ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুর রহমান বয়াতী স্মরণে বাউল সন্ধ্যা

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 আবদুর রহমান বয়াতী স্মরণে বাউল সন্ধ্যা

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাউল সাধক আবদুর রহমান বয়াতীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন যেন বাউল মেলায় পরিণত হয়েছিল। মঙ্গলবার সারা বাংলাদেশ থেকে আসা অর্ধশতাধিক বাউলের উপস্থিতিতে আবদুর রহমান বয়াতী ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ স্মরণ সভা ও বাউল সন্ধ্যায় সভাপতিত্ব করেন কবি শাহীন রেজা। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন গানবাংলা টিভির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন রাজা। স্বাগত বক্তব্য দেন আবদুর রহমান বয়াতী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলম বয়াতী। প্রধান অতিথি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, বঙ্গবন্ধু সঙ্গীতকে ভালবাসতেন। বাউলেরা ছিল তার কাছের মানুষ। তিনি বলতেন, বাউল সঙ্গীতই প্রকৃত অর্থে প্রাণের সঙ্গীত। আবদুর রহমান বয়াতী সেই সঙ্গীতের একজন অমর স্রষ্টা। আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। বিশেষ অতিথি দেলোয়ার হোসেন রাজা বলেন, বাউল সঙ্গীতকে আধুনিকীকরণ করতে হবে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে গানবাংলা কাজ শুরু করেছে। আবদুর রহমান বয়াতী আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তার সঙ্গীতকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদেরই গ্রহণ করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে শাহীন রেজা বলেন, অবহেলিত বাউল সঙ্গীতকে তার যোগ্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি আবদুর রহমান বয়াতীর একান্ত স্বপ্ন একটি বাউল একাডেমি এবং বাউল ট্রাস্ট বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। কণ্ঠশিল্পী পলি রহমানের কণ্ঠে আবদুর রহমান বয়াতীর অমর সঙ্গীত ‘দে দে পাল তুলে দে’ গানটির মাধ্যমে শুরু হওয়া বাউল সন্ধ্যায় আবহমান বাংলার সেই চেনা সুর এবং দেহভঙ্গিতে হলভর্তি দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন বাউলরা। প্রবীণ বাউল শামসুল হক চিশতী ওরফে বেহায়া মন গেয়ে শোনান তার বিখ্যাত গান ‘যদি থাকে নসিবে’, সমীর বাউল গেয়ে শোনান আবদুর রহমান বয়াতীর অমর গান ‘মধু লোভে হাত বাড়াইলে’, ফকির মিলনের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় রহমান বয়াতীর আরও একটি অমর সঙ্গীত ‘আসবে যখন সমন জারি’, আয়নাল সাধু কণ্ঠে তুলে নেন ‘মাটির মানুষ যাবে একদিন’, ক্ষ্যাপা বুলবুল গেয়ে শোনান ‘পিরিতে কইরাছে পাগলিনী’ গানটি, রহমান বয়াতীর নাতি লতা দেওয়ানের কণ্ঠে সুর হয়ে বাজে তার দাদুর ‘মন আমার দেহ ঘড়ি সন্ধান করি’, সঙ্গীতা দেওয়ান গেয়ে শোনান ‘মা নেই যার সে বোঝে কত দুঃখ’ প্রভৃতি গান। আবদুর রহমান বয়াতীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আরও সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিদ্যুত বাউল, নয়ন বাউল, রতন সাধু, মানিক বাউল, আল আমীন বাউল, হীরা বাউল, রাখি শবনম বাউল, শম্পা রানী বাউল, রানী বাউল, শীলা বাউল, অর্পিতা দাস, সুমী বাউল প্রমুখ। সঙ্গীতানুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আলম বয়াতী। বাউল সাধক আবদুর রহমান বয়াতী স্মরণে আয়োজিত এ বাউল সন্ধ্যা পরম প্রভু ও মৃত্তিকার কাছাকাছি নিয়ে যায় শ্রোতাদের। তাদের মনে জাগায় ভাব ও ভক্তির আবেশ। মৃত্যুর তীব্র ঘ্রাণে তারা হয়ে পড়েন আচ্ছন্ন। সুরের বন্যায় ভাসতে থাকেন ক্রমশ।
×