ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাইকেল চড়ে তাবাসসুমের খারদুংলা জয়

প্রকাশিত: ১২:২৯, ৩০ আগস্ট ২০১৯

সাইকেল চড়ে তাবাসসুমের খারদুংলা জয়

বাংলাদেশী সাইকেল অভিযাত্রী জিনিয়া তাবাসসুম সম্প্রতি সাইকেল চালিয়ে খারদুংলা পাস জয় করেছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী মেয়ে যে কিনা সফলভাবে খারদুংলা পাস করলেন। জিনিয়ার আগে সাতজন খারদুংলা জয় করেছেন। ২০১৬ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে নিয়াজ মোর্শেদ খারদুংলা পাস জয় করেন। সমুদ্রপৃ থেকে আঠারো হাজার তিন শ’ আশি ফিট উঁচুতে এই খারদুংলা পাশ। যা কিনা এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের চেয়েও উঁচু। খারদুংলা জয় অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার ছিল। যাত্রাটা পথ মোটেও সহজ ছিল না। তাবাসসুম জানালেন, উঁচু-নিচু পথ। প্রতিকূল পরিবেশ। ঠা-া লেগে গেছে। জ্বর ও অনেক। তবুও সাইকেল চালানো বন্ধ করা যায়নি। লক্ষ্যে পৌঁছতে আমি ছিলাম দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম। কখনও মনোবল হারাইনি। তাবাসসুম মানালি থেকে সাইকেল চালিয়ে ১৮ হাজার ৩৮০ ফুট ওপরে খারদুংলা পাসে গিয়েছেন। পৃথিবীর উচ্চতম মোটরযান চলাচলের রাস্তা এটি। এই অভিযানে তার ছিলেন সঙ্গী হেদায়েতুল হাসান ফিলিপ আর সুইস নাগরিক এরডইন। এরডইন পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। অবসরের পরে তিনি এশিয়া ট্যুরে বেরিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ফুট ওপরে মানালি ছোট্ট এক পাহাড়ি শহর। শহরটি অবকাশ যাপন, প্যারাগ্লাইডিং, রাফটিংয়ের জন্য বিখ্যাত। তাবাসসুম বললেন, যে ধারণা নিয়ে খারদুংলার পথে গিয়েছিলাম। আসলে বাস্তবে তা অনেক কঠিন ছিল। তাবাসসুম বললেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে সাইকেলের প্যাডেলে পা রেখেছি। নাক দিয়ে কখনও কখনও হাল্কা রক্ত পড়ছিল। উচ্চতাজনিত সমস্যা তো ছিাই। একবার একধারে আট দিন নেটওয়ার্কের বাইরে ছিলেন তাবাসসুম। যখন দেশে ফিরলেন। বাবা রাগ করে প্রায় পনেরো দিন কথা বলেনি। আমার জন্য তাকে অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে। রাগ করলেও বাবাকে আমি ভীষণ ভালবাসি। বললেন তাবাসসুম। তার বাড়ি খুলনার দৌলতপুরে। থাকেন ঢাকার আজিমপুরে। ক্লাস ফাইভে পড়াকালীন প্রথম সাইকেল চালান তিনি। শুধু দেশের মধ্যেও তাবাসসুম প্রচুর এলাকা সাইকেলে ঘুরেছেন। তিনটি পার্বত্য জেলা সাইকেলে চষে বেড়িয়েছেন। মাত্র ১১ দিনে বাংলাবান্ধা থেকে টেকনাফ পাড়ি দিয়েছেন। ১১ দিনে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন তিনি। তখন তার সঙ্গে একজন মেয়ে সঙ্গী ছিল। অবশ্য টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সাইকেল ট্যুরে দুজন মেয়ে সঙ্গী ছিল। একাকি এবং গ্রুপের সাথে তিনি সাইক্লিং করেন। তার বেড়ানো রুটগুলোর মধ্যে আছে হালুয়াঘাট-কুয়াকাটা, ভোমরা তামাবিল, দর্শনা আখাউড়া, টেকনাফ তেঁতুলিয়া ইত্যাদি। তিনটি ক্রস কাট্রি রেকর্ড আছে তার ঝুলিতে। সাইক্লিংয়ে আগ্রহীদের তাবাসসুম রুট প্ল্যান দেন। তিনি বলেন, মানুষ অনেক কথা বলবে। সব কথা শুনতে নেই। আমি চাই আমাকে দেখে মেয়েরা এগিয়ে আসুক। তবে শখ আর পেশা যেন কেউ এক সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলে সেটা অন্যদের জন্য তাবাসসুমের পরামর্শ। অসম্ভব পরিশ্রমী তাবাসসুম খারদুংলা জয় করে বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে এনেছেন। তিনি মনে করেন প্রবল ইচ্ছা আর লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।
×