ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয় নয়

প্রকাশিত: ০৮:০৭, ১৬ এপ্রিল ২০২০

ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয় নয়

দেশে এবং বিদেশেও করোনা সঙ্কটজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি বিভাগীয়-জেলা পর্যায়ে ডিসি ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমানে সারাদেশে কার্যত লকডাউন চলছে। জরুরী সার্ভিস ব্যতিরেকে বন্ধ রয়েছে প্রায় সবরকম কার্যক্রম। প্রকৃত অর্থে জনবান্ধব ও জনপ্রিয় একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বিলক্ষণ জানেন যে, এর ফলে আয়-উপার্জন বন্ধ থাকায় সবচেয়ে কষ্টে রয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। যেমন- কামার-কুমার-দিনমজুর-রিক্সাওয়ালা, ভ্যানচালক, বাসের চালক-হেলপার, ভিক্ষুক, হতদরিদ্র এমনকি হিজড়া সম্প্রদায় পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এসব শ্রেণীপেশার মানুষের জন্য অন্তত ছয় মাসের নিত্যপণ্যদ্রব্যের সাহায্য-সহযোগিতাসহ নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি আশ্রয়ের ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে। গরিবদের সহায়তার জন্য এবং চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভর্তুকি মূল্যে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। টিসিবিও ট্রাক সেলে নায্যামূল্যে বিক্রি করছে নিত্যপণ্য। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতা বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, কেউ না খেয়ে থাকবে না। তারপরও দেখা যাচ্ছে, কোথাও কোথাও ঘটছে অনিয়ম-দুর্নীতি-অপচয়-ত্রাণসমাগ্রী নিয়ে লুটপাট ও নয়ছয়। অন্তত কয়েকটি জেলায় দশ টাকা কেজির চাল চুরির অভিযোগ উঠেছে, যার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীরা। স্থানীয় প্রশাসন গ্রেফতারসহ কিছু ব্যবস্থা নিলেও তা পর্যাপ্ত নয়। সে অবস্থায় আরও কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আপাতত পারস্পরিক সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সঙ্গনিরোধই সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষিত হয়েছে লকডাউন। এতে জাতীয় আর্থিক ক্ষতিসহ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ হলেও ইতিবাচক কাজও হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ গতি কমেছে অনেকাংশে। তবে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে প্রধানমন্ত্রী কিছু প্যাকেজও ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ছয়মাস পর্যন্ত প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য ও আর্থিক প্রণোদনা দুর্গতদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়া, দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি, টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি ইত্যাদি। মাঠপর্যায়ে কাজটি বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে ডিসি, টিএনও অফিসকে। এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সে ক্ষেত্রে আদৌ কোন দুর্নীতি-অনিয়ম সহ্য করা হবে না, বরং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশে কেউ অভুক্ত থাকবে না। খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে এবং যাবতীয় প্রণোদনা দেয়া হবে কৃষকদের। এই সঙ্কটেও বাংলাদেশের যেটি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে তা হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। চলতি বোরো মৌসুমের ফলনও আশাব্যঞ্জক। তরিতরকারি, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস-দুধ-পোলট্রিতেও বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ তো দূরের কথা, খাদ্য সঙ্কটেরও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এখন দরকার নিয়মিত বাজার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ। যাবতীয় দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধ। ত্রাণ চুরির সঙ্গে জড়িতদের মোবাইল কোর্টে বিচারের কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় প্রশাসনকে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে প্রতিনিয়ত। কঠোর শাস্তি দিতে হবে দুর্নীতিবাজদের।
×