ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুখের আলসার

প্রকাশিত: ০০:৫৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

মুখের আলসার

আপনারা পাকস্থলী ও অন্ত্রনালীতে আলসার হয় শুনেছেন। কিন্তু মুখে আলসার হয় শুনেছেন কি? মুখের ভেতরে, গালের নরম মাংসপেশিতে, জিহ্বার এক পাশে এক ধরনের ঘা দেখা যায়। যার নাম এ্যাপথাস আলসার। ছোট্ট একটি গোলাকার অংশ সাদাটে হয়ে ওঠে। আর সাদা অংশটার মধ্যে অনেক সময় পুঁজ জমে থাকে। পুঁজের চারপাশে হালকা একটা সীমানা থাকে। গোলাকার বা ছোট্ট ডিম্বাকৃতির অংশে যা হয়। এফথাস আলসারের রকমভেদ : স্বাভাবিক এপথাস ছাড়াও এপথাস আলসারের কয়েকটি রকমফের আছে। এপথাসের আকার যদি প্রায় ১ সে.মি. এর বেশি হয় এবং ভাল হতে সময় বেশি লাগে তখন একে ‘মেজর এপথাস আলসার’ বলা হয়। মেজর এপথাস হলে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন কারণ এটি দেখতে কিছুটা ক্যান্সার এর প্রথম দিকের ঘা এর মতো এবং খুবই যন্ত্রণাদায়ক। এরকম ঘা দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আরেকটি ধরন আছে যেখানে এপথাস আলসার ঘনঘন হতে থাকে। প্রত্যেক মাসে একবার বা দুবার। এটাকে বলা হয় রিকারেন্ট এপথাস আলসার। তৃতীয় আরেকটি ধরন হল হারপেটিফর্ম এপথাস যেখানে ছোট ছোট আকারের অনেক এপথাস আলসার একসঙ্গে হয়। লক্ষণ : ১.মুখে আলসার হলে ব্যথা, জ্বলুনি, জ্বর এবং লসিকা গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। ২. অনেক সময় মুখের একাধিক জায়গায় এই ঘা হয়। তখন খাবার গিলতে, কথা বলতে বা মুখ হাঁ করতেও কষ্ট হতে পারে। কারণ : মুখের আলসার হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ এখন ও জানা যায়নি। কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায় যারা মুখের আলসার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে যেমন- মুখে আঘাত পেলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে, শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হলে, অনেক বেশি চাপের মধ্যে থাকলে, অত্যধিক ধূমপান, বংশগত কারণ, নির্দিষ্ট কোন ওষুধের জন্য, এ্যানেমিয়া হলে, মুখে ব্যবহারের ভুল পণ্য ব্যবহার করলে, ফুড এ্যালার্জি এবং ভাইরাসের ইনফেকশন এসব। প্রতিকার : বেশির ভাগ মুখের ঘা ৭-১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। এর জন্য বিশেষ কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না। তবে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা নিতে পারেন। ১. মুখের ঘা প্রতিকারে এ্যালোভেরা সবচেয়ে কার্যকরী প্রাকৃতিক উপায়। এতে এ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও নিরাময়কারী উপাদান আছে যা ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে এবং দ্রুত সারতে সহায়তা করে। এ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল বের করে মুখের ঘায়ের মধ্যে লাগান দিনে কয়েকবার। এ্যালোভেরার জুস দিয়ে দিনে তিন-চারবার মুখ পরিষ্কার করুন। ২. আধা কাপ উষ্ণ গরম পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। ৩. একটি কটন বলে মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া লাগিয়ে মুখের ঘায়ে লাগাতে পারেন দিনে তিন-চারবার। প্রতিকার পেতে পারেন। ৪. যদি আপনার মুখের ঘা ফুলে যায় তাহলে আলতোভাবে ঘষুন এবং যদি টনটন করে তাহলে লবণপানি দিয়ে গারগল করুন। ৫. মুখের ঘা শুকাতে ফিটকিরি পাউডার ভাল কাজ করে। ফিটকিরির একটা ছোট টুকরা সরাসরি মুখের ঘায়ের মধ্যে লাগান। এক মিনিট রেখে দিন। তিক্ত হলেও কষ্ট করে ধরে রাখুন। রসটুকু গিলে ফেলবেন না। ৬০ সেকেন্ড পরে লালাসহ ফিটকিরি বের করে ফেলুন। তবে মুখ ধুয়ে ফেলবেন না। এতে করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে। আপনার আলসারটি যেতে হয়তো দুই বা তিন দিন সময় লাগবে তবে ব্যথা চলে যাবে তাড়াতাড়ি। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যথা না যায়, তাহলে প্রক্রিয়াটি আবার অনুসরণ করুন। প্রতিরোধে করণীয় : ১.মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। পান, সুপারি, জর্দা, গুল, তামাক পাতা, মাদক, এ্যালকোহল, অতিরিক্ত চা, কফি বর্জনীয়। ২.আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খেতে হবে। ৩. পেটের কোনো অসুখ হলে তার চিকিৎসা জরুরী। ৪. পানিশূন্যতা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও দাঁতের ক্যারিজ জাতীয় অসুখ থাকলে তার দ্রুত সমাধান জরুরী। ৫. মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। অথবা হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলি করা দরকার। ৬.কষ্ট বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। ডাঃ শারমীন জামান ওরাল এ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন ফরাজী ডেন্টাল হসপিটাল এ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার।
×