ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্থগিত টেস্ট নিয়ে আইসিসির দিকে তাকিয়ে বিসিবি

প্রকাশিত: ২২:০১, ২৯ জুন ২০২০

স্থগিত টেস্ট নিয়ে আইসিসির দিকে তাকিয়ে বিসিবি

মিথুন আশরাফ ॥ এ বছর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আরও ৮টি টেস্ট খেলা বাকি ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে একের পর এক টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ ও সিরিজ স্থগিত হয়ে গেছে। বছরে আটটি টেস্টই আর খেলা হচ্ছে না। এ স্থগিত টেস্ট নিয়ে এখন ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা) দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এমনিতেই বাংলাদেশ অতীতে খুব বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পায়নি। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর পর অনেক বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস তাতে বাদ সেধেছে। সেই মার্চ থেকে যে দেশের ক্রিকেট বন্ধ হয়ে আছে। কবে ক্রিকেটাররা মাঠে ফিরতে পারবেন তার নিশ্চয়তাও নেই। করোনাভাইরাসের প্রভাব যে দিন দিন বাড়ছে। এরমধ্যে পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে একটি টেস্ট এবং শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে তিনটি টেস্ট খেলা স্থগিত হয়েছে। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুটি ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি টেস্টও স্থগিত হয়েছে। এখন টেস্টগুলো কিভাবে খেলা যায় সেদিকেই মনোযোগ দিচ্ছে বিসিবি। আগামী বছর জুনে যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হওয়ার কথা, তা যদি সময়মতো হয় তাহলে বাংলাদেশের এই ৮ টেস্টের সবকটি খেলা নাও হতে পারে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের আগামী বছর জুনে ফাইনালের আগ পর্যন্ত মোট ১৪টি টেস্ট খেলার কথা ছিল। ৭টি দেশের মাটিতে ও ৭টি দেশের বাইরে। গত বছর নবেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের ১টি টেস্ট খেলে। দ্বিতীয় টেস্টটি এপ্রিলে হওয়ার কথা থাকলেও তা করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হয়। শুধু এই ম্যাচটিই নয় এ বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাকি ৮টি টেস্টও স্থগিত হয়। এরমধ্যে জুনে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুটি, আগস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে দুটি এবং জুলাই-আগস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার মাটিতে তিনটি টেস্ট খেলা স্থগিত হয়েছে। সামনে আগামী বছর জানুয়ারিতে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিন টেস্টের সিরিজ খেলার কথা বাংলাদেশের। সূচী অনুযায়ী টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের শেষ সিরিজ ছিল সেটি। কিন্তু এখন এ বছর ৮টি টেস্টই হলো না। যদি বাংলাদেশ এই ৮ টেস্ট না খেলতে পারে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই অন্য দলগুলোর পয়েন্ট হিসেবে গরমিল হবে। তাতে বোঝা যাচ্ছে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে মহাঝামেলায় পড়বে আইসিসি। এখন আইসিসি কি করে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সময় বাড়িয়ে দিয়ে খেলা পরিচালনা করে নাকি টেস্ট কমিয়ে দিয়ে সূচী অনুযায়ীই ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে; সেদিকেই নজর থাকছে। তবে বিসিবি চাচ্ছে, যেভাবেই হোক যেন স্থগিত হয়ে যাওয়া টেস্টগুলো হয়। তা যেন কোনভাবেই বাদ না যায়। এ জন্য আইসিসির সঙ্গে আলোচনাও চলছে। সামনে চলবেও। বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান এ নিয়ে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে জানিয়েছেন, ‘আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান সময়সীমা বাড়ানো না হলে, আমাদের স্থগিত হওয়া ৮ ম্যাচ খেলার কোন সুযোগই থাকবে না। আমরা অপেক্ষায় আছি যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ব্যাপারে আইসিসি কি করে। কারণ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন সময় না দেয়া হলে পিছিয়ে যাওয়া ৮ ম্যাচ খেলা সম্ভব হবে না।’ বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেছেন, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল যদি সূচী মোতাবেক আগামী জুনেই হয় তাহলে এসব ম্যাচের ভাগ্য সুতায় ঝুলে যাবে। কারণ পরবর্তী জুনের মধ্যে এসব ম্যাচ খেলার মতো সময় আমরা পাব না। তবে যদি চ্যাম্পিয়নশিপের সময় বাড়ে অথবা আইসিসির ইভেন্ট বাতিল হয় তাহলে সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তখনও এটা নির্ভর করবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ওপরে।’ বিসিবির সিইও মনে করেন, আইসিসি যদি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সময় না বাড়ায়, আগামী বছরের জুনেই ফাইনাল আয়োজন করে। সেখানেও সমস্যা আছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নিয়ম অনুযায়ী সব দলকেই নির্দিষ্ট সংখ্যক টেস্ট খেলতে হবে। কিন্তু করোনার কারণে এখন কোন দল আটটি সিরিজ খেলবে, কোন দল খেলবে পাঁচটি। সেক্ষেত্রে ফাইনাল আয়োজন সম্ভব নয়। আইসিসির সভায় তাই এমন অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আইসিসি আসতে পারেনি। আইসিসির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে বিসিবি কোন পথ অনুসরণ করবে সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান বোর্ডের সিইও। এ্যাশেজ দিয়ে গত বছরের আগস্টে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়। পয়েন্ট টেবিলে সেরা থাকা দুটি দলের মধ্যে আগামী বছরের জুনে লর্ডসে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই সময়ে টেস্ট খেলুড়ে নয়টি দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে দুই বছরের মধ্যে দুটি করে সিরিজ খেলবে। প্রত্যেক দল তিনটি করে হোম এবং তিনটি করে এ্যাওয়ে সিরিজ খেলবে। কিন্তু করোনা সব ভেস্তে দিয়েছে। এরই মধ্যে কিছু কিছু দল মাঠে ফিরতে শুরু করেছে। ইংল্যান্ড সফরে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তান দলও ইংল্যান্ডে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এখনও ক্রিকেট ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বোর্ড। এরমধ্যে একের পর এক সিরিজ স্থগিত হচ্ছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই স্থগিত হয়ে যাওয়া ম্যাচ ও সিরিজ নিয়েই আইসিসির সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে বিসিবি।
×