আজাদ সুলায়মান ॥ যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের অন্য কোন দেশ থেকে যাত্রী আনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা না মেনেই ইউরোপ থেকে ৯৬ যাত্রী নিয়ে বাংলাদেশে আসছে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট। এয়ারলাইন্সটির কিউআর-৬৩৪ ফ্লাইটটি ইতালির ৬৮ জনসহ জার্মানি ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের ৯৬ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসে। তাদেরকে রাতেই নেয়া হয় কোয়ারেন্টাইনে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ যাত্রী ছিল ৩০৪ জন। ফ্লাইটটি সোমবার সন্ধ্যায় পৌনে সাতটায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
উল্লেখ্য, মাত্র একদিন আগে রবিবার রাতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত লন্ডন বাদে ইউরোপ থেকে যাত্রী আনতে পারবে না কোন এয়ারলাইন্স। যদি কোন এয়ারলাইন্স এরপরও যাত্রী নিয়ে আসে তবে তাদের খরচেই ফেরত পাঠানো হবে তবে সন্ধ্যায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে কয়েকজন যাত্রী ঢাকায় অবতরণ করেন। তবে সোমবার সন্ধ্যায় আগত কাতারের যাত্রীদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতিতে ঢাকায় আসতে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান। এদিকে ফ্লাইটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়া বিমানবন্দরের পাল্টে গেছে চিরচেনা রূপ। সকাল দুপুর বিকেলে গিয়ে বিমানবন্দরের প্রতিটি চেক ইন কাউন্টার প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে। সারাদিনে মাত্র ৩৭টি ফ্লাইট ওঠানামা করায় যাত্রীদের ঠাসা ভিড় নেই আগের মতো।
বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, ফ্লাইটটি দোহা থেকে রওয়ানা হয়ে ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু কাতারের পরিস্থিতি ও করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় ফ্লাইটটিকে আসতে নিষেধ করেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান। তিনি জানিয়ে দেন, এটি এলেও ঢাকায় অবতরণ করতে দেয়া হবে না। তবে পরে দোহা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে অনুমোদন নিয়ে নেয় এবং বিলম্বে রওয়ানা দিয়ে দেয়। এটি সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, আমি বেবিচক চেয়ারম্যান হিসেবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রথমে ফ্লাইটটি আসার অনুমতি দেইনি। কিন্তু তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন চ্যানেলে যোগাযোগ করে পারমিশন নিয়েছে। মানবিক কারণ দেখিয়েছে, হয়ত সরকার সে জন্য পারমিশন দিয়েছে। ফ্লাইটটিতে যারা আসছেন, সবাই বাংলাদেশী। যেহেতু চলেই আসছে, সেহেতু ওই ফ্লাইটের শতভাগ যাত্রীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বলা হয়েছে।
এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান সন্ধ্যায় দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, কাতারের ফ্লাইটটিতে মোট ৩০৪ জন যাত্রী ছিল, যাদের মধ্যে ৯৫ ছিলেন ইউরোপের। ইতালির ৬৮ জন ও জার্মানির ২৭ জন। বাকি যাত্রীরা মধ্যপ্রাচ্যের। তবে ওই ৯৫ জনকেই বাধ্যতামূলকভাবে আশকোনার কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও ভারতের পর এবার ওমানে বন্ধ হলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। ১৭ মার্চ থেকে বিদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ওমান। দেশটির এ সিদ্ধান্তের কারণে ওমানের মাস্কট রুটে ফ্লাইট স্থগিত করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ রুটে সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করত বিমান। বিমান জানিয়েছে, ওমানের সিদ্ধান্তের কারণে সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম থেকে মাস্কটগামী বিজি ১২১ ফ্লাইটটি তিন ঘণ্টা এগিয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ছাড়ে। এ জন্য এক নোটিসে যাত্রীদের বিমানবন্দরে বেলা ৩টায় রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।
এ সম্পর্কে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন জানান, ওমানের সুপ্রীম কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭ মার্চ মধ্যরাত থেকে ওমানের নাগরিক ছাড়া কেউ সে দেশে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। এ কারণে বিমান ওমানের রাজধানী মাস্কটে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ করতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। এ কারণে সোমবারই এই রুটে বিমানের শেষ ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: