ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গত অর্থবছরের ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি ৪২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়

রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১ আগস্ট ২০১৯

রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সদ্য সমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি ৪২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পাঁচ বছর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে (২০১৩-১৪) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। শুধু তাই নয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ, সেখানে পরের এই ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনের সম্মেলন কক্ষে এনবিআরের চেয়ারম্যার মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এসব তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজস্ব আহরণ নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলে থাকেন। কেউ কেউ বিষয়টির ভিন্নতর ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। কোনভাবেই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে মনে করেন। তবে আমরা মনে করি, অত্যন্ত সুকৌশলে ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছি।’ রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধির হার কম হওয়ার বিষয়ে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে সরকার বেশ কিছু বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অব্যাহতি দিতে হচ্ছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পরে অর্থনৈতিক কর্মকা- ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।’ কোন্ খাত থেকে কত অর্থ আদায় করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয়করে ৭২ হাজার ৮৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা মোট রাজস্বের ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ। ভ্যাট থেকে ৮৭ হাজার ৬১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা মোট রাজস্বের ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ। কাস্টমস থেকে ৬৩ হাজার ৩৮২ কোটি ১৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে এনবিআর, যা মোট রাজস্বের ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ মোট ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি ৮২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। টাকার পরিমাণে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও প্রবৃদ্ধির হারে তা গত পাঁচ বছরের মধ্যে কম। এনবিআরের তথ্য মতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ২৮ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কারণ হিসেবে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, গত অর্থবছরের ভ্যাটের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু খাতে যেমন গ্যাস, ইন্টারনেট, রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প, সোলার মডিউল, ট্রাভেল এজেন্ট, বেবী লোশন, হাওয়াই চপ্পল ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশে প্রায় ১৫ হাজার ১৯২ কোটি ৬ লাখ টাকার ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কাস্টমসের ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতি, ব্যাগেজ রুলস, মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং, পোল্ট্রি রিলিফ গুডস, শিপ, বেজা ও কূটনৈতিক মিশনে প্রায় ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকার আমদানি শুল্ক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন পাস হয়েছে। জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন আইন বাস্তবায়ন হওয়ার ফলে ভ্যাট আদায় বাড়বে। এজন্য ইএফডি ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এরইমধ্যে ইএফডি কিনতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী ২ বছরের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ইএফডি বসানো হবে। এতে রাজস্ব আহরণ বাড়বে। একইসঙ্গে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে এনবিআর তৎপর হয়েছে। ফাঁকিবাজ বন্ড প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ভ্যাট ও শুল্ক ফাঁকি রোধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে। বাজেট বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এবার ১ কোটি নতুন করদাতা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে এনবিআর ৬ লাখ ৭২ হাজার নতুন করদাতাকে করনেটে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। এজন্য ২১৩টি জরিপ টিম গঠন করা হয়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৫টি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাপ্ত জরিপের ভিত্তিতে ৩ লাখ ৩১ হাজার ২৭২ টিআইএন বরাদ্দ করে আয়কর নির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে কর মামলা নিষ্পত্তি করে প্রায় ২৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ১০৪ টাকা কর আহরণ করা হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ এনবিআরের মাধ্যমে আহরিত হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা এনবিআরকে আহরণ করতে হবে। যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বেশি। এনবিআর আশা করছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাজস্ব আহরণে এনবিআর এগিয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৬ হাজার ১৮১ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। আর এনবিআর এই সময়ে রাজস্ব আহরণ করেছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। তবে আরও ২-১ হাজার কোটি টাকা বাড়বে বলেও এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
×