ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গুজবের বিরুদ্ধে সারাদেশে মাইকিং, সভা সমাবেশ

প্রকাশিত: ১০:০৭, ২৬ জুলাই ২০১৯

  গুজবের বিরুদ্ধে সারাদেশে মাইকিং, সভা সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুজব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সারাদেশে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া বাজার, ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সভা সমাবেশ চলছে। পাশাপাশি গুজব ছড়ানোর মাস্টারমাইন্ডদের গ্রেফতারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। দুবাই থেকে প্রথম গুজবের পোস্ট দেয়া সরকারবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে দুবাই পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ যোগাযোগ রাখছে। গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতারকৃত ১০৩ জনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অতীতের মতো গুজব ছড়িয়ে দেশে সুপরিকল্পিতভাবে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। পুরো এই প্রক্রিয়াটির সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-শিবির এবং কোন কোন জেলায় জঙ্গী সংগঠনগুলো নেপথ্যে কাজ করছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য মিলেছে। প্রায় দেড় মাস আগ থেকে গুজব ছড়ানোর পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর পিলার পানির নিচ থেকে দৈত্যাকার দানব ওঠে গিলে খাচ্ছে বলে প্রথম ইউটিউবে কাল্পনিক ভিডিও ছাড়া হয়েছিল। সেই সব দানব শিশুদের মাথা খাওয়ার পর শান্ত হবে। দানবরা শান্ত না হলে পদ্মা সেতু হবে না। এমন প্রচার প্রোপাগান্ডা চালানোর ধারাবাহিক-তায়ই পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে বলে গুজব ছড়ানোর সূত্রপাত হয়। আর সেই মাথা যোগাড় করতে সারাদেশে ছেলেধরা নেমেছে বলে প্রচার চালায় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীটি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে পুরো এক সপ্তাহ সারাদেশের প্রতিটি ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ্যাসেম্বলি ক্লাসের আগে গুজব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের তরফ থেকে বক্তব্য দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের অন্তত শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন কর্মকা- চালানো হয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও তার আশপাশের এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। শুক্রবার খুতবার আগে গুজব সংক্রান্ত বয়ান দেবেন ইমামরা। গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দেয়া ৬০ ফেসবুক একাউন্ট, ২৫টি ইউটিউটব একাউন্ট ও ১০টি অনলাইন পোর্টাল আবার চালু করে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজরদারি চলছে। বন্ধ করে দেয়া এসব সংস্থার কোন তৎপরতা হয়েছে। আগে যেমন গ্রামের হাট বাজারে ঢোল বা টিন পিটিয়ে মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে বার্তা দেয়া হতো। এবার মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি হাট বাজারে ছোট ছোট পথসভা করে গুজবে কান না দিতে মানুষকে সচেতন করার কাজ চলছে। প্রতিটি থানায় স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ওঠান বৈঠক করে গুজবের বিষয়ে মানুষকে সতর্ক থাকতে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তাতে জনপ্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে চলছে লিফলেট বিতরণ। দর্শনীয় জায়গায় লিফলেট লাগানো হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক সোহেল রানা জনকণ্ঠকে বলেন, গুজবের প্রথম পোস্ট দেয়া দুবাই প্রবাসী সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী সেই ব্যক্তির অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের তরফ থেকে দুবাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। গুজব সংক্রান্ত যেকোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে জাতীয় জরুরী সেবা ট্রিপল নাইনে ফোন করলেই সেখানে পুলিশ পৌঁছে যাবে। এ বিষয়ে পুলিশকে আগাম নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গুজবের বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত মাস্টারমাইন্ডসহ তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেসব ফেসবুক ও ইউটিউবসহ অন্যান্য একাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোকে শনাক্ত করা হচ্ছে। শনাক্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই চালানো হচ্ছে অভিযান। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যেই গুজবের মাস্টারমাইন্ডরা গ্রেফতার হবে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস আগ থেকেই দেশে গুজব ছড়ানোর কাজটি চলছিল। তবে বিষয়টি মানুষের মধ্যে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারছিল না। প্রথম তারা ইউটিউবে একটি ভিডিও তৈরি করে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, পদ্মা সেতুর একেকটি পিলার পানির নিচ থেকে ওঠে আসা কাল্পনিক দানব গিলে খাচ্ছে। প্রায় মাসখানেক ইউটিউবে সেই দৃশ্য দেখানো হয়। দানবগুলো পদ্মা সেতু নির্মাণে বড় বাধা বলে প্রচার করা হয়। এরপর এই দানবগুলো সম্পর্কে ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এসব দানবকে শান্ত রাখতে নিষ্পাপ শিশুদের মাথা লাগবে বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়। মাসখানেক এমন প্রচার চালানোর পর আস্তে আস্তে তা মানুষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে। সেই ধারাবাহিকতায়ই পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা বিশেষ করে শিশুদের মাথা লাগবে বলে রীতিমতো গুজব ছড়ানো হয়। আর শিশুদের মাথা যোগাড় করার জন্য ছেলেধরা নামিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও গুজব রটানো হয়। ছেলেধরারা শিশুদের মাথা কেটে নিয়ে পদ্মা সেতুতে দিচ্ছে। সেই মাথা খাওয়ার পর পানির নিচে থাকা কিছু কিছু দানব শান্ত হয়। অত্যন্ত কৌশলে এমন গুজব রটিয়ে দেয়া হয়। এরপরই মানুষের মধ্যে ছেলেধরা আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে ছেলেধরা আতঙ্ক থাকার কারণে কোন মা বা পিতা তাদের শিশু সন্তানকে সন্দেহভাজন কোন পুরুষ বা নারী আদর করলে বা কোলে নিলেই তারা ভয়ে ছেলেধরা বলে সন্দেহ করছেন। চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। আর তখনই গণপিটুনিতে মানুষ হত্যার ঘটনাগুলো ঘটছে। পুরো বিষয়টিই পরিকল্পিত। প্রথমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এরপর গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতরা তাদেরই লোকজন দিয়ে হাঁকডাক দিয়ে গণপিটুনির পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এভাবেই সারাদেশে এখন পর্যন্ত এভাবেই ৮ জন নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে ছেলেধরা বলে গুজব রটিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গুজবের বিষয়ে সারাদেশে নজরদারি বাড়ানোসহ কৌশলী পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ও র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান। তিনি বলছেন, গুজবের শেকড় খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। পুরো প্রক্রিয়াটির নেপথ্য কারিগরদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে।
×