ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

ঢাকার সিনেমায় অনন্ত-বর্ষা

প্রকাশিত: ০০:০২, ২৩ জুলাই ২০২০

ঢাকার সিনেমায় অনন্ত-বর্ষা

ঢাকাই সিনেমার আলোচিত জুটি অনন্ত জলিল ও বর্ষা। জুটি হয়ে এ পর্যন্ত উপহার দিয়েছেন ‘খোঁজ দ্য সার্চ’, ‘হৃদয় ভাঙা টেউ’, ‘দ্য স্পিড’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’, ‘নিঃস্বার্থ ভালবাস’ । অনন্ত-বর্ষা করোনার সংক্রমণের শুরু থেকেই চলচ্চিত্র ও তার বাইরের মানুষদের সহায়তা করে আসছেন। এদিকে শনিবার আবারও শিল্পী সমিতির মাধ্যমে চলচ্চিত্রর নিম্ন আয়ের শিল্পী ও কলাকুশলীকে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সহায়তা করেছেন তাঁরা। এ ছাড়াও অনন্য সমিতির মাধ্যমেও সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। আসছে ঈদ উপলক্ষে দুই শ’ মানুষকে খাবার সামগ্রী দিয়েছেন। তাদের সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বার্ষিক বনভোজন, এই দিন ছিল চিত্রনায়িকা বর্ষার জন্মদিন। উপস্থিত সবার মধ্য জন্মদিনের কেক কাটেন শিল্পী সমিতি। জন্মদিন উৎসবে বর্ষার নায়ক অনন্ত জলিল পাঁচ লাখ টাকা সমিতির ফান্ডে দেয়ার ঘোষণা দেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ফান্ডে নগদ পাঁচ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। প্রসঙ্গে অনন্ত জলিল বলেন, দেশের দুঃসময়ে টাকাটি নিম্ন আয়ের শিল্পীদের কাজে লাগবে। নিয়মিত সহায়তা করে আসছি। চলচ্চিত্রে এর আগেও খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছি। ওই দিন আঁচল ও আইরিনের সঙ্গে কথা বলেন অনন্ত। তার সামনের ছবির জন্য। প্রতিবছর নায়ক অনন্ত জলিল দুই থেকে তিনটি ছবি প্রযোজনা করবেন। অনন্ত মনে করেন চলচ্চিত্রের ক্রান্তিলগ্ন দূর করতে বেশি বেশি ছবি প্রযোজনা করতে হবে। নতুন নতুন ছবি প্রযোজনা না করলে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা বেহাল দশা হবে। তাই তিনি উদ্যোগ নিচ্ছেন ছবি প্রযোজনার। বলেন, করোনার কারণে সবারই আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। নতুন ছবি প্রযোজনা করা কঠিন হয়ে যাবে। তবে আমরা যেহেতু চলচ্চিত্রের মানুষ তাই আমাদের সামনের ছবিগুলোতে নিয়মিত চলচ্চিত্রর নায়ক নায়িকাকে নেয়া হবে। অনন্ত জলিল জানিয়েছেন তাদের নতুন ছবি ‘নেত্রী’। জুটি হিসেবে পর্দায় অনন্ত-বর্ষার রসায়ন দেখতে পাবে দর্শক। ছবির গল্পও লিখেছেন নায়ক-প্রযোজক অনন্ত জলিল। পূর্বেও অনন্ত গল্প লিখেছেন কিন্তু কখনও নাম দেয়নি। তবে ‘নেত্রী’ ছবিতে নিজের নাম দেবেন বলেন জানান। অনন্ত এও জানান, ‘নেত্রী’ ছবির গল্প কোন ছবির সঙ্গে মিলবে না। মরক্কোর সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ছবিটি নির্মিত হবে। অনন্ত জলিলের কথা শেষ হলে বর্ষা বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য করোনার এই দুঃসময়ে মানুষকে সহায়তা করা। সবাই যাতে একটু ভাল থাকতে পারে তাই তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। আমরা বরাবরই মানুষের পাশে ছিলাম, সামনেও থাকব। