ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছি

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২৮ এপ্রিল ২০২০

আমরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছি

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ জয় দাবি করেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। সোমবার দেশজুড়ে চলা লকডাউন খানিকটা শিথিল করে জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, নিউজিল্যান্ডে এ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। আমরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছি। দেশটিতে প্রায় পাঁচ সপ্তাহ ধরে চার স্তরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। এ সময়ে কেবল দরকারি সেবাসমূহ চালু ছিল। সোমবার থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। এর ফলে কিছু ব্যবসা, খাবারের দোকান ও স্কুল খুলে দেয়া হবে। খবর বিবিসি, সিডনি মর্নিং হেরাল্ড ও এএফপির। তবে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ এখনও তৈরি হয়নি। কারণ, সংক্রমণ একেবারে নির্মূল হয়ে গেছে নিশ্চিত করে এ কথা বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকেই স্বাভাবিক সামাজিক জীবনে ফিরতে চাচ্ছেন, যা আমরা সকলেই মিস করছি। কিন্তু আমাদের ধীরে ও সতর্কতার সঙ্গে এগুতে হবে। আরর্ডান বলেন, আমরা যেটুকু অগ্রগতি অর্জন করেছি তা হারানোর ঝুঁকি নিতে চাই না। আমাদের লেভেল থ্রিতে থাকার দরকার হলে তাই থাকব। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একজন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১,১২২ এবং মারা গেছে ১৯ জন। দৈনিক সরকারী ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অর্থনীতির চাকা চালু করছি। কিন্তু মানুষের সামাজিক জীবনযাত্রা সচল করছি না। সোমবার রাত ১২টা থেকেই নিউজিল্যান্ডে তুলে নেয়া হবে চার সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বহাল থাকা চার মাত্রার লকডাউন। দীর্ঘ এ সময়টিতে বন্ধ ছিল সব স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-বাণিজ্য। মানুষও ছিল ঘরবন্দী। লকডাউন তুলে দিলে অবস্থায় পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা জানা নেই উল্লেখ করে জেসিন্ডা ভাইরাসের বিস্তার ঘটার নতুন ঝুঁকি সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং বেশিরভাগ মানুষকেই ঘরে থাকার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম নতুন ধরনেরই এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ২৩ জানুয়ারি শহরটি লকডাউন করে দেয় চীন। সম্প্রতি লকডাউন তুলে নেয়া উপলক্ষে শহরটি বর্ণিল আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে পর্যায়ক্রমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ ভাইরাসে এখন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মহাদেশ হচ্ছে ইউরোপ। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ এতে প্রাণ হারিয়েছে। বর্তমান দেশটির ৫০ অঙ্গরাজ্যের সব, পাশাপাশি ইউএস ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ, ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া, গুয়াম ও পুয়ের্তো রিকোসহ দেশটির সব অঞ্চল ফেডারেল দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও দেশটির চলমান লকডাউন তুলে দিতে সম্প্রতি দেশটির প্রায় ১২ অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে। অর্থকষ্ট, কাজ হারানোর ভয়সহ অন্যান্য কারণে মঙ্গলবার নর্থকারোলাইনা, ওয়াশিংটন, ভার্জিনিয়া, অরেগন, আলাবামা, ম্যারিল্যান্ড, টেক্সাস ও ফ্লোরিডাসহ অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামে। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে ওয়াশিংটনে। সামাজিক দূরত্বর বিধান না মেনে অনেকে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিত-ায় জড়িয়ে পড়ে। লকডাউনে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কোটি ২০ লাখ লোক কাজ হারিয়েছে। আবার অনেকে কোয়ারেন্টাইনে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে দেশটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বেশি সমস্যায় পড়েছেন। টেক্সাসের বিক্ষোভে যোগ দেয়া এ্যালেক্স জোন্স নামে এক বিক্ষোভকারী অন্যদের সঙ্গে হাত মেলান। তিনি করেনাভাইরাস প্রসঙ্গে বাজারে চাউর হওয়া ষড়ষন্ত্র তত্ত্ব বিশ্বাস করেন। বিক্ষোভে যোগ দেয়াদের সাধুবাদ জানান তিনি। অপর এক বিক্ষোভকারী বলেন, লকডাউনের কারণে আমার কাজ নেই। আমি আমার পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি না। তাই আমি এ লকডাউন চাই না ঘরবন্দী দশার নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবিতে গত সপ্তাহেও টেক্সাস ও উইসকনসিনে কয়েক শ’ মানুষ বিক্ষোভ করেছে। টেক্সাসের রাজধানী অস্টিনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ‘যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের কাজ করতে দাও’ বলে স্লোগান ধরে।
×