ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁচামরিচ আমদানি হচ্ছে ভারত থেকে

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ৪ জুলাই ২০২০

কাঁচামরিচ আমদানি হচ্ছে ভারত থেকে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ খাবারের প্রধান উপকরণ সবজি এখন চড়া মূল্য দিয়ে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। নিত্যপণ্যের বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শাক-সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বন্যা ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে বাজারে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে সবজির। চাহিদা মেটাতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি করা হচ্ছে। এরপরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে সবজির দাম। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকায়। অথচ সপ্তাহখানেক আগে এই মরিচ কিনতে ভোক্তাকে ৫০-৬০ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। টমেটো, শসা, গাজর, ধুন্দল, বরবটি, পটলসহ কোন সবজি গড়ে ৬০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় কষ্টে রয়েছেন ঢাকার নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। করোনাকালে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এদিকে শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুধু সবজির কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্বস্তি বিরাজ করছে। মোটা চাল বাদে কমে আসছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ব্রয়লার মুরগি ও মাছের দামও নিম্নমুখী। এছাড়া অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। শুধু চড়া সবজির দাম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, উত্তরবঙ্গের সবজি উৎপাদনকারী অন্তত ১০ জেলায় এখন বন্যা দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকার আশপাশ বিশেষ করে নরসিংদী, ময়মনসিংহ এবং গাজীপুরে সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এর একটি প্রভাপ পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এ প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের সবজির পাইকারি ব্যবসায়ী মোঃ জসিম জনকণ্ঠকে বলেন, আগের মতো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আর সবজি আসছে না। এতে করে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না হওয়ায় খুচরা বাজারে শাক-সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সবজি উৎপাদন কমে গেছে। এর একটি প্রভাব পড়েছে বাজারে। তিনি বলেন, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী না হলে সবজির দাম শীঘ্রই কমে আসবে। এদিকে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিরক্ত ভোক্তারা। বাজারে গিয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে শাক-সবজি। ঢাকার নাগরিক জীবনে সবজি একটি অন্যতম খাবার। ভাতের সঙ্গে সবজি চাই ই চাই। সেই সবজি এখন চড়া মূল্যে কিনতে হচ্ছে। পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজার থেকে সবজি কিনছিলেন বেসরকারী চাকুরে আসাদ মিয়া। তিনি জানান, সবজির দাম এত চড়া যে, এই পণ্যটির গায়ে হাত দেয়া যাচ্ছে না। কোন সবজি ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে কাঁচামরিচ ৫০-৬০ টাকায় কেনা গেলেও এখন দা দ্বিগুনের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তবে, ওই বাজারের বিক্রেতারা বলছে, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে কৃষকের নিচু সবজিক্ষেতগুলো ডুবে গেছে। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। এছাড়া ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে সবজি কম আসছে বলেও বিক্রেতারা জানান। এভাবে চলতে থাকলে সামনে দাম আরও বাড়তে পারে। এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু, পটোল, বরবটি, ঢেঁড়স, ধুন্দল, ঝিঙে, লাউ, কচুমুখী করলা, পেঁপেসহ বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে। এসব সবজি ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে। সবজির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। বাজারভেদে কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) থেকে ৩৫-৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা দরে। ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি ॥ দাম নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি করা হচ্ছে। দু’বছর পর আবারও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে দেশের বাজারে কাঁচামরিচের দাম কমতে পারে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, হিলি বন্দর দিয়ে সর্বশেষ গত ২০১৮ সালে কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছিলো। এর দু’বছর পর সম্প্রতি আবারও বন্দর দিয়ে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। গত ২৯ জুন থেকে বন্দর দিয়ে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়। প্রথম দিন বন্দর দিয়ে একটি ট্রাকে প্রায় তিন টন (২৮০০ কেজি) কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে। এখনও বন্দর দিয়ে কাঁচামরিচ আমদানি হচ্ছে। আমদানি হওয়া কাঁচা মরিচ পাইকারিতে ( ট্রাকসেল) ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বাজারে মোটা চাল আগের বাড়তি দামে ৪২-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল দাম কমে ৫২-৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। দাম কমে ব্রয়লার মুরগি ১৪৫-১৬০ টাকা, পেঁয়াজ দেশী ৩৫-৪০, রসুন দেশী ৯০-১০০, আদা ১০০-১৪০ এবং ভোজ্যতেল লিটার ৮৪-৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। মাছের দাম কিছুটা কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম।
×