নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ ১৪ জানুয়ারি ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনার আগে আরও দুই গার্মেন্ট শ্রমিক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর ওই ধর্ষণ মামলার আসামিরাও হলো বহিষ্কৃত তারাব পৌরসভা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সিন্ডিকেটের সদস্য। ছাত্রলীগের এ সিন্ডিকেটটি এখন এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক।
থানা সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রূপসী নিউ মডেল স্কুল মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়। ওই মেলায় বেড়াতে এসে বরপা বাগান বাড়ির বাসায় ফেরার পথে মৈকুলী এলাকার এ্যারেস্টা ফ্যাশন কেয়ার গার্মেন্টসের দুই শ্রমিককে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় উপজেলার রূপসী প্রধানবাড়ী এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে আকাশ (১৯), ইমান আলীর ছেলে ইসমাইল প্রধান (২৩), জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার টুপকারচর এলাকার ওয়াজেদ আলীর ছেলে আনিছুর রহমান (২৫) ও লাইছউদ্দিনের ছেলে হাবু (২৭)সহ বেশ কয়েকজন। এরা সকলেই বহিষ্কৃত তারাব পৌরসভা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সিন্ডিকেটের সদস্য বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। পরে রূপসী প্রধানবাড়ী বালুর মাঠে নিয়ে ওই দুই গার্মেন্টস কর্মীর মধ্যে একজনকে গণধর্ষণ করে এবং আরেকজন দৌড়ে মসজিদের ছাদে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনায় ধর্ষিতা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আকাশ, ইসমাইল প্রধান ও আনিছুর রহমানকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠালেও অভিযুক্ত হাবুসহ অন্যরা এখনও পলাতক রয়েছে। এ ঘটনার পর গত ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার আবু সুফিয়ান, তৌসিফ, আফজাল ও তানভীরসহ আরও বেশ কয়েকজন গন্ধর্বপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রীকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দু’দিন আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ১২ জানুয়ারি আবু সুফিয়ানসহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে তৌফিক ও আফজাল নামের দু’জন ওই দিনই নারায়ণগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় এবং আদালত দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ধর্ষণের ঘটনায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ফুসে উঠেছে। বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচী করেছেন তারা। প্রতিবাদীরা ধর্ষকদের উপযুক্ত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, ছাত্রলীগের এ ধরনের কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি ফয়সাল আলম শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ মাসুম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারাব পৌরসভা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে বহিষ্কার করা হয়। দুটি ঘটনাই এজাহার নামীয় আসামির বাইরে যারা রয়েছেন তাদের বাঁচাতে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল উঠেপড়ে লেগেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তারাব পৌরসভা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান সিন্ডিকেটটি ফেনসিডিল, ইয়াবা, মদ, বিয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ছিনতাই ডাকাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে তারা। আর এদের সেল্টার দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কয়েক নেতা। আর ওই নেতারাই এখন এজাহার নামীয় আসামির বাইরে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বাঁচাতে মরিয়ে হয়ে উঠেছেন। সিন্ডিকেটটি রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকার মাদকের আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ইতোমধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
রূপগঞ্জে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ
আগেও দুই গার্মেন্টস শ্রমিককে ধর্ষণ করে সুফিয়ানের অনুসারীরা
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: