ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন ঋণগ্রহীতারা

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৪ মার্চ ২০২০

এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন ঋণগ্রহীতারা

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা ॥ করোনাভাইরাসে এনজিওর কিস্তির পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে আমতলী উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক ঋণগ্রহীতা। ঋণগ্রহীতারা দ্রুত এনজিওর কিস্তি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। এনজিওর কিস্তি বন্ধ না হলে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে এমন দাবি ঋণগ্রহীতাদের। এদিকে এনজিওর লোকজন ঋণের কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছে এমন অভিযোগ ঋণগ্রহীতাদের। জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক বেসরকারী সংস্থা এনজিও রয়েছে। ওই এনজিওগুলো থেকে আমতলী উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ঋণ নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য, গরু ও হাঁস মুরগি পালন করে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় আমতলী উপজেলার ব্যবসায়ী, কৃষক, জেলে ও দিনমজুর মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার ঋণগ্রহীতারা। একদিকে পরিবারের ভরণ পোষণ, অন্যদিকে সাপ্তাহিক ও মাসিক ঋণের কিস্তির বোঝা। বর্তমানে আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় পরিবারের ভরণ পোষণই কষ্ট সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার মতো কোন সামর্থ্য নেই এমন দাবি ঋণগ্রহীতাদের। এদিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বেসরকারী সংস্থা এনজিওগুলো ঋণের কিস্তি আদায়ে সহনশীল না হয়ে ঋণগ্রহীতাদের চাপ প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ ঋণগ্রহীতাদের। অপরদিকে বাংলাদেশে ব্যাংকের ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত এমন এক প্রজ্ঞাপনে আশার মুখ দেখলেও বাস্তবে এনজিওর ঋণগ্রহীতাদের কোন কাজে আসছে না। ওই প্রজ্ঞাপনে এনজিওর ঋণ স্থগিতের কোন নির্দেশনা নেই। আমতলী লক্ষাধিক ঋণগ্রহীতারা এনজিওর ঋণের কিস্তি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। আমতলী উপজেলার তালুকদার বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা প্রায় বন্ধ। একদিকে ঘরে জিনিসপত্র রয়েছে কিন্তু কোন ক্রেতা নেই, অন্যদিকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য এনজিওর চাপ প্রয়োগ। ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে দিন কাটছে। দ্রুত এনজিওর ঋণের কিস্তি বন্ধের দাবি জানাই। আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের মাহিনুর বলেন, পদক্ষেপ এনজিও থেকে ৪৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গরু ক্রয় করেছি। এখন আয় রোজগার নেই কিস্তিু দিতে সমস্যা হচ্ছে। কিস্তি পরিশোধ করতে হলে গরু বিক্রি করে করতে হবে। দ্রুত কিস্তি বন্ধের দাবি জানাই। একই এলাকার জেসমিন বলেন, পদক্ষেপ থেকে ঋণ নিয়ে জমি ক্রয় করেছি। এখন রোজগার বন্ধ, খেতেই সমস্যা হচ্ছে। কিস্তি পরিশোধের কোন উপায় পাচ্ছি না। দ্রুত কিস্তি বন্ধের দাবি জানাই। চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের মোটরসাইকেল চালক মাঈনুল ইসলাম বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মোটরসাইকেল কিনেছি। করোনাভাইরাসের কারনে আয় রোজগার প্রায় বন্ধের পথে। কিভাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করব তা ভেবে পাচ্ছি না? বেসরকারী সংস্থা পদক্ষেপ এনজিওর গাজীপুর ব্র্যাঞ্চের সিএম মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, কিস্তি বন্ধের ব্যাপারে আমার কোন নির্দেশনা নেই। নির্দেশনা পেলে কিস্তি আদায় করব না। বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের আমতলী অফিসের ক্রেডিট অফিসার (প্রগতি) মোঃ মাঈনুল ইসলাম বলেন, নির্দেশনা পেলে কিস্তি আদায় বন্ধ করব। ব্র্যাক আমতলী অফিসের ম্যানেজার কাজী মোঃ দুলাল হোসেন বলেন, প্রধান কার্যালয় থেকে কিস্তি বন্ধের কোন নির্দেশনা দেয়নি। বন্ধের নির্দেশনা পেলে কিস্তি আদায় করব না। গ্রামীণ ব্যাংক আমতলী শাখার ম্যানেজার মোঃ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, কিস্তি বন্ধের কোন নির্দেশনা নেই বিধায়, কিস্তি আদায় করছি। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, মঙ্গলবার বেসরকারী সংস্থা এনজিওর সমন্বয় সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় সকল এনজিওকে আপতকালীন সময়ে ঋণের কিস্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হবে।
×