ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে আন্তঃজেলা ডাকাত দল গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১১:১২, ২৯ আগস্ট ২০১৯

র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে আন্তঃজেলা ডাকাত দল গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে ধরা পড়েছে আন্তঃজেলা ডাকাতদলের ৪ সদস্য। মঙ্গলবার গভীর রাতে তাদেরকে আশুলিয়া বাজারে আটক করা হয়। গত কোরবানি ঈদের সময় এক গরু ব্যবসায়ীর ডাকাতি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তাদের সন্ধান পায় র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলো আমজাদ হোসেন (৪৫), বাবুল হোসেন, উজ্জ্বল ও হেমায়েত। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনসহ মোট ৬ মোবাইল, হত্যাকা-ে ব্যবহৃত হাতুড়ি ও বেলুন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গত কোরবানির সময় নাটোর থেকে আগত গরু ব্যবসায়ী কলিম উদ্দিন ফকিরের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ডাকাতি করে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে। উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট নাটোর হতে ঢাকায় কোরবানির পশু নিয়ে আসা একটি ব্যবসায়ী দল তাদের পশু বিক্রি শেষে বাড়ি ফেরার উদ্দেশে মেরুল ব্ডাডা এলাকায় একটি ট্রাকে ওঠে। ডাকাত দল আগে থেকেই ওঁৎ পেতেছিল। তারা অস্ত্রের মুখে কলিমসহ অন্যদের কাছ থেকে পশু বিক্রির ১২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ডাকাতরা তাদেরকে হাত-পা বেঁধে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়াগামী মহাসড়কের বেড়িবাঁধ এলাকায় চলন্ত ট্রাক হতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় পশু ব্যবসায়ী মোঃ কলিম উদ্দিন ফকির (৫০) ডাকাত দলের হাতুড়িপেটা এবং ট্রাক থেকে ফেলে দেয়ায় তারা গুরুতর জখম হয়। তার সঙ্গী অন্য ব্যবসায়ীরা গুরুতর আহত কলিম উদ্দিন ফকিরকে নিকটস্থ টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় পশু ব্যবসায়ী দলের সদস্য বকুল আলী শেখ (২৩)বাদী হয়ে তুরাগ থানায় একটি ডাকাতি ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব-১’র একটি দল আশুলিয়া থানাধীন আশুলিয়া বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্যদের পাকড়াও করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামিরা বর্ণিত ডাকাতি ও হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা দিনের আলোতে নামমাত্র বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এই কুখ্যাত ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্যরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে ডাকাতির উদ্দেশে টার্গেট নির্ধারণ করে দলের অন্যদের খবর পাঠায়। সবশেষে সর্বসম্মতিক্রমে পরিকল্পিতভাবে তারা ডাকাতির ছক আঁকে এবং কার্য সিদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বিছিন্ন হয়ে যায়। ভিকটিমের অবস্থান ও পরিস্থিতি বুঝে তারা অভিনব সব কৌশল অবলম্বন করে থাকে। এই ভয়ঙ্কর ডাকাত দলটি এতটাই হিংস্র যে, তারা কাউকে হত্যা করতে সামান্যতম দ্বিধাবোধ করে না। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, কোরবানি ঈদের আগ মুহূর্তে নিজ নিজ এলাকার পশু ব্যবসায়ীদের টার্গেট করার উদ্দেশে এই দুধর্ষ ডাকাত দলের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা এলাকার পশু ব্যবসায়ীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত তথ্য নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করে একটি বড় টার্গেটের খোঁজ করতে থাকে। সবশেষ ডাকাত দলের সদস্য নাটোরের বাবুল হোসেন বর্ণিত পশু ব্যবসায়ীদের খোঁজ দেয়। তাদের টার্গেট করে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। আসামি বাবুল হোসেন কৌশলে পশু ব্যবসায়ী দলটিক অনুসরণ করে ঢাকায় আসে। সে ঢাকার পশুর হাটে ওই পশু ব্যবসায়ী দলটিকে অনুসরণ ও তাদের দৈনিক বেচাকেনার খোঁজখবর নিতে থাকে। সর্বশেষ গত ১০ আগস্ট ব্যবসায়ী দলটি তাদের সব পশু বিক্রি করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতিকালে আসামি বাবুল হোসেন তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। সে তাদের জানায়, তার জানাশোনা একটি ট্রাক আছে যেটাতে করে তারা স্বল্প খরচে বাড়ি ফিরতে পারবে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্য ঢাকায় একটি ট্রাক ভাড়া করে। আনুমানিক সাড়ে এগারোটায় পশু ব্যবসায়ী দলটিকে নিয়ে সে বাড্ডা থানাধীন মেরুল বাড্ডা বৌদ্ধ বিহারের বিপরীত দিকে অবস্থান করে। সেখানে পূর্ব পরিকল্পনা মতো ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্য ট্রাক নিয়ে আসে এবং তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে ডাকতে থাকে। ট্রাকটিতে পূর্বে থেকে ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্য যাত্রীবেশে উপস্থিত ছিল। ব্যবসায়ী দলটি তাদের গন্তব্য জিজ্ঞাসা করলে তারা একই গন্তব্য জানায়। এ সময় আসামি বাবুল হোসেন ব্যবসায়ী দলটিকে ট্রাকে ওঠার জন্য উৎসাহিত করে। তার কথামতো পশু ব্যবসায়ীরা সরল বিশ¡াসে অন্যদের সহযাত্রী ভেবে ট্রাকটিতে উঠে পড়ে। কিছু সময় পর ব্যবসায়ী দলটি ঘুমিয়ে পড়লে ডাকাত দলের সদস্যরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে তাদের ওপর আকসি¥ক আক্রমণ করে। তাদের একটি দল ব্যবসায়ীদের হাত-পা বাঁধার কাজ করে। অন্য একটি দল ট্রাকের পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে হইহল্লা করতে থাকে, যাতে আশপাশের গাড়ির আলো ভেতরে না পড়ে এবং কেউ ভিকটিমদের চিৎকার শুনতে না পায় এবং অন্য একটি দল লোহার হাতুড়ি ও বেলুন দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করে ভিকটিমদের নিকটে থাকা পশু বিক্রির ১২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। ডাকাত দলটি ভিকটিমদের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ট্রাকের পেছনের ডালা না খুলে চলন্ত অবস্থায় উপর থেকে রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়ে ফেলে দেয়। এ সময় কলিম উদ্দিন ফকির ডাকাতদলের অতিরিক্ত নির্যাতন ও ট্রাক থেকে ফেলে দেয়ার ফলে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। সবাইকে ট্রাক থেকে ফেলে দেয়ার পর ডাকাত দলটি গাবতলী চলে যায়। সেখানে ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি করে নিজ নিজ অবস্থানে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামি আমজাদ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে গাজীপুরের একটি গাম কোম্পানিতে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিল। সে গাড়ি চালানোর পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধকর্ম করে আসছে। তাদের এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫/২০ জন। সে এই দলের অন্যতম সদস্য সবুজের মাধ্যমে এই ডাকাত দলে যোগ দেয়। এর আগে সে এই ডাকাত দলের সঙ্গে ১০/১২ টির বেশি ডাকাতিতে অংশ নেয়। ডাকাতির কাজে সে মাত্র ১৪ হাজার টাকা পায় বলে স্বীকার করে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর আশুলিয়া থানায় একটি মামলা রয়েছে বলে জানায়।
×