ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যে কোন দিন রায়

আমৃত্যু কারাবাসের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষ

প্রকাশিত: ১১:৫১, ১২ জুলাই ২০১৯

 আমৃত্যু কারাবাসের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমত্যু কারাবাসের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি)রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। এর আগে এই রিভিউ পিটিশনের ওপর দীর্ঘ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত ১১ এপ্রিল এ বিষয়ে আইনী মতামত নেয়ার জন্য চার আইনজীবীকে এ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ দেয় আপীল বিভাগ। এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এ্যাডভোকেট এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, এ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান ও এ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চোধুরীর মতামত শুনেছে আদালত। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও শিশির মুহাম্মদ মনির। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। পরে আইনজীবী শিশির মুহাম্মদ মনির সাংবাদিকদের জানান, রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষ করে আদালত রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছে। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০১ সালে সাভারে জামান নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একটি হত্যা মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে ২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর রায় দেয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপীল করেন। তাদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড অনুমোদন) শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। শুনানি নিয়ে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায়ে দুজনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপীল করেন। এরপর ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আপীল বিভাগের দেয়া রায়ে দুই আসামির মৃত্যুদন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে আদালত যাবজ্জীবন মানে আমত্যু কারাবাসসহ সাত দফা অভিমত দেয়। আপীল বিভাগের দেয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামি আতাউর মৃধা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল আপীল বিভাগে এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ৯২ পৃষ্ঠার ওই রায়ে বলা হয়, দন্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী দোষী ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে দন্ডি হবে, এটাই বিধান। এক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদন্ডটা হচ্ছে ব্যতিক্রম। যখন এ ধরনের পরিস্থিতিতে কাউকে মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয় তখন অবশ্যই এর কারণ উল্লেখ করতে হয়। দন্ডবিধির ৫৩ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদন্ডের অর্থ ৪৫ ধারার সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদন্ড। রায়ে বলা হয়, যদি হাইকোর্ট বিভাগ বা এই আদালত (আপীল বিভাগ) মৃত্যুদন্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করে তখন এবং নির্দেশ দেয় যে, তার স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত এই কারাদন্ড ভোগ করবে, তখন এ ধরনের মামলায় সাজা কমানোর আবেদন গ্রাহ্য হবে না। দন্ডবিধির ৫৭ ধারা সেখানেই প্রযোজ্য হবে যেখানে সর্বোচ্চ দন্ড হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এ ধরনের বিধান যদি করা হয়, তখন সাজার ভগ্নাংশ গণনা করাটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সাজা কমানোর (রেয়াত প্রদান) ক্ষেত্রে কারাবিধি প্রশাসনিক আদেশ হিসেবে বিবেচিত। মৃত্যুদ- অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মামলায় কোন আদালত বিচারের প্রাথমিক পর্যায়ে আসামি যদি দোষ স্বীকার করে, তখন সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে আদালত বা ট্রাইব্যুনাল নমনীয় দৃষ্টিতে দেখতে পারে। কিন্তু এ ধরনের মামলায় আদালতকে নিশ্চিত হতে হবে আসামি জেনে বা বুঝে দোষ স্বীকার করেছে কিনা। আদালত মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দন্ড দিতে বাধ্য থাকবে না। এবং এই আদালত (আপীল বিভাগ) বা হাইকোর্ট বিভাগ কোন সাজা দিলে তা ক্ষমা করা, বাতিল করা বা দন্ড কমