ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

 তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান

দেশে বিশেষ করে গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে আসছে। গ্যাসের ওপর ভাসছে দেশ এবং বিদেশেও রফতানি করা যাবে- এবংবিধ বাগাড়ম্বর তথা অপপ্রচার চলেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। বাস্তবে গ্যাসের মজুদ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল। যা হোক, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত গ্যাসের মজুদও শেষ হয়ে আসছে ক্রমশ। ভোলার গ্যাসফিল্ড ছাড়া নতুন কোন গ্যাসফিল্ড আবিষ্কার হয়নি। তেলের মজুদ ও উত্তোলন বরাবরই সীমিত ছিল। যে কারণে পেট্রোল ও ডিজেলের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করতে হয় বিদেশ থেকে আমদানি করে। এ খাতে প্রতি বছর বিপুল ভর্তুকিও দিতে হচ্ছে সরকারকে। আর দফায় দফায় বাড়াতে হচ্ছে তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম, যার দায় শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ছে গ্রাহকের ঘাড়ে। অবশ্য গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম হু-হু করে বাড়ায় পেট্রোবাংলা অনেকাংশে লাভের মুখ দেখেছে। তবে গ্যাস কোম্পানিগুলোর অবস্থা মোটও ভাল নয়। মজুদ কমে যাওয়ায় অনিবার্য কমেছে গ্যাসের উত্তোলন। বিশেষ করে শীত মৌসুমে উৎপাদন যথেষ্ট হ্রাস পায়। অতঃপর চাহিদা মেটাতে হয় বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে। এর জন্য অবশ্য টার্মিনাল স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে গ্যাস কোম্পানিগুলোর উচিত হবে অনতিবিলম্বে দেশব্যাপী তেল-গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করা। বাস্তবে বাংলাদেশ ও পেট্রোবাংলা তা করছে না। এ বিষয়ে তাদের দক্ষতা, কারিগরি সুযোগ-সুবিধা, সর্বোপরি সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সংস্থাটির অভ্যন্তরে অনিয়ম-অব্যবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতি আর্থিক লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে সময় সময়। তদুপরি বঙ্গোপসাগরের সীমানা নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও নিময়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে সুষ্ঠু ও সুচারু মীমাংসা হলেও রহস্যজনক কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুটি তেমন আগ্রহ-উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে আসছে না তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বিদেশী কোম্পানিগুলোও এক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অথচ প্রাকৃতিক সম্পদের অমিত সম্ভাবনাময় অঞ্চল বাংলাদেশ। তেল-গ্যাস আবিষ্কার ও উত্তোলনে দেশীয় কোম্পানিগুলোর দীর্ঘদিনের সেবা ও কর্মোদ্যোগের ব্যাপারটি স্বীকার্য। সরকার ব্যাপেক্স ও পেট্রোবাংলাকে তেল-গ্যাস আহরণের ব্যাপারে আরও শক্তিশালী করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে যে সব জায়গায় দেশীয় কোম্পানিগুলোর অভিজ্ঞতায় প্রযুক্তিগত ঘাটতি রয়েছে, সেখানে বিদেশী সংস্থাকে সহযোগী শক্তি হিসেবে বিবেচনায় আনা যেতে পারে। যেমন- দুর্গম পার্বত্য এলাকা এবং সমুদ্রের তলদেশে তেল-গ্যাস উত্তোলনে বিদেশী সংস্থাকে এনে সমন্বিতভাবে কাজে লাগানোই সঙ্গত। আশি ও নব্বইয়ের দশকে সরকার গৃহস্থালির কাজে গ্যাস সরবরাহ করতে বিশেষ উদ্যোগী ছিল। ফলে বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ পারিবারিক জ্বালানি সঙ্কট মেটালেও এর অপব্যবহারে গ্যাসের মজুদ ক্রমান্বয়ে কমে আসতে থাকে। নতুন গ্যাস উৎপাদনেও নানাবিধ সঙ্কট মোকাবেলা করতে হয়। ফলে সিলিন্ডার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে। একবিংশ শতাব্দীর সূচনাকাল থেকে শিল্প-কারখানায় বিদ্যুত সরবরাহে গ্যাসের প্রয়োজনীয়তা বাড়তে থাকলে এর অপ্রতুলতায় সরকার বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ প্রায় বন্ধ করে দেয়। নতুন করে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে শুধু এলএনজি আমদানিনির্ভর হলেই সঙ্কট মিটবে না বরং দেশীয় গ্যাস কোম্পানিকে প্রযুক্তিগত ও অভিজ্ঞতার আলোকে আরও যুগোপযোগী করতে হবে। শিল্পোন্নত দেশ জাপানের মিতসুই অয়েল এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি বাংলাদেশের ৮ এবং ১১নং ব্লক থেকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি। তবে বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞরা বলছেন, বাপেক্সের মতো শক্তিশালী কোম্পানি থাকতে দেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া নিজেদের স্বার্থেই জরুরী। গ্যাস সঙ্কট মোকাবেলায় বসতবাড়িতে সরবরাহের বিষয়টিও ভাবনার বিষয়। আমদানিকৃত সিলিন্ডার গ্যাসই রান্নার যথার্থ সহায়ক জ্বালানি হওয়া বাঞ্চনীয়। এর পাশাপাশি সমুদ্রসহ দুর্গম পার্বত্য এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী কারিগরি সহায়তা নিতে হবে। দক্ষ ও সক্ষম মানবসম্পদের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের অভিজ্ঞতা এবং কর্মক্ষমতাকে এক সঙ্গে জোরালোভাবে মেলাতে হবে। তাই তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অহেতুক বিলম্ব ও সময়ক্ষেপণ কাম্য নয়।
×