ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাহত হচ্ছে দলিল সম্পাদন

যশোরের ৮ উপজেলার তিনটিতে নেই সাব-রেজিস্ট্রার

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ৩০ জুলাই ২০২০

যশোরের ৮ উপজেলার তিনটিতে নেই সাব-রেজিস্ট্রার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের আট উপজেলার তিনটিতে নেই সাব-রেজিস্ট্রার। এতে ব্যাহত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ দলিল সম্পাদন, সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে। খ-কালীন দায়িত্ব একজনের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে দুই অফিসের কাজ। এতে করে জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সদর উপজেলায় সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। খ-কালীন একজনের উপর দায়িত্ব থাকায় তিনি তিনদিন যশোর সদরে অফিস করছেন। বাকি দুইদিন করছেন নিজ দফতরে। এতে করে পুরো সপ্তাহের কাজের চাপ পড়ছে এ তিনদিনেই। করোনাকালীন সময়েও রেজিস্ট্রি অফিসে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বিষয়টি নিয়ে উর্র্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভোক্তভোগীসহ দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ। যশোর সদর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার শাহাজান আলী চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মনিরামপুর উপজেলায় বদলি হন। এরপর যশোর সদরের কার্যক্রম দীর্ঘ একমাস বন্ধ থাকে। পরে তাকেই আবার যশোর সদরের খ-াকালীন দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি মণিরামপুরে রবি ও সোমবার অফিস করেন। মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বসেন যশোর সদরে। এছাড়া অভয়নগর উপজেলাতেও সাব রেজিস্ট্রার নেই চার মাস। সেখানে বাঘারপাড়ার দায়িত্বে থাকা রিপন মুন্সি বুধ ও বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কেশবপুর উপজেলায় দুই বছর ধরে সাব রেজিস্টার নেই। ফলে চৌগাছার সাব রেজিস্ট্রার নারায়ণ ম-ল মঙ্গল ও বুধবার খ-কালীন দায়িত্ব পালন করছেন। গত মঙ্গলবার যশোর সদর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দেখা যায়, অফিস ভবনের সামনে মানুষ আর মানুষ। স্বাস্থ্যবিধির কেউই ধার ধারছে না। সকলেই অপেক্ষায় বসে আছে কখন ডাক পড়ে। দলিল করতে আসা কেরামত আলী বলেন, গত সপ্তাহ থেকে তিনি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে আসছেন কিন্তু রেজিস্ট্রার না থাকায় জমির দলিল করতে পারেননি। তাকে ফিরে যেতে হয়েছে। জমি বিক্রেতা নামজুল জানান, তার বিশেষ প্রয়োজনে টাকার দরকার। সে জন্য নিজের জমিটুকু বিক্রি করে দেবেন। কিন্তু আটদিন চেষ্টায় থেকেও বিক্রি করতে পারেননি। ফলে জমি বিক্রির টাকাও হাতে পাচ্ছেন না। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাকে। সাধারণ মানুষ নয়, জমি বেচাকেনা আর রেজিস্ট্রি ঠিকমতো না হওয়ায় চরম সমস্যায় পড়েছেন দখিল লেখকরাও। যথা সময়ে দলিল রেজিস্ট্র করতে না পারায় টান পড়েছে তাদের আয়-রোজগারে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। উল্লেখ্য, যশোর সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে প্রতি কর্মদিবসে ২শ’ থেকে ২শ’ ২০ টি জমি নিবন্ধনের কাজ হয়। কিন্তু বর্তমানে কর্মদিবস তিনদিন হওয়ায় সাতদিনের চাপ পড়ছে এই তিনদিনেই। এছাড়া বকেয়া কাজে জটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরর বেগ পেতে হচ্ছে। সদরের মতো অভয়নগর, চৌগাছা, মণিরামপুর, বাঘারপাড়া ও কেশবপুরেও চলছে একই সমস্যা। এ বিষয়ে যশোর সদর দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী বলেন, রেজিস্ট্রার না থাকাটায় ক্লাইন্টদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কেরও অবনতি ঘটছে। এ বিষয়ে তারা উর্ধতন মহলে একাধিকবার জানিয়েও প্রতিকার পাননি। রাজস্ব ঘাটতির কথাও যোগ করেন তিনি। দ্রুত জমি কেনাবেচার মাধ্যমে নির্বিঘেœ জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে ও দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেবে কর্তৃপক্ষ এমনটি প্রত্যাশা করেন তিনি। এ বিষয়ে যশোর মণিরামপুর ও যশোর সদরের খ-কালীন দায়িত্বে থাকা সাব রেজিস্ট্রার শাহ জাহান আলী জানান, মণিরামপুর ও সদরের দুই জায়গাতে দায়িত্ব পালন করতে তার বেগ পেতে হয়। মানুষের দুর্ভোগ ও সাব রেজিস্ট্রার সঙ্কটের কথা স্বীকার করে জেলা রেজিস্ট্রার শাহজাহান সরদার জানান, বিষয়টি নিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি তিনি উর্ধতন মহলের কাছে জানিয়েছেন কিন্তু এখনও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
×