ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু, কমতে পারে করোনার বিস্তার

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২৯ মার্চ ২০২০

সারাদেশে মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু, কমতে পারে করোনার বিস্তার

শাহীন রহমান ॥ উচ্চ তাপমাত্রা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করে কিনা তা নিয়ে গবেষণা এখন চলমান। তবে এখন পর্যন্ত যে তথ্য-উপাত্ত তা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন উচ্চ তাপমাত্রা করোনা বিস্তাররোধ করতে পারে। তবে ফল যাহোক বাংলাদেশে করোনাভাইরাস বিস্তারের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ঠিক তখনই তাপমাত্রা বাড়ছে। সারাদেশে শুরু হয়েছে মৃদু তাপপ্রবাহ। বৈশাখ আসার আগেই এই দাবদাহ আরও বেড়ে যাওয়া পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করোনা বিস্তাররোধ করে কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা সংশয়ের মধ্যে থাকলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে যেসব অঞ্চল এখন তাপমাত্রা জিরো থেকে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে সেখানে করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ইতালি, স্পেন ফ্রন্সে এখন শীতের প্রকোপ বেশি। অপরদিকে চীনে যখন করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করে তখন সেখানে প্রচ- শীত ছিল। বর্তমানে সেখানে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশ ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গ্রীষ্মকাল আসীন হওয়ায় এবং তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় করোনার প্রকোপ এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশের চেয়ে অনেক কম। ভাইারাস মোকাবেলায় প্রযুক্তিগত সুবিধায় যেখানে অনেক কম, সেখানে করোনা পরিস্থিতি বলতে গেলে অনেকটই নিয়ন্ত্রণে। এসবের সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার একটি সম্পর্ক থাকতে পারে বলেও কোন কোন বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে দেশের ১২টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে বর্তমানে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামীতে তাপমাত্রা আরও বেড়ে তীব্র দাবদাহের রূপ নিতে পারে। তবে এই তীব্র দাবদাহ দেশের জন্য ভাল ও মন্দ উভয় পরিণতি বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে তাপমাত্রা বাড়লে বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী দেশের করোনা বিস্তার প্রতিরোধে কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। অপরদিকে দাবদাহের কারণে গরমের তীব্রতা বেড়ে জনজীবন অতিষ্ঠ করে ফেলতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানায় আগামী ৪৮ ঘণ্টা নাগাদ দেশের ওপর শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছে পশ্চিমা দেশে বিশেষ করে যুক্ত রাষ্ট্রে উচ্চ প্রযুক্তি সত্ত্বে করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে এটি কমই ছড়াচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন রোগী পাওয়া যায়নি। এছাড়াও গত ৮ মার্চ থেকে শুরু করে দেশে এখন পর্যন্ত ৪৮ আত্রান্ত। এর মধ্যে ১৫ জন সুস্থ হয়ে ফিরে গেছে। ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ অধিক জনসংখ্যার দেশ। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ভারতে এখন পর্যন্ত ৭শ’ মধ্যে করোনা সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি পশ্চিম বঙ্গেও এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মধ্যে সীমিত রয়েছে। অথচ এই অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতি অঞ্চল বলে স্বীকৃত। বিশেষজ্ঞরা বলছে এই অবস্থায় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া করোনা মোকাবেলায় আরও সহায়ক হতে পারে। বাংলা চৈত্র মাসের আজ ১৫ তারিখ। আর ১৫ দিন পরেই আসবে বাংলা নববর্ষ। বৈশাখ মাস এখানে গ্রীষ্মকাল হিসেবেই পরিচিত। প্রকৃতির দাবদাহ চরমে ওঠে এই মাসে। বৈশাখ শুরু হওয়ার আগেই প্রকৃতি যেন স্বরূপে ফিরছে। কয়েকদিনের আবহাওয়া বিশ্লেষণে তাই পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে যে গরম পড়তে শুরু করেছে, তা বাড়বে আরও। তারা জানায় বর্তমানে ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, হাতিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা