এসো হে জীবন
ফারুক মাহমুদ
হু হু মাঠ। নদীপাড়ে ভাঙা সেতু। পাশে একা গাছ
নুয়েপড়া ডাল। উড়ু-উড়ু শাখা। ফুল ফুটে আছে
থাকতে পারে কারও কারও অসাফল্য-বিত্ত আহরণে
সে-ও কিন্তু পদ্য লেখে। চাঁদ ওঠে আধপোড়া মনে
কোনো কোনো দীর্ঘ চোখে পুষ্পস্থানে স্রোতঃস্বিনী আঁকা
আকাশ আগুন আলো একসূত্র-চলমান চাকা
এখনো মনের কোণে স্নেহপ্রীতি প্রেম জেগে থাকে
আনন্দে আন্দন্দ ধ্বনি, নদীসত্য-মোহানার বাঁকে
কাঁটা কিছু থাকে...। কাকরের পথ-অপরিপাটি
তবু হে জীবন, এসো, হাতে হাত-একসঙ্গে হাঁটি
** অপরিচয়ের গণিত
আইউব সৈয়দ
সবই তুমুল, সবই তীব্র।
মাঝামাঝির কর্মতৎপরতার বাঙালনামা নেই, তেমনি কোনো
হাতেখড়ির অভিমান, যন্ত্রণাও ফড়িংয়ের মতো ওড়াওড়ি করে না।
আত্মতৃপ্তিদায়ক পরিচয়তেই প্রবাদপ্রতিম পৌষ — সতীর্থের তালিকায়
এসে প্রাণ-ভৌগোলিক অস্তিত্বে রৌদ্দুরের ঠা ঠা তে সাড়া দিচ্ছি।
সোজাসাপ্টা তাল ও লয়ে এর মিশেল ছন্দে স্পষ্টভাষী জীবন
হাসে। তপ্ত হয়ে ওঠে অতলস্পর্শী সংবেদনশীল ভঙ্গি। প্রয়োগ- প্রকৌশলে
উত্তেজিত প্রহর দানা বেঁধে সুরারোপিত করে শীতকে...
দূরত্ব মেনেও মুনশিয়ানা ঢংয়ে তৈরি হোক মোহমুক্ত তুমুলতা ভরা
কিংবা পরিচ্ছন্ন কয়েকটি দিন। নিঝুমদ্বীপের দৌড়ঝাঁপের সাথে ছুটে আসুক জরুরি কিছু তীব্রতাসহ
প্রশ্নহীন বিরল গণিতের ঋতু ...
আহা! সবই তুমুল, সবই তীব্র।
** ডিজিটাল হাটে
বদরুল হায়দার
ডিজিটাল হাটে তোমাকে ভালোবাসাটা কষ্টকর।
মন খেলাপীর আল্টিমেটামে কোন্দল পুনর্বহালের
হুঁশিয়ারি। তুমি দ্বৈত প্রেমের আন্তঃকলহে লঙ্ঘিত করো
হৃদয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া।
যৌথ শান্তনার ঘোষিত শাসনে তুমি ওয়াইফাইতে
নিয়ন্ত্রণ কর প্রেমের কবিতা। ওয়াগন ভরা
দুঃখ বরাত নিয়ে বিপজ্জনক কর রসিকতা।
বিকেন্দ্রীকরণে মনের দি¦গুণ বিভাজনে তুমি
নিখোঁজ স্বপ্নের স্মৃতিযানে টানো সুযোগের র্যাঙ্কিং
আমি ভালোলাগা বয়কটে হারিয়েছি
প্রেমিকের দিল খোলা ব্যাংকিং।
সমতুল্যের উচ্ছেদে তুমি সাপ্লাই চেইনে বিচ্ছেদের
ওভার ফ্লাইতে ওড়ে বেড়াও ভালোবাসায়। বেদনার
প্রতিবেদনে প্রেমের ভাগ্যচক্রে যোগ হয় পরাজয়।
সিসি টিভির গোপন চোখে প্রেমের ইস্যুতে তুমি
পছন্দের টপচার্টে জব্দ করো প্রেমের নগর। আমি
পরজীবী অবজ্ঞার পাঠে তোমার
চরণ ঘাটে গড়ি পারাপার।
** স্বাধীন দেশের জন্মঋণ
মারুফ রায়হান
জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধাভরে লিখি :
‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন :
স্বাধীন দেশের জন্মঋণ’
অশেষ প্রেরণা নিয়ে দেশপ্রেম শিখি।
একটি তারিখ কী উপায়ে নিজেকে জড়ায়
একটি দেশের জন্মগ্রহণের দায়
শুধু দেশ নয়, ঋণগ্রস্ত আমি-
প্রতিটি বাঙালি ঋণী
সম্মতি জানায় প্রতি ইঞ্চি জমি-
যমুনামেঘনা স্রোতস্বিনী।
** দাগের দুঃখগুলো
ফকির ইলিয়াস
ক্ষতগুলো দেখলেই আহত শাপলা ফুলটির কথা মনে পড়ে।
সারারাত কচুরিপানা মাথায় দিয়ে যে বিলে রাত কাটিয়েছিলেন
আমার সহোদর- তার সমস্ত শরীর জুড়ে আজও
ভেসে আছে রক্তচোষা জোঁকের চিহ্ন;
কী প্রচণ্ড কালো দাগ দেখাচ্ছে একাত্তরের মারণ সময়!
