
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেত বা লাঠির ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ, মাদ্রাসার সামনের মাঠে কাগজ নিয়ে খেলা করায় ৭ ছাত্রকে বেত্রাঘাতে আহত করার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। শনিবার (৫ জুলাই) সকালে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুরের ‘বাসাবাড়ি মোহাম্মাদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা’য় ঘটে এই ঘটনা। আহত শিক্ষার্থীরা হলো, মোস্তাকিম ফকির, মাহিম, গোলাম আব্দুল্লাহ্, সাইফুল, সুলাইমান, আব্দুল্লাহ বেপারী ও জুয়েল। আহত শিক্ষার্থীদের বয়স ৫-৭ বছর।
স্বজন ও আহত শিক্ষার্থীরা জানায়, শনিবার সকালে ‘বাসাবাড়ি মোহাম্মাদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা’য় শ্রেণিকক্ষে আসতে দেরি করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকের দেরি হওয়ায় কয়েকজন শিক্ষার্থী মাদ্রাসার সামনের মাঠে কাগজের কয়েকটি টুকরা নিয়ে খেলছিল। হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হয় সহকারি শিক্ষক শাকিল মোল্লা। পরে ওই শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ডেকে নিয়ে বেত্রাঘাত করে। এতে আহত হয় ৫-৭ বছর বয়সী ৭ শিক্ষার্থী।
স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের চিৎকারে ছুটে আসলে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে অভিযুক্ত শিক্ষক শাকিল মোল্লা। পরে আহতদের উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এই ঘটনায় অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
আহত মোস্তাকিম ফকির জানায়, মাদ্রাসার বাইরের মাঠে বন্ধুদের সাথে কাগজ নিয়ে খেলছিল তারা। সাথে দুষ্টুমিও করছিল। এমন সময় তাদের শাকিল স্যার ডেকে নিয়ে বেদম মারধর করে। সবাই ভয়ে প্রথমে চুপ থাকলেও পরে চিৎকার করে। আহত অবস্থায় তাদের সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আহত শিশু সুলাইমানের মা সালমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেকে এভাবে পিটিয়ে আহত করবে এটা আসলেই বুঝতে পারিনি। ঘটনার পর অফিসে তালা ঝুলিয়ে চলে গেছেন শিক্ষকরা। এই ঘটনার কঠিন বিচার চাই।’
প্রতিবেশি জাকির হাওলাদার বলেন, ‘শিশুদের ইচ্ছামতো বেত দিয়ে পিটিয়েছে শিক্ষক শাকিল মোল্লা। তার মানসিক সমস্যা রয়েছে। তা না হলে এভাবে অবুঝ শিশুদের মারধর করতে পারতো না।’
এদিকে মুঠোফোনে কথা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক শাকিল মোল্লা বলেন, শিশুদের খেলা দেখে রাগ নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। এতেই ঘটেছে এমন ঘটনা। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। মাদ্রাসা থেকে চলে আসার পর ওই শিশু আত্মীয়-স্বজন আমার উপর হামলা চালায়। আমাকেও ব্যাপক মারধর করে।
বাসাবাড়ি মোহাম্মাদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম বলেন, শিশুদের মারধরের সময় আমি মাদ্রায় উপস্থিত ছিলাম না। পরে শুনে আমি মাদ্রাসায় আসি, ততক্ষনে ওই শিক্ষক মাদ্রাসা থেকে চলে গেছে। বিষয়টিতে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ খান বলেন, শিশুদের মারধরের বিষয়টি এরইমধ্যে পুলিশ অবগত হয়েছে। একজন এসআইকে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বাসাবাড়ি মোহাম্মাদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা’য় দুটি বিভাগে ৩০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। এক সপ্তাহ আগে ওই মাদ্রাসায় সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন পশ্চিম রাজৈরের বাসিন্দা শাকিল মোল্লা।
রিফাত