এবং যশোর অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। এটির সামন্যে দিনে আরও বেড়ে তীব্র দাবদাহে রূপ নিতে পারে। তারা জানায় গেল ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই ছিল শীতের প্রকোপ। এই সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে যেমন কম ছিল তেমনি সর্বোচ্চ তাপমাত্র স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭ ডিগ্রী পর্যন্ত কমছিল। মধ্য মার্চ পর্যন্ত আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণই ছিল। এমনকি এই সময় পর্যন্ত কোথাও কোথাও সকাল সন্ধ্যা শীতের আমেজ ছিল। কিন্তু কিন্তু ২৫ মার্চের পর থেকে আবহাওয়া চরিত্র বদলাতে শুরু করেছে। স্বরূপে ফিরছে চৈত্র। তাপমাত্রা যেমন দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু দাবদাহ। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখন ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি। রাজধানীর ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে অনেক। বর্তমানে রাজধানীর তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে রয়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে দেশের অধিকাংশ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখন ৩৩ থেকে প্রায় ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি। সামন্যের দিনে এই তাপমাত্রার আরও বেড়ে যাবে। তারা জানায় ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস পার হলে মাঝারি তাপপ্রবাহের মধ্যে পড়ে যাবে। আবহাওয়াবিদ মোঃ আফতাব উদ্দিন বলেন, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধির লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে। আপাতত আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টি বা ঝড় নাও হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা বাড়বে এবং তাপ্রবাহের বিস্তার ঘটবে, এপ্রিলের শুরুতেও গরম আবহাওয়া থাকবে। মার্চ মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসেও উল্লেখ করা হয়েছে নচলতি মাসের শেষের দিকে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে একটি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) অথবা মাঝারি ধরনের (৩৮-৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুই দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। মার্চ-মে দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে এপ্রিলের উত্তর-উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে তাপপ্রবাহের দাপট থাকবে দুয়েকটি। কালবৈশাখী হবে তিন থেকে পাঁচ দিন। রয়েছে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কাও। দেশের এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা বিজ্ঞানীরা পরিষ্কার করে কিছু না বললেও সম্প্রতি একদল চীনা বিজ্ঞানী জানিয়েছেন উচ্চ তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতায় মারণ ভাইরাস করোনা কম ছড়ায়। এক গবেষণাপত্রে তারা দাবি করেন, করোনাভাইরাস বিস্তার রোধ করে উচ্চ তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা। এর আগেও এক গবেষণা বলা হয়, ভাইরাস কবলিত এলাকাগুলোর তাপমাত্রা এখন আছে পাঁচ থেকে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। তারা আরও জানায় এক ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও এক শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি হলে ভাইরাসটির সংক্রমণ যথেষ্ট পরিমাণে কমে যায়। তবে অনেক বিজ্ঞানী এর সঙ্গে একমত পোষণ করছেন না। তারা বলছেন উচ্চ তাপমাত্রায় ভাইরাসের ক্ষমতা লোপ পাবে কিনা, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। চিনের গবেষণায় বলা হয়েছে, তাপমাত্রা ৮.৭২ ডিগ্রী সেলসিয়াস পার করার পর ভাইরাসের সংক্রমণ কমেছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে আবার দাবি করেছে, বেশি তাপমাত্রা বা আর্দ্রতা সহ্য করতে পারে না এই ভাইরাস। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছেন এমন আশা করার যুক্তি নেই। চীনেই ঠা-া ও গরম দুরকম পরিবেশেই এই ভাইরাস ছড়িয়েছ। তবে যাই হোক না কেন এখন পর্যন্ত শীতপ্রধান অঞ্চলে এই ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে আরও বেশি তাপমাত্রা বাড়ার আভাস দিয়েছে। এখন দেখার বিষয় আগামী উচ্চ তাপমাত্রা করোনা কতটা প্রতিরোধে সহায়ক।
×