মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অবশেষে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। শীর্ষ ৪৩ পেঁয়াজ আমদানিকারককে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ, পাইকারি বাজারে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্চমূল্য ও মজুদবিরোধী অভিযান এবং আকাশ ও সমুদ্র পথে যুগপৎভাবে সরকারী-বেসরকারী আমদানির পেঁয়াজ আসতে থাকায় বাজারে প্রভাব পড়েছে। এর ফলে ভোগ্যপণ্যের একক বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মঙ্গলবার বিকেল থেকে দাম কমা শুরু হয়েছে। বুধবার দাম আরও হ্রাস পেয়েছে। বুধবার বিকেলে প্রাপ্ত বাজারের তথ্য অনুযায়ী মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ১৬০, চীনের পেঁয়াজ ১শ’ টাকা এবং ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে। তবে খুচরা পর্যায়ে দাম কমছে ধীরগতিতে। কেননা, উচ্চমূল্যে যারা পেঁয়াজ কিনেছে তারা পাইকারি পর্যায়ে হ্রাস পাওয়া মূল্যে বিক্রি করে ক্ষতি গুনতে নারাজ। আগে কেনা পেঁয়াজ বেচা শেষ হয়ে গেলে কমে যাওয়া মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হতে বিলম্ব হবে না বলে খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে।
এদিকে, কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট থেকে চলতি মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৪৩ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়ে এসেছে। অনুরূপভাবে সমুদ্র পথে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপের আমদানির পেঁয়াজ বোঝাই জাহাজও মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের বিএসএম গ্রুপের ২০ কন্টেনারে এসেছে ৫৮০ টন। এ গ্রুপটি মোট ৮শ’ টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খুলেছে। অবশিষ্ট পেঁয়াজ আসার পথে রয়েছে বলে বিএসএম গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে। এ গ্রুপটি পেঁয়াজ আমদানি করেছে চীন থেকে। এছাড়া ঢাকার মেঘনা গ্রুপও পেঁয়াজ আমদানি করেছে। এ গ্রুপের পেঁয়াজ বোঝাই জাহাজ মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। এ জাহাজটিতে ৩০ কন্টেনারে ৮শ’ টন পেঁয়াজ রয়েছে। এ গ্রুপ পেঁয়াজ আমদানি করেছে তুরস্ক থেকে। উভয় গ্রুপের আমদানির পেঁয়াজ ইতোমধ্যে খালাস শুরু হয়েছে। এছাড়া ঢাকার সিটি গ্রুপও পেঁয়াজ আমদানি করেছে। অপরদিকে, চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের প্রায় ৫০ হাজার টন আমদানির পেঁয়াজ বিমানযোগে প্রতিদিন আসছে। এ পেঁয়াজ খোলাবাজারে বিক্রি করছে টিসিবি।
বাজার সূত্রে জানা গেছে, চীন, মিসর, তুরস্কসহ ১২ দেশ থেকে ১ লাখ টনেরও বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে। মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ এর বাইরে। ফলে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়ে এসেছে।
এ সপ্তাহে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের আমদানির পেঁয়াজ এসে পৌঁছতে থাকায় বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যেসব বেসরকারী শিল্প গ্রুপ বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানি করছে তারা মূলত পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নয়। সরকার পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দেশে বাজার পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে এসব গ্রুপ দ্রুততম সময়ের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানিতে নেমেছে। আর উল্লেখযোগ্য এ কারণেই গত মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দর হ্রাস পেতে শুরু করেছে। মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার দাম আরও কমে গেছে। আশা করা হচ্ছে, আজ বৃহস্পতিবার থেকে পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য আরও হ্রাস পাবে এবং ক্রমাগতভাবে অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবারের আমদানির পেঁয়াজ আসার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা কাস্টম হাউসের মাধ্যমে ১০৩, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে ৮৭ টন এবং টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ১ হাজার ৩শ’ মেট্রিক টন পেঁয়াজ খালাস হয়ে বাজারে পৌঁছেছে। পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে গড়ে ১০ লাখ টন আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মেটানো হয়। এছাড়া দেশে পেঁয়াজের উৎপাদনের পরিমাণ গড়ে ১৪ লাখ টন। এর মধ্যে উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায় বিক্রয় ও পরিবহন প্রক্রিয়ায়। প্রসঙ্গত, আমদানির ৯০ শতাংশ পেঁয়াজ এসে থাকে ভারত থেকে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যায়। পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে কেজি প্রতি ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। পেঁয়াজ হয়ে যায় সর্বত্র আলোচনার বিষয়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: