ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ জনপদের কাছারি ঘর

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ৪ জানুয়ারি ২০২০

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ জনপদের কাছারি ঘর

প্রায় সকল গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই ছিল কাছারি ঘর। আর এই কাছারি ঘর ছিল গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই কাছারি ঘর সংস্কৃতি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। গেস্টরুম বা ড্রয়িং রুম আদি ভার্সন কাছারি ঘর এখন আর গ্রামীণ জনপদে দেখা যায় না। মূলবাড়ি থেকে একটু বাইরে আলাদা খোলামেলা ঘর। অতিথি, পথচারী কিংবা সাক্ষাতপ্রার্থী এই ঘরে এসে বসেন। প্রয়োজনে এক-দুই রাত যাপনেরও ব্যবস্থা থাকে কাছারি ঘরে। মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের শান্তা মিয়া কাজী বাড়ির সামনে এমন একটি কাছারি ঘর দেখা যায়। বাড়ির জনৈক প্রবীণ ব্যক্তিত্ব আজম খান বলেন, আমাদের বাড়ি ও পুরনো বাড়ির একটি। আধুনিকতার ছোঁয়া এই বাড়ির অনেক ঘরে লাগলেও পুরনো সংস্কৃতির এই কাছারি ঘর আমরা এখনো স্মৃতি হিসেবে ধরে রেখেছি। কাছারি ঘর ছিল বাংলার অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থের আভিজাত্যের প্রতীক। কাঠের কারুকাজ করা টিন অথবা শনের ছাউনি থাকত কাছারি ঘর। আলোচনা সালিম বৈঠক গল্প আড্ডার আসর বসত কাছারিঘর ঘিরে। বর্ষাকালে কাছারি ঘরে বসে পুঁথিপাঠ, শায়ের শুনে মুগ্ধ হতেন শ্রোতা। পথে চলাচলরত পথচারীরা কাছারি ঘরে একটু জিরিয়ে নিতেন। বিপদে পড়লে রাতযাপনের ব্যবস্থা থাকত এখানে। বাড়ির ভিতর থেকে খাবার পাঠানো হতো কাছারি ঘরের অতিথির জন্য। আবাসিক গৃহশিক্ষকের (লজিং মাস্টার) কাছারি ঘরেই থাকতেন। সকাল বেলা মক্তব হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই কাছারি ঘর। এখন আর কাছারি ঘর তেমন চোখে পড়ে না। তবু গ্রামে এখনো দেখা যায় কাছারি ঘর। অনেকেই বাপদাদার ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছেন কাছারি ঘর। এরকম আরও একটি কাছারিঘর পাওয়া গেল ৯নং সদর ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া গ্রামের মনজুর মোর্শেদ কনক ভূঁঞারবাড়িতে। ঐতিহ্যবাহী এই ভূঁঞাবাড়িতে এখনো একটি কাছারি ঘর আছে। ঘরটি আগে সনের ছাউনি ছিল। ছিল কাঠের দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ। শন এখন পাওয়া যায় না। তাই টিন আর ইটের দেয়াল দিয়ে কাছারিঘরটির অস্তিত্ব¡ টিকিয়ে রাখা হয়েছে। ৯নং মিরসরাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমরান উদ্দিন জানান, পুরনো ঐতিহ্য হিসেবে কাছারিঘর সংরক্ষণ করা হচ্ছে এখনো অনেক গ্রামের বাড়িতে। পূর্ব পুরুষদের নানা স্মৃতি বিজড়িত এই কাছারিঘর সত্যিই প্রাচীনতার বার্তা বহন করে। ঈশা খাঁর আমলে কর্মচারীদের খাজনা আদায়ের জন্য অনেক কাছারি ছিল এই অঞ্চলে। পরবর্তীতে আভিজাত্যের প্রতীক। তিনি বলেন আমাদের ও প্রয়োজন সামর্থ্য অনুযায়ী এই কালের স্মৃতি ধরে রাখা। রাজিব মজুমদার, মিরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×