ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় আসছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা

প্রকাশিত: ১১:৫২, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

বাধ্যতামূলক বীমার আওতায় আসছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অবশেষে বাধ্যতামূলকভাবে বীমার আওতায় আনা হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের। বিদেশে কাজ করতে গিয়ে কোন প্রবাসী মারা গেলে কিংবা দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে বীমা থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন প্রবাসী ও তার পরিবার। আর এ ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সী কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার সময় তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বীমার আওতায় আনা হচ্ছে। সেজন্য ‘প্রবাসী কর্মী বীমা নীতিমালা’ চূড়ান্ত করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, প্রবাসী বীমা নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ১৪ অক্টোবর আইডিআরএ থেকে নীতিমালাটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সী যেকোন বাংলাদেশী নাগরিক কাজের উদ্দেশে বিদেশ গেলে তাদের বীমার আওতায় আনা হবে। বিদেশে গিয়ে কোন প্রবাসী মারা গেলে কিংবা দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে প্রবাসী কিংবা তার পরিবারকে বীমা কোম্পানি থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এদিকে, বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, প্রবীসা বীমা চালু হলে এটা প্রবাসীদের জন্য একটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। এই বীমার মাধ্যমে প্রবাসীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি দেশের অর্থনীতিতে আরও গতিশীলতা আসবে। শেখ কবির হোসেন বলেন, প্রবাসী বীমা চালু হলে বীমা কোম্পানিগুলোও লাভবান হবে। এর মাধ্যমে বীমা কোম্পানির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। সবমিলিয়ে প্রবাসী বীমা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রবাসী বীমার উদ্দেশ্য ॥ ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশে এককোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন। এসব প্রবাসী বিদেশে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহত হয়ে দেশে ফিরছেন। এসব প্রবাসী বীমার আওতায় না থাকায় তারা কোন ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। প্রবাসীদের বীমার আওতায় আনা হলে প্রবাসীরা বিদেশে কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত কিংবা নিহত হলে বীমা কোম্পানি থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন। বীমা গ্রাহকের বয়স ও বীমার মেয়াদ ॥ বীমা গ্রহীতার বয়স ১৮ থেকে ৫৮ বছর হতে হবে। বীমার মেয়াদ হবে দুই বছর। তবে গ্রাহক ইচ্ছা করলে ২ বছর বিদেশ অবস্থানকালে নিজ অর্থায়নে আরও দুই বছরের জন্য নবায়ন করতে পারবেন। বীমার পরিমাণ ও প্রিমিয়াম ॥ বিদেশগামী কর্মীদের প্রয়োজনীয়তা ও আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে এ্যাকচুয়ারির মাধ্যমে দু’টি জীবন বীমা পরিকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পরিকল্পটির বীমা অঙ্কের পরিমাণ ২ লাখ টাকা। এই বীমার প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে ৯৯০ টাকা। অন্যদিকে দ্বিতীয় পরিকল্পটির বীমার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা, এর প্রিমিয়াম দুই হাজার ৪৭৫ টাকা। বিদেশগামী সব কর্মীদের জন্য প্রথম পরিকল্পটি বাধ্যতামূলক হলেও দ্বিতীয় পরিকল্পটি ঐচ্ছিক বলে বিবেচিত হবে। তবে উভয় বীমার ক্ষেত্রে মোট প্রিমিয়ামের ৫০০ টাকা দেবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। ফলে বিদেশগামী কর্মীকে ২ লাখ টাকার বীমায় প্রিমিয়াম দিতে হবে মাত্র ৪৯০ টাকা এবং ৫ লাখ টাকার বীমায় প্রিমিয়াম দিতে হবে ১ হাজার ৯৭৫ টাকা। প্রবাসীদের মৃত্যু ও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বীমা সুবিধা ॥ বীমা চলাকালীন যেকোন কারণে বীমা গ্রাহক মৃত্যুবরণ করলে বীমা গ্রহীতার বৈধ উত্তরাধিকারীকে বীমা অঙ্কের শতভাগ অর্থ পরিশোধ করা হবে। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে কোনো প্রবাসী দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে স্থায়ীভাবে পঙ্গু অথবা শারীরিকভাবে অক্ষম হলে ৯০ দিনের মধ্যে মৃত্যুসহ অন্যান্য ক্ষতি হলে নির্ধারিত বীমা অঙ্ক দেয়া হবে। আত্মহত্যা করলে কিংবা এইডস আক্রান্ত হলে বীমা সুবিধা পাবে না ॥ আত্মহত্যা অথবা ইচ্ছা করে ক্ষতিসাধন করলে কিংবা এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে কোন প্রবাসী মারা গেলে বীমা সুবিধা পাবে না। এছাড়াও বক্সিং কিংবা গাড়ি রেসিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দুর্ঘটনায় শিকার হলেও বীমার আওতায় আসবেন না প্রবাসী শ্রমিকরা। দুর্ঘটনায় স্থায়ী পঙ্গু ও সম্পূর্ণ অক্ষম হলে ॥ কোন প্রবাসী তার কর্মক্ষেত্রে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারালে কিংবা কবজির ওপর থেকে দুই হাত কাটা গেলে অথবা গেড়ালির ওপর থেকে দুই পা কাটা গেলে বীমা অঙ্কের শতভাগ পরিশোধ করা হবে। দুর্ঘটনাজনিত আংশিক অক্ষমতা ॥ কোন প্রবাসী বিদেশের কর্মক্ষেত্রে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেলে, কবজির ওপর থেকে এক হাত কাটা গেলে, গোড়ালির ওপর থেকে এক পা কাটা গেলে বীমার ৫০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করা হবে। এছাড়াও বীমা মেয়াদের মধ্যে কোন কর্মী আহত হলে এবং পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করলে তাকে মূল বীমা অঙ্কের শতভাগ পরিশোধ করা হবে। তবে বীমাগ্রহীতা দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী সম্পূর্ণ বা আংশিক অক্ষমতার জন্য কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকলে সেই পরিমাণ অর্থ বাদ দিতে হবে।
×