ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশাসন নীরব

মীরসরাইয়ে সড়কের গাছ চুরি থামছে না

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ৩০ জুন ২০২০

মীরসরাইয়ে সড়কের গাছ চুরি থামছে না

নিজস্ব সংবাদদাতা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম, ২৯ জুন ॥ বৈশ্বিক মহামারী করোনা যেন হার মেনে যাচ্ছে গাছ চোরদের হাতে। দেশে দেড় লাখ ছাড়িয়েছে করোনা সংক্রমণ। মানুষের মরণ যেখানে দুয়ারে কড়া নাড়ছে সেই পরিস্থিতির মুখেও একদল দুর্বৃত্ত মরণপণ গাছ চুরির মহোৎসবে নেমেছে। একটি সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত চক্র প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ এলাকার জোরারগঞ্জ টু বাংলাবাজার সড়কের দেওয়ানপুর গ্রামের অংশে, জোরারগঞ্জ টু মুহুরী প্রজেক্ট সড়কের নন্দনপুর অংশে, ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের চৈতণ্যের হাট থেকে বারইয়ারহাটের অংশের দু’ধারের প্রায় দেড় শতাধিক গাছ। রাতে গাছ কেটে কাদামাটি বা আবর্জনা দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে গুঁড়িগুলো। স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে গাছগুলো কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। জোরারগঞ্জ টু বাংলাবাজার সড়কের দেওয়ানপুর গ্রামের অংশে শনিবার রাতে ১০টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। উল্লিখিত সড়কগুলোর দু’পাশে বন বিভাগের সামাজিক বনায়নে প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৬ সালে একটি কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে। এর মধ্যে মেহগনি, রেইনট্রি, আকাশমনি, বাবলা ও শিশুগাছসহ নানান প্রজাতির গাছ রয়েছে। গত ২৪ বছরে গাছগুলো ২২ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে উঠেছে। জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের এসব মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে সরকারী এই গাছগুলোর প্রতি ক্যুনজর পড়েছে স্থানীয় ‘গাছখেকো’ একটি চক্রের। গত এক বছরে রাতের আঁধারে তারা অনেক গাছ করাত দিয়ে কেটে বিক্রি করে পকেট ভারি করেছে। মাঝেমধ্যে স্থানীয়রা আঁচ করতে পারলেও চক্রটির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে স্থানে সড়কের পাশের বেশ কিছু মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি উপড়ে নেয়া হয়েছে। আবার কেটে নেয়ার পর কিছু গাছের গোড়া চুরির সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে। জোরারগঞ্জ-বাংলাবাজার সড়কের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী সমিতির সভাপতি খাবির ইবনে আমিন জানান, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কগুলোতে মাঝে মধ্যে দু-একটা মাছবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য কোন যান চলচল একেবারেই থাকে না, জোরারগঞ্জ টু বাংলাবাজার সড়কটি রাতে একেবারেই যানবাহন ও জনমানব শূন্য থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগায় গাছ চোরেরা। গত এক বছরে দেড় শতাধিক গাছ চুরি হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে রাস্তার পাশে কোন গাছ দেখা যাবে না। চোরেরা প্রায়ই সময় রাস্তার গাছ কেটে নিয়ে যায়। দিনের পর দিন রাস্তার দু’পাশের গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে রাস্তায় দিনে দিনে গাছের সংখ্যা কমছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, এসব সড়কের দু’পাশ থেকে দিনের পর দিন রাতের অন্ধকারে গাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বনবিভাগের কোন মাথা ব্যথা নেই। এ চুরির সঙ্গে এ এলাকার কাঠ ব্যবসায়ীরা জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। কাঠ ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই চুরির বিষয়টি বেরিয়ে পড়বে বলেও তারা জানান। তবে নিয়মিতভাবে তাজা গাছ চুরি গেলেও খোঁজ নেয় না কেউ। এ বিষয়ে মীরসরাই উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ এরফান উদ্দিন সরজমিনে পরিদর্শন করে জানান, সরকারীভাবে সামাজিক বনায়নের আওতায় রোপণকৃত উপকারভোগীদের গাছ চুরির ঘটনা দুঃখজনক। আমরা অতি শীঘ্রই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।
×