ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবার জন্য মাস্ক

প্রকাশিত: ২১:১০, ২৪ জুলাই ২০২০

সবার জন্য মাস্ক

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও সংক্রমণ এড়াতে অবশেষে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। মঙ্গলবার এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়ে জারি করা হয়েছে পরিপত্র। এখন থেকে প্রত্যেক নাগরিককে ঘরের বাইরে যেতে হলে মুখে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। তা তিনি অফিস-আদালত, হাট-বাজার, সুপারশপ-সুপার মার্কেটসহ যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান- যেমন বিয়ে শাদি, যেখানেই যান না কেন। ইতোপূর্বে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক বলে হুকুম জারি করেছে ব্রিটিশ সরকার। সে দেশে ২৪ জুলাইয়ের পর মাস্ক ব্যবহার না করলে এক শ’ পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানার কথাও বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই তুলে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে না চাইলেও পরিস্থিতির চাপে তিনিও শেষ পর্যন্ত মাস্ক ব্যবহার শুরু করেছেন। করোনার আঁতুড়ঘর বলে খ্যাত চীনারা বিশেষ করে বায়ুদূষণ এড়াতে পূর্বাপরই মাস্ক ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিলেন। বিশ্বের দেশে দেশে অনেকেই পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহারে কমবেশি অভ্যস্ত। আসলে আদিকাল থেকেই মানুষ ছদ্মবেশ ধারণের কারণেই হোক অথবা হোক না কোন ধর্মীয় উপাসনাসহ সংস্কারের কারণে মুখোশ ব্যবহার করেছে। সে সবের কোনটি বিকট ও ভয়াল দর্শন, কোন কোনটি জীবজন্তু-পাখির আদলে, আবার কোনটি ড্রাগন অথবা দেব-দেবীতুল্য। মুখোশ পরে নৃত্যগীতও বিশ্বের বহু সমাজ-সংস্কৃতিতে জনপ্রিয় ও আদরণীয়। আবার জঙ্গীরাও মুখোশ পরেই অথবা মুখাবৃত করে অংশগ্রহণ করে থাকে ডাকাতি, জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে। নেকাব বা বোরকাও মুখাবৃত করার একটি মাধ্যম, যা ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহুকাল থেকেই। ভয়ঙ্কর মহামারী করোনাভাইরাস সেটিকেই যেন আবার ফিরিয়ে এনেছে সংক্ষিপ্ত মুখাবরণ মাস্ক হিসেবে এবং সেটি শেষ পর্যন্ত সবার জন্য বাধ্যতামূলক করল। এতে করে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সুরক্ষা কতটা নিশ্চিত করা যাবে তা বলে দেবে সময়ই। করোনার প্রতিষেধক ভ্যাকসিনসহ ওষুধপত্র আবিষ্কার হলেও মুখে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকবে কিনা, সেটিও একটি প্রশ্ন। তবে মাস্ক একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনামে তৈরি হয়েছে হাতে তৈরি চিত্রবিচিত্র নকশা ও মোটিফ সংবলিত মাস্ক এবং সে সব রফতানিও হচ্ছে বিদেশে। ভারতে সোনার মাস্কের খবরও মিলেছে। সুসংবাদ এই যে, করোনাজনিত লকডাউনেও দেশের কয়েকটি পোশাক কারখানা করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী যেমনÑ পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, মোজা, জুতা এমনকি জিনসের কাপড় তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে রফতানি করেছে। আগামীতেও যদি করোনা সঙ্কট চলতেই থাকে তবে এই নতুন শিপ্লটির যে বহুল অর্থনৈতিক বিকাশ ও সমৃদ্ধি ঘটবে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। তবে তৃণমূলের কি হবে? কি হবে কচিকাঁচা শিশু শিক্ষার্থীদের? করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা তথা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নামে মুখে মাস্ক পরে নিরাপত্তা না হয় নিশ্চিত করা হলো। তাই বলে একে অপরকে চিনব কিভাবে? আর বন্ধুত্ব ও সখ্যের কি হবে? চিরাচরিত সামাজিক সংস্কার সভ্যতা-ভব্যতা শেষ পর্যন্ত বজায় থাকবে তো? শিক্ষকই বা শিক্ষার্থীদের চিনবেন কিভাবে শ্রেণীকক্ষে? কৃষক যখন মাঠে ধান কাটবেন অথবা শ্রমিক শিল্প-কারখানায়, তখন মুখের মাস্ক শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করবে না তো! অথবা, যারা শ্বাসকষ্ট অথবা হাঁপানিতে ভুগছেন! চিকিৎসকরা ইতোমধ্যেই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেছেন, দীর্ঘসময় মাস্ক পরে থাকা শুধু অস্বস্তিকরই নয়; ক্ষতিকরও বটে। একটি মাস্ক ক’দিন ব্যবহার করা যাবে? নিয়মিত ধোয়াও একটি ব্যাপার। তদুপরি যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, মাস্ক তাদের জন্য বাড়তি খরচের বোঝা বৈকি। বিনামূল্যে দেয়ার কথা বলা হলেও কত দিন দেয়া হবে? এর বাইরেও মাস্কের নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ঢাকাতেই মাস্ক পরে ওষুধের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রেক্ষাপটে মাস্কের আড়ালে অন্যবিধ অপরাধ যে ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? এসব উদ্ভূত সমস্যার উত্তর মিলতে পারে আগামীতে।
×