মুছে যায়নি অনেক কিছুই।অথবা বলা যায় এখনও
ক্ষতের পর ক্ষত তৈরি করে যারা দখল করছে
আমাদের সবুজ ক্ষেত; তারা কি ভুলে গেছে সেই দিনগুলি!
তারা কি আজও শোনে না সম্ভ্রুম হারা নারীর আর্তনাদ!
ক্ষতগুলো দেখলেই পথের ল্যাম্পপোস্টেরগুলোর দাগ
আমার দিকে তাকায়। ওদের কোনো দুঃখ নেই আজ।
বেদনাবৃত্তান্তগুলো আমার, হাহাকারগুলো শুধুই আমাদের!
** জলরোদ
মানজুর মুহাম্মদ
তোমার আর্দ্রতার আশায় বর্ষার পায়ে ন্যুব্জ হয়ে থাকে
আমার স্বপ্নবাজ অদম্য মন
আকাশ ভাঙলে তোমার মনপুরায় ফুল ফোটে নিমিষে
তাই জলের জলসা-ই আমার পরম ক্ষণ
জলের কোরকে জীবন খোঁজো ধ্যানের অতলে
জল শুষে জল, প্রার্থনায় জল তাই রোদের বদলে
আকাশ মুখো খোলা বাড়ির সন্তান শংকায়
কদমের গোলকে বর্ষার মুখ খোঁজে অবুঝ পাখিও
জল নয় থোকা থোকা রোদ তাই পাখির প্রার্থনায়।
** কেন ভালোবাসি
স. ম. শামসুল আলম
আমাকে হাসতে দেখে ম্লানমুখ ফুল
রক্ত¯্রােতে ভেসে যায় কৃতঘœ কস্তুরী
প্রলুব্ধ বাতাস-ভারি বসন্তমুকুল
দুলে ওঠে পদ্মাজল কত বাহাদুরি
আমাকে কাঁদতে দেখে লতাগুল্ম নাচে
ময়ূরীঢঙের পাখি জীবন্ত মাতাল
সুখ-সুখ খেলা করে পাতা গাছে গাছে
হাসে বুড়ো বৃক্ষগুলো কা--ফাটা ছাল
আমার জীবন যদি না-কান্না না-হাসি
তোমাকে ব্যাকুল বুকে কেন ভালোবাসি!
** অদৃশ্যপুর
গাফফার মাহমুদ
জল ঘুঙুর সুবর্ণ শৈশব দিন
ইচ্ছে লাটাই সুতোকাটা ঘুড়ি
নদীসন্ধ্যা তটে ডাঙুলি খেলে
কেটেছে যে কতোটা বিকেল!
তুই আমি খুব আলসেমী
গল্পচ্ছলে ছিলাম পাগলামী
রোদ ঝিলিক জল ইলশেগুড়ি
কতো কী বলে দেই হাততুড়ি!
বইপোকা সেই বন্ধু কিশোর
লভ্যাংশের এখন অংক কষে
বই না পড়া এই যে আমি
তৎসম প্রত্যয়ে কবিতা রচি!
ব্যস্ত শকট চলছি অদৃশ্যপুর
পৌনঃপুনিক ভাবিনা কভু
আমরা দু'জন এখনও আছি
চোখ মেলে খেলছি কানামাছি!