করোনাভাইরাস নামক দানব আজ পুরো পৃথিবীজুড়ে। বিশ্বের শক্তিধর উন্নত রাষ্ট্র থেকে অনুন্নত রাষ্ট্র কেউই তার তা-ব থেকে বাঁচতে পারছে না। সে তার মনমতো পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সংসদ ভবন থেকে পাড়ার চায়ের দোকান সবখানেই যেন তার দাপট। এই ভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ায় মানুষ আজ একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মা কলিজার সন্তানকে করোনার ভয়ে দূরে সরিয়ে রাখছে, তেমনি সন্তানও মা-বাবাকে ঘর থেকে বের করে দিতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না। স্বামীর করোনা পজিটিভের খবর পেয়ে স্ত্রী স্বামীর বাড়ি থেকে পলায়ন করতেও দ্বিধা করছে না। কিন্তু মুদ্রার ওপিঠ কিন্তু এতটা নির্মম নয়। করোনার উপসর্গ নিয়ে শ্বাসকষ্টে থাকা স্ত্রীকে ভালবাসার পরশ মাখিয়ে দিচ্ছে বা স্বামীর কষ্ট দূরীকরণে স্ত্রী হাসপাতালে স্বামীর বিছানার পাশে ঘুমানোর কথাও গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ডাক্তার সাহেবরা পেশাগত দায়িত্বকে জীবনের উপরে স্থান দিচ্ছেন। সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতার দরুনও শক্ত হাতে ধরে রেখেছে স্বাস্থ্যসেবার চাকা। প্রতিনিয়ত চিকিৎসকদের মধ্যে কেউ না কেউ হারিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে করোনা মোকাবেলায় পুলিশ ভাইদের কথাও এদেশের মানুষ কখনও ভুলবে না। পুলিশই জনগণ, জনগণই পুলিশ। এই কথার যথার্থতা যেন এখন প্রকৃতরূপে প্রকাশ পেয়েছে। জনগণকে সচেতন করতে যেয়ে সেই পুলিশের হাজারো সদস্য আজ করোনায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। এই লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত হেরে গেছে অনেক বীর সৈনিক। করোনা প্রতিরোধে সেনাবাহিনীর কথাও কি এদেশের মানুষ ভুলে যাবে? কখনোই না। তাদের এক মিনিটের বাজার বসানোর উদ্যোগের ফলে হাজারও অসহায়ের ঘরে আজ চুলোর আগুন জ্বলেছে। করোনার ভয়ে যখন আত্মীয়-স্বজন সব দূরে সরে যাচ্ছে তখন বেশকিছু সাহায্য সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ভাই মৃতদের সৎকারের মতো মহৎ কাজকে কাঁধে তুলে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল ছাড়াও মানুষ ব্যক্তিগত বা সামাজিকভাবে মানুষকে সাহায্য করছে। সে সাহায্যের জায়গা থেকে রাস্তার প্রাণীও বাদ পড়ছে না। করোনার প্রভাবে এইভাবেই মানুষ তার মানবধর্ম তুলে ধরছে। প্রকাশিত হচ্ছে একজন মানুষের প্রকৃত সত্তা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে