ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিমত সাবেক তারকা ফুটবলার, কোচ গোলাম সারোয়ার টিপুর

‘মাথাটা ঠিক করতে হবে সবার আগে’

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ৩০ আগস্ট ২০২০

‘মাথাটা ঠিক করতে হবে সবার আগে’

রুমেল খান ॥ স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম ফুটবল ম্যাচে প্রথম গোলের মালিক তিনি। ঢাকা স্টেডিয়ামে ১৯৭২ সালের মার্চে প্রথমবার ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই প্রীতি ম্যাচে রাষ্ট্রপতি একাদশ মুখোমুখি হয়েছিল মুজিবনগর একাদশের। রাষ্ট্রপতি একাদশ সেই ম্যাচে জিতেছিল ২-০ গোলে। ম্যাচের প্রথম গোলটি করেছিলেন লেফট উইঙ্গার গোলাম সারোয়ার টিপু, যিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ফুটবলারদের একজন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশেনের (বাফুফে) আসন্ন নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কেউ আগের কমিটিকেই চান, কেউ চান নতুন কমিটি। যারা দ্বিতীয় দলে তারা বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সমালোচনায় মুখর। টিপুর ভাবনা জানতে চাইলে দৈনিক জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘প্রথম মেয়াদে সালাউদ্দিন সভাপতি হন তার খেলোয়াড়ী জীবনের খ্যাতি-জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে। সেবার তিনি ক্ষমতায় এসে কিছু করতে না পারলেও সেটা মেনে নিয়েছিলাম। এমনকি দ্বিতীয় মেয়াদেও যখন আসেন এবং ব্যর্থ হন, তখনও মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদেও যখন চরম ব্যর্থ হন তখন আর মেনে নিতে পারিনি। এই মেয়াদে জিতেই তিনি আগামীতে আর নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পরে আবার সেটি নির্লজ্জের মতো অস্বীকার করেন। এ জন্যই বলছি, দেশের ফুটবলকে বাঁচাতে হলে সবার আগে বাফুফে সভাপতিÑ অর্থাৎ মাথাটাকে ঠিক করতে হবে আগে।’ ষাটের দশকে একটি নাটক ও একটি সিনেমাতেও অভিনয় করা টিপু বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে পুরো বাফুফে কমিটি বদলে দেয়া সম্ভব নয়। সেটা উচিতও হবে না। কিছু জায়গায় চেঞ্জ হতে পারে। যেমন সভাপতি পদ। তবে এই পদ ছাড়াও আরও কিছু ‘অর্ডিনারি’ লোকজনে বাফুফে ভরে গেছে। এ জনই বারোটা বেজে গেছে ফুটবলের।’ ঢাকার মাঠে টেলিভিশনে সর্বপ্রথম লাইভ ফুটবল ম্যাচেও গোল করার মালিক টিপু (মোহামেডান বনাম শ্রীলঙ্কা জাতীয় দল, আগাখান গোল্ড কাপের ফাইনালে, টিপু ২ গোল করেন, মোহামেডান জেতে ৫-০ গোলে) আরও যোগ করেন, ‘বাফুফে ভবনে তো আমি গত ১৪-১৫ বছর ধরে যাই না। শুনেছি এখন নাকি ওটা একটা দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়েছে। কোচ তো দূরের কথা, সাংবাদিকদেরই নাকি দোতলায় উঠতে দেয়া হয় না! তাদের কিসের এত ভয়। ওর ভেতরে কি তবে অবৈধ কিছু চলে যা জেনে ফেললে সমস্যা?’ বিজি প্রেস, ওয়ারী, মোহামেডান, আবাহনী, রহমতগঞ্জ, ভিক্টোরিয়ার হয়ে খেলা (১৯৬৪-১৯৭৯) টিপুর মতে, ‘ফুটবলটা কেবল ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। মফস্বলে তো খেলা বলতে গেলে হয়ই না। জেলা ফুটবলও ঠিকমতো হয় না। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৪৪ থেকে এখন ১৯৭ (আসলে ১৮৭)-এ এসে পড়েছে। জাতীয় দলের কোন রেজাল্ট নেই। টানা চারটি সাফের সেমিতেই উঠতে পারেনি। পাইপলাইনে কোন খেলোয়াড় নেই।’ কোচ হিসেবে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের হয়ে ১৮ বার কাজ করা (১৯৮১-২০০৩/০৪) টিপু আরও বলেন, ‘১২ বছর ধরে সভাপতির পদে সালাউদ্দিন আছেন। ফুটবলের উন্নয়নের জন্য এটা যথেষ্ট সময়। তিনি কি আসলেই উন্নতি করতে পেরেছেন? উত্তরটা হবে ‘না’। তিনি কিছুই করতে পারেননি। শুধু প্রিমিয়ার লীগ আয়োজন করলেই দেশের ফুটবলের উন্নতি হয় না।’ তবে আসন্ন নির্বাচনে যদি সভাপতি পদে নতুন মুখ হিসেবে কেউ আসেন তাহলে তিনি যে রাতারাতি ফুটবলের দুরবস্থার চিত্রটা পাল্টে দিতে পারবেন এমনটা মনে করেন না পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলা (১৯৬৭-৬৯) টিপু, ‘শুরুতেই এমনটা আশা করা উচিত নয়। একটু সময় লাগবে। কিন্তু তাই বলে জেনে শুনে ভুল করে আগের সভাপতিকেই আবারও ভোট দিয়ে আনতে হবে এটা কিছুতেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এমনও হতে পারে, নতুন যিনি আসবেন তিনি আগের সভাপতির চেয়েও খারাপ। কিন্তু আগের জনের চেয়েও আর কতটাই বা খারাপ হবেন তিনি?’ জাতীয় পুরস্কার পাওয়া (১৯৭৯) টিপুর শেষ কথা, ‘সালাউদ্দিন গ্রেট প্লেয়ার, স্টাইল-গ্ল্যামার দিয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন, ইংরেজীতে ভাল কথা বলতে পারেন ... সবই ঠিক আছে। কিন্তু গত একযুগেও তিনি যে ফুটবলের কোন উন্নয়ন করতে পারেননি, এটা মেনে নিতে পারি না। তিনি আসলে প্রচ- মিথ্যেবাদী, কথা দিয়ে সবাইকে ভোলাতে পারেন, কিন্তু আসল কাজটিই করতে পারেন না। কাজেই তাকে আবারও ক্ষমতায় আনা কি ঠিক?’
×