ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কালীগঞ্জের হাসপাতালে ব্যাপক ভাংচুর, আহত ১

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

কালীগঞ্জের হাসপাতালে ব্যাপক ভাংচুর, আহত ১

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের কালীগঞ্জে চিকিৎসকের অবহেলায় সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও মালামাল তছনছ করেছে রোগীর স্বজনরা। এসময় বাঁধা দিতে গিয়ে হাসপাতালের এক কর্মচারী আহত হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মচারী ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার বড়নগর গ্রামের মো. মোজাম্মেল হকের ছেলে মোবারক হোসেন (৩০) মঙ্গলবার সকালে বুকে ব্যথার কারণে বাড়িতে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। স্বজনরা তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রোর জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) লিখে দিয়ে অসুস্থ্য মোবারককে কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দিয়ে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক মুশফিক-উস সালেহীন। কিন্তু স্বজনরা হাসপাতালে না নিয়ে মোবারককে তার বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে নেওয়ার ঘন্টা খানেক পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা তাকে পুনঃরায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে গ্যাস স্প্রে করার সময় মোবারক হঠাৎ বেড থেকে নিচে পড়ে যান এবং রক্ত বমি করতে থাকেন। এতে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে রেফার্ড করা হয়। স্বজনরা অসুস্থ্য মোবারককে নিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে পূবাইল থানার মীরেরবাজার এলাকায় পৌছলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এসময় মোবারককে তালটিয়া এলাকার করমতলা খ্রিষ্টান হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মোবারকের লাশ নিয়ে স্বজনরা দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রো ফিরে যান। মোবারকের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনরা ওই হাসপাতালে ভীড় জমান। একপর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে চিকিৎসকের গাফলতিতে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মোবারকের মৃত্যুর অভিযোগে তুলে হাসপাতালে হামলা চালায়। এসময় তারা ইসিজি ও আল্ট্রানোগ্রাম রুম, চিকিৎসকদের ডিউটি রুম, টিকেট কাউন্টার, ঔষধ বিতরণ রুম, কনফারেন্স রুম, কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকসহ হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালার কাঁচ, আসবাবপত্র ও মালামাল ভাংচুর এবং তছনছ করে। এসময় বাঁধা দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে আহত হন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এটেনডেন্ট মো.নাইম। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন আতংকিত হয়ে হাসপাতাল এলাকা ত্যাগ করে। ঘটনার খবর পেয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শিবলী সাদিক ও কালীগঞ্জ-কাপাসিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ছাদেকুর রহমান আকন্দ হামলা ও ভাচুরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, হামলায় হাসপাতালের প্রায় ১৫/১৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কালীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কেএম সোহেল রানা জানান, হাসপাতালে হামলাকারীদের সনাক্তের জন্য সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ছাদেকুর রহমান আকন্দ বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
×