ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাসপোর্টে ভোগান্তি

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২৩ জুন ২০২০

পাসপোর্টে ভোগান্তি

পাসপোর্ট নিয়ে আবার শুরু হয়েছে তোঘলকি কা-। মাঝখানে ই-পাসপোর্ট চালু করার উদ্যোগে কিছুটা গতিশীলতা এসেছিল সংশ্লিষ্ট অফিসে। এখন আবার যে কে সেই। নতুন পাসপোর্ট দূরে থাক, পাসপোর্ট রিনিউ কিংবা রি-ইস্যু করতে ভোগান্তির অন্ত নেই। বর্তমানে অবশ্য অজুহাত দেয়া হচ্ছে করোনাভাইরাসজনিত ৬৬ দিন পাসপোর্ট অফিস বন্ধ থাকার। পাসপোর্ট একটি দেশের বৈধ নাগরিকের জন্মগত অধিকার। জন্মসূত্রে বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক পাসপোর্ট পাওয়ার যোগ্য। তবে দেশে পাসপোর্ট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি-অনিয়ম-স্বজনপ্রীতি, মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালদের উপদ্রব একটি সর্বজনবিদিত ওপেন সিক্রেট। পাসপোর্ট ফির উচ্চহার তো আছেই; এর সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে রয়েছে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে পদে পদে হয়রানি, ঘুষ ও উৎকোচ গ্রহণ, দালালদের উৎপাত-উপদ্রব, মাসের পর মাস ঘুরেও পাসপোর্ট না পাওয়া ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো, স্মার্ট কার্ড ও ভোটার আইডি প্রাপ্ত একজন বৈধ নাগরিক যদি কোন কারণে আদালত কিংবা আইনানুগ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অযোগ্য অথবা দ-িত ঘোষিত না হন, তা হলে তিনি কেন পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যতিরেকে পাসপোর্ট পাবেন না? এ বিষয়ে খুব দ্রুত একটি সুষ্ঠু সমাধান ও মীমাংসা প্রত্যাশিত। তদুপরি করোনার কারণে পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদির মতো জরুরী সেবার অফিস একটানা ছুটিতে থাকাও সমীচীন নয়। অন্তত সীমিত পরিসরে হলেও তা চালু রাখা বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে যে, বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জীবন-জীবিকা সূত্রে অবস্থান করছেন এবং কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছেন। এর বাইরেও রয়েছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও রোগী, যারা লেখাপড়া ও জরুরী চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে মরিয়া। তাদের জন্য জরুরীভিত্তিতে পাসপোর্ট ইস্যু অপরিহার্য। বর্তমানে আটকে আছে অন্তত আড়াই লাখ আবেদন। নতুন আবেদন গ্রাহ্যই করা হচ্ছে না সীমিত পরিসরে অফিস চালু থাকার কারণে। নতুন পাসপোর্ট বইয়ের সঙ্কটও সুবিদিত। বর্তমানে শুধু রি-ইস্যু পাসপোর্ট প্রিন্ট করা হচ্ছে মাত্র সাত হাজারের মতো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রতিদিন প্রিন্ট করা যাবে ২০ হাজারের মতো পাসপোর্ট। সংশ্লিষ্ট অফিসের ভাষ্য, একটি পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে অন্তত ৪০ হাত ঘুরতে হয়। তদুপরি পাসপোর্ট প্রিন্ট একটি টিমওয়ার্ক। ফলে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে পুরো টিম ‘অকেজো’ হয়ে যেতে পারে। এই অজুহাতে বিলম্ব হচ্ছে পাসপোর্ট দিতে। এই জট ও জটিলতা জরুরীভিত্তিতে কমানো যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে পাসপের্ট অফিসকে। সাধারণ মানুষের পাসপোর্ট প্রাপ্তির অধিকার ও প্রত্যাশাকে সমধিক গুরুত্ব দিতে হবে অবশ্যই। অবশ্য পাসপোর্ট অফিসের ভাল কাজের উদাহরণও আছে বৈকি। যেমন ই-পাসপোর্ট। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি থেকে চালু করেছে ই-পাসপোর্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে প্রথম একটি ই-পাসপোর্ট তুলে দিয়ে শুরু করেছে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। তবে আপাতত এই সুবিধা কেবল ঢাকার আগারগাঁও, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিস থেকে পাওয়া যাবে। পরে চলতি বছরের মধ্যেই সারাদেশে চালু হতে পারে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম। তবে করোনার কারণে তাও ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে বর্তমানে।
×