ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যাম্পিয়ন বরণের অপেক্ষা-সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চ্যাম্পিয়ন বরণের অপেক্ষা-সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ প্রথমবার ফাইনালে, প্রথমবারেই ইতিহাস। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ১৩তম অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে পরাক্রমশালী ভারতকে হারিয়ে নব-ইতিহাস রচনা করেছে আকবর আলীর দল। যে কোন ঘরানার ক্রিকেটে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন। বড়রা যা পারেনি সেটাই করে দেখিয়েছে ছোটরা। পোচেসস্ট্রমের স্মরণীয় ফাইনালে ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়নদের চোখে চোখ রেখে ছিনিয়ে এনেছে স্বপ্নের শিরোপা। স্বভাবতই উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছে গোটা দেশ। সবার মুখে মুখে পারভেজ হোসেন ইমন, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব, অভিষেক দাসের নাম। চায়ের দোকান থেকে সোস্যাল মিডিয়া, স্কুল প্রাঙ্গণ, টিএসসি হয়ে মন্ত্রিসভার কেবিনেটÑ কেবলই যুবটাইগারদের প্রশংসা। বুধবার দেশে ফিরলে ব্যাঘ্রশাবকদের কিভাবে বরণ করে নেয়া হবে, সেটি ঘিরে জোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মহল। উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সাফল্যকে মুজিববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার বলে অভিহিত করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, দেশে ফেরার পর অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দলের জন্য গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হবে। রবিবারের গ্র্যান্ড ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৩ উইকেটের স্মরণীয় জয়ের পর তাৎক্ষণিক এক অভিনন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের (ক্রিকেট দল) সকলের প্রতি আমার আন্তরিক অভিনন্দন। তোমরা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনায় আমি খুবই আনন্দিত।’ খেলাপাগল বঙ্গবন্ধুকন্যা আকবর-ইমনদের সাফল্যে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। সোমবার সকালে মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জয়ে অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজার এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিশ্বকাপ জয় জাতির জন্য, সবার জন্য মুজিববর্ষের একটা বিরাট উপহার।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ভারত যেখানে পরপর তিনবার না চারবার যেন চ্যাম্পিয়ন তাদের হারানো চাট্টিখানি কথা নয়। সাহস আছে তাদের। আকবর ছেলেটা ওয়ান্ডারফুল। এর আগে আমরা একবার প্যারেড গ্রাউন্ডে সংবর্ধনা দিলাম, আরেকবার পল্টনে দিলাম, সে রকম একটা সংবর্ধনা তাদের আমরা দেব।’ এ সময় মন্ত্রিসভার এক সদস্য বিশেষ ছুটি ঘোষণার কথা তুললে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ছেলেরা চারটা বছর প্র্যাকটিস করেছে। এই খুশিতে আমরা আরও এক ঘণ্টা বেশি কাজ করব। ছুটি আবার কী। এই আনন্দে বেশি করে কাজ করতে হবে।’ অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। একই দিন সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের সংবর্ধনা দেয়ার হবে বলে জানান। বিশ্বকাপজয়ী তরুণদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে জয়কে সেলিব্রেইট করব। বিজয়ী বীর টাইগারদের সুবিধা মতো সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিজয় গোটা জাতির বিজয়। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।’ ওবায়দুল কাদের যোগ করেন, ‘বাংলাদেশে একদিন বিশ্বকাপ নিয়ে আসবে, আমাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ ক্রিকেটাদের এ দুর্দান্ত পারফরর্মেন্স। বিশেষ করে ক্যাপ্টেন আকবর যে পারদর্শিতা দেখিয়ে বিজয়ের স্বর্ণ দুয়ারে টেনে নিয়ে গেছে তা অবশ্যই স্মরণীয়।’ বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। জয় নিশ্চিতের পর শিক্ষার্থীদের ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো টিএসসি প্রাঙ্গণ। রবিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বাংলাদেশ দলের জয় নিশ্চিতের পর দলে দলে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে এসে টিএসসির উল্লাসে অংশ নিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। মুহূর্তেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় টিএসসি এলাকা। এর আগে বেলা ২টা থেকেই বড় পর্দায় ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করতে হাজারও শিক্ষার্থী টিএসসির পায়রা চত্বরে জড়ো হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) উদ্যোগে টিএসসি প্রাঙ্গণে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করেন ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক। খেলার শুরু থেকেই ক্রিকেটপ্রেমীরা বড় পর্দায় খেলা দেখতে জড়ো হন। পরে দিন গড়িয়ে রাত নামলে ভিড় বাড়তে থাকে। টিএসসির পায়রা চত্বর, রাজু ভাস্কর্যসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এই বিজয়োৎসবে অংশ নেন। ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে কোন বড় আসরে ভাল পারফর্মেন্স করলেই ক্রিকেটপ্রেমী শিক্ষার্থীদের বড় পর্দায় খেলা দেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। সেই জায়গা থেকে বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছিল ডাকসু। উৎসব হয়েছে, হচ্ছে ঢাকার বাইরে, গ্রামে-গঞ্জে, জেলা শহরে সর্বত্র। যে কোন ধরনের ক্রিকেটে এবারই প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো টাইগাররা। এর আগে জাতীয় দল হোক বা বয়সভিক্তিক, এমনকি মেয়েদের ক্রিকেটেও কখনও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ঘরের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল খেলেছিল তারা। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল টাইগার যুবাদের। দুর্দান্ত সেই দলটার অধিনায়ক ও বর্তমান জাতীয় অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজও উচ্ছ্বসিত, উচ্ছ্বসিত আরেক তারকা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। এবার ভারতের উপর একটি প্রতিশোধও নিল যুব টাইগাররা। এই ভারতের বিপক্ষেই সর্বশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে ৫ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দল।
×