ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মরুভূমির বৈচিত্র্যময় প্রাণী

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৮ নভেম্বর ২০১৯

মরুভূমির বৈচিত্র্যময় প্রাণী

মরুভূমির বিরূপ ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশে বেঁচে থাকা প্রায় দুঃসাধ্যই বলা যেতে পারে। কিন্তু এমনও কিছু প্রাণী আছে যারা কি-না দীর্ঘকাল ধরে এমন বিরূপ ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশের মাঝেও নিজেদের খুব সহজভাবেই মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এমনই কিছু বৈচিত্র্যময় প্রাণী নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। লিখেছেন- মুনতাসির সিয়াম উট মরুভূমির প্রাণী বলতে সর্বপ্রথম আমরা উটকেই চিনি। মরুভূমিতে মূলত এক কুঁজ ও দুই কুঁজ বিশিষ্ট উট দেখা যায়। যাদের মধ্যে এক কুঁজ বিশিষ্ট উট দেখা যায় সাহারা মরুভূমিতে ও দুই কুঁজ বিশিষ্ট উট দেখা যায় মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার মরুভূমিগুলোতে। উটের একটি কুঁজে ৩৬ কেজি পর্যন্ত চর্বি সংরক্ষিত থাকে। মরুভূমিতে যখন খাদ্য সঙ্কট দেখা যায়, তখন উটেরা তাদের কুঁজে সঞ্চিত চর্বিকে পানি ও শক্তি হিসেবে রূপান্তর করে। এভাবেই উট প্রায় এক সপ্তাহ পানি পান না করেও বেঁচে থাকতে পারে। মরুভূমির সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গরমেও তাদের শরীর থেকে ঘাম বের হয় না। নাকের মাধ্যমে উট বাইরের বাতাস গ্রহণ করে এবং ভেতরের গরম তাপমাত্রা বের করে দিতে পারে। আবার, তাদের শরীরের ঘন লোম তাদের দিনের বেলায় প্রচন্ড গরমে শরীরকে ঠান্ডা ও রাতের বেলায় তীব্র শীতে শরীরকে গরম রাখতে সহায়তা করে থাকে। ডরকাস গ্যাজেল ডরকাস গ্যাজেল নামক হরিণ প্রজাতির এই প্রাণীটিকে মূলত সাহারা মরুভূমিতে দেখতে পাওয়া যায়। আকারে ছোট হলেও এরা মরুভূমির জলবায়ুর সঙ্গে নিজেদের একীভূত করে নিয়েছে। এমনকি ডরকাস গ্যাজেল দীর্ঘদিন পানি ছাড়াও বেঁচে থাকতে সক্ষম। দিনের বেলায় প্রচন্ড গরমে শরীরের পানিক্ষয় রোধে এরা ছায়াযুক্ত জায়গাগুলোতে বিশ্রাম নেয় এবং রাতের বেলায় খাবারের খোঁজে বের হয় সবসময়। মরুভূমির গাছপালা খেয়েই সাধারণত এদের জীবন কার্যক্রম সচল থাকে। অস্ট্রিচ পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার প্রাণী অস্ট্রিচ নামের এই পাখি। এরা সাধারণত ২.৫ মিটার উঁচু ও ৭০ থেকে ১৪৫ কিলোগ্রাম ওজন বিশিষ্ট হয়ে থাকে। শক্তিশালী ও লম্বা আকৃতির পায়ের জন্য মরুভূমির বালিতে দৌড়াতেও এদের কোন রকম সমস্যা হয় না। শরীরের পানির অভাব পূরণের জন্য এরা যেসব উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের থেকেই পানি শোষণ করে নেয়। তাছাড়া দীর্ঘদিন পানি ছাড়াও বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে এদের। যারজন্য মরুভূমির বিরূপ পরিবেশের মাঝেও খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পেরেছে অস্ট্রিচ। ফেনেক ফক্স সাহারা মরুভূমির প্রাণী ফেনেক ফক্স। শিয়াল প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট এই প্রজাতি দৈর্ঘ্যে ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার এবং ওজনের দিক থেকে প্রায় ১ কেজির মতো হয়। এদের গায়ের রং মরুভূমির বালির মতোই হয়ে থাকে। ফেনেক ফক্সের কান ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এই লম্বা কানের জন্য এদের শ্রবণ ক্ষমতা যেমন মারাত্মক হয়, তেমনি কানের সাহায্যে তারা তাদের দেহের অতিরিক্ত তাপমাত্রাও বের করে দিতে সক্ষম। আবার, রাতের বেলা তীব্র শীতে এরা নিজেদের শরীরের তাপমাত্রাও ধরতে রাখতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকার ফলে তীব্র শীতই হোক বা গরম, মরুভূমিতে খুব সহজেই টিকে থাকে এই প্রাণী। স্করপিয়ন মরুভূমিতে টিকে থাকার মতো সবধরনের বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান এই ভয়ঙ্কর মাত্রায় বিষাক্ত প্রাণীটির। যারমধ্যে অন্যতম ভাবে বলা যেতে পারে এদের বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতার কথা। মরুভূমিতে যখন খাদ্যের অভাব দেখা দেয় তখন তারা নিজেদের বিপাক ক্রিয়ার কার্যক্রম অদ্ভুত ভাবে ধীরগতি সম্পন্ন করে ফেলতে পারে। যার ফলে অল্প পরিমাণ আহার (পিঁপড়া, মাকড়সা বা অন্যান্য ছোট ছোট কীটপতঙ্গ) গ্রহণ করেও এরা বছরের পর বছর বেঁচে থাকে। আবার, সেই আহার থেকেই স্করপিয়ন নিজেদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণ করে থাকে। হর্নড ভাইপার উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকার মরুভূমির প্রাণী হর্নড ভাইপার। বিষাক্ত এই সাপের শরীর তুলনামূলক ভারি হয়ে থাকে। দৈর্ঘ্যরে দিক থেকে এরা ২ ফুটের মতো হয়। হর্নড ভাইপারের গায়ের রং বালির রঙের মতো হওয়ায় খুব সহজেই এরা মরুভূমির বালির মধ্যে নিজেদের আড়াল করে ফেলতে পারে। দিনের বেলা প্রচন্ড গরমে এই প্রাণী নিজেদের গভীর বালিতে লুকিয়ে রাখে, যেন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর এভাবেই এরা মরুভূমিতে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে বেঁচে থাকে।
×