ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুষ্টিয়ায় পদ্মার আগ্রাসন ॥ শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়িসহ ছয়টি গ্রাম হুমকির মুখে

প্রকাশিত: ২০:০১, ৪ জুলাই ২০২০

কুষ্টিয়ায় পদ্মার আগ্রাসন ॥ শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়িসহ ছয়টি গ্রাম হুমকির মুখে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া ॥ কুষ্টিয়ায় প্রমত্তা পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। মিরপুর উপজেলার তালবাড়ীয়া ইউনিয়ন এবং কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় পদ্মার এই আগ্রাসনে ইতিমধ্যেই বিলীন হয়েছে বহু কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি। পদ্মার অব্যাহত ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে শিলাইদহে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য কুঠিবাড়িসহ আশপাশের ছয়টি গ্রাম। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা মওসুমের শুরুতেই এবার পদ্মা নদীর পাড় ভাঙ্গতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিরপুরের উপজেলার তালবাড়ীয়া এবং কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহের কোমরকান্দি এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। তালবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ইউনিয়নের অনেক কৃষি জমি এখন নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়েছে। তালবাড়ীয়া বাঁধের পাশেও দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। অপরদিকে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেড় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য কুঠিবাড়িসহ ছয়টি গ্রাম এখন নদী ভাঙ্গন ঝুঁকিতে পড়েছে। এর আগে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনরোধে ওই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড দুই’শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করলেও দেড় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ এখনও অবশিষ্ট রয়েছে। দেড় কিলোমিটার জুড়ে নদী তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি গ্রাম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী তীর অব্যাহত ভাবে ভাঙ্গছে। পদ্মা পাড়ে কোমরকান্দি গ্রামের জালাল সর্দারের বাড়ি থেকে জলিল প্রামাণিকের বাড়ি পর্যন্ত বাঁধ ধ্বসে পড়ছে। এদিকে নদী ভাঙ্গনে বসত-বাড়িসহ ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় কোমরকান্দিসহ পাশাপাশি ৫/৬টি গ্রামের মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে। এছাড়া শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়িও রয়েছে পদ্মার ভাঙ্গন ঝুঁকিতে। ভাঙ্গন ঝুঁকি থেকে কুঠিবাড়ি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় কর্তৃপক্ষের যেন কোন উদ্যোগ ও তৎপরতা নেই। কোমরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে বসতবাড়ি কয়েকবার স্থানান্তর করেছি। ভাঙ্গনরোধে জলদি নদী তীর সংরক্ষণসহ প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবিও করেন তিনি। শিলাইদহ ইউপি চেয়ারম্যান সালাহ্উদ্দিন তারেক জানান, নদী ভাঙ্গনরোধে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে শিলাইদহের ৫/৬টি গ্রামের বসতবাড়িসহ ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হবার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্র কুঠিবাড়িও ঝুঁকিতে পড়বে বলে তিনি জানান। এদিকে ভাঙ্গনরোধে দুই’শ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মার তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ নির্মাণ করা হলেও কোমরকান্দি গ্রাম দেড় কিলোমিটার অংশে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান জানান, ভাঙ্গন প্রবণ নদী তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভঙ্গনরোধে উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুন্ডু শিলাইদহের কোমরকান্দি এলাকার নদী তীর ভাঙ্গনের সত্যতা স্বীকার করে জানান, বর্ষায় প্রতি বছরই নদী তীর ভাঙ্গছে। এবার আগাম ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। তবে ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
×