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে তৃপ্তি লাগে। এরই মধ্যে আমাদের নতুন ছবি ‘নেত্রী’র গল্প রেডি হয়েছে। খুব শীঘ্রই শূটিংয়ের পরিকল্পনা করা হবে। চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতেই প্রতিবছর নতুন নতুন ছবি করার উদ্যোগ নিচ্ছি। করোনার কারণে প্রতিকূল একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কবে নাগাদ এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না। বর্ষা মনে করেন সব কিছুরই শুরু আছে শেষও আছে। রাতের শেষে যেমন দিন আসে, দিন শেষে তেমনি রাত আসবে। এই অন্ধকার থাকবে না কেটে যাবে। অচিরেই এ ভাইরাস দূর হবে বলে বিশ্বাস করি। দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা হল বন্ধ। প্রেক্ষাগৃহে নেই নতুন ছবি। বন্ধ হওয়া অনেক হলই নতুন করে খুলবে না এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই অনলাইন মাধ্যমের জন্য কাজের কথা ভাবছেন। অনলাইন মাধ্যমের জন্য কাজ করা নায়িকা বর্ষাও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। বর্সার সঙ্গে একমত পোষণ করে অনন্ত জলিল বলেন, চলচ্চিত্র বাঁচাতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে হবে। শিল্পী ও কলাকুশলীর জন্য সবারই শূটিংয়ে নামা উচিত। বর্ষার মতো অনন্তও অনলাইন মাধ্যমের জন্য কাজ করা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তার কথায় সংস্কৃতি বাঁচাতে অনলাইন বড় একটি মাধ্যম। বিটিভির যুগ পেরিয়ে দেশ ডিজিটাল হয়েছে। সবাই ব্যতিক্রম কিছু করার কথা ভাবছেন। যতটুকু সম্ভব গল্প নির্ভর ছবি বানাতে হবে। এত দিন আমাদের জন্য ছবি নির্মাণ করেছিলাম। তবে এখন থেকে আমাদের ছবিতে অনন্য নায়ক নায়িকা নিয়েও ছবি প্রযোজনা করব। আমাদের মূল ফোকাস করতে হবে চলচ্চিত্র প্রযোজনায়। বেশি বেশি ছবি বানাতে হবে। শিল্পী, কলাকুশলী ও হল মালিকদের কথা চিন্তা করে ছবি নির্মাণ করতে হবে। চলচ্চিত্রের এই দুর্দিন থাকবে না ঘুরে দাঁড়াবে। বর্ষা মনে করেন চলচ্চিত্রে সম্ভাবনাময়ী অনেক নায়ক নায়িকা রয়েছে তাদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তারা সুযোগ পেলে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে পারবেন। তাই তাদের আমাদের সামনের ছবিগুলোতে সুযোগ দেয়া হবে। রিস্ক নিয়েই অনন্ত বর্ষা নতুন জুটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। সামনে লেবানন, তুর্কির সঙ্গেও ছবি করবেন বলে জানান। অনন্ত বর্ষা জুটি পর্দায় কখনও আলাদা হবেন না যতদিন অভিনয় করবেন জুটি হিসেবেই দেখা যাবে। গার্মেন্টস ব্যবসার পাশাপাশি চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করেন নিজের প্রযোজনা সংস্থার মাধ্যমে। অনন্ত জলিল সামাজিক কর্মকা-ের অংশ হিসেবে তিনটি এতিমখানা নির্মাণ করেছেন। মিরপুর ১০ নম্বর, বাইতুল আমান হাউজিং ও সাভার মধুমতি মডেল টাউনে আছে এতিমখানাগুলো। এ ছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরের ধল্লা গ্রামে সাড়ে ২৮ বিঘার ওপর একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন অনন্ত জলিল। তিনি ঢাকার হেমায়েতপুরে অবস্থিত বায়তুস শাহ জামে মসজিদের নির্মাণ কাজেও অবদান রাখেন। মুক্তির অপেক্ষায় আছে এই তারকা দম্পতির বড় বাজেটের সিনেমা ‘দিন দ্য ডে’। ছবিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক শ’ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও ইরানের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটির বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল। আর ছবিটি পরিচালনা করছেন ইরানী নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজম। আমরা বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পৌঁছে দিতে চাই। এই সিনেমাটি বাংলাদেশ ও ইরানসহ আরও কিছু দেশে মুক্তি পাবে। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ‘দিন দা ডে’ অনলাইনে নয় সিনেমা হলে মুক্তি পাবে। করোনা চলে গেলেই ছবিটির মুক্তির পরিকল্পনা করা হবে বলে জানান।
×