ধরেন। তাতে তিনি স্পষ্টভাবেই ঠিকাদার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে কীভাবে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সেই তথ্যও চিঠিতে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) বিদায়ী পরিচালক। হাসপাতালের জন্য কি যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে, মেডিক্যালে ভর্তির বিষয়াদি, বিভিন্ন পদে নিয়োগ-বদলি, বিদেশে প্রশিক্ষণসহ সবকিছুই এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। সারাদেশের স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরও সিন্ডিকেটের জিম্মায়। এরাই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছে। সম্প্রতি দুদকের জালে আটকাপড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেরানি-স্টেনোগ্রাফার আবজাল-রুবিনা দম্পতির সম্পদের পরিমাণ দেখে হতবাকে বিস্তৃত সবাই। দুদকের তদন্তের জালে আটকা আবজাল-রুবিনা দম্পতির দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় তো মিলেছেই, রাঘব-বোয়ালদের নামের তালিকাও বের হয়ে আসছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, আবজাল হোসেন কারাগারে আটক থেকে তার হাজার কোটি টাকার ধন সম্পদের পাহাড় রক্ষার জন্য যোগাযোগ রক্ষা করছে। পলাতক থাকলে এটা হয়ত পারত না বা কঠিন হতো। আবজালের অঢেল ধন সম্পদের মালিক হওয়ার কারণে তার জন্য রাঘব-বোয়াল শ্রেণীর রক্ষাকারী লোকের অভাব নেই। কারাগার থেকে আবজাল কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে তার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। দুর্নীতি করে যারাই অবৈধ ধন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে তাদের সকল ধনসম্পদ বাজেয়াফত করে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে আবজাল-মালেকদের সংখ্যা কমে আসবে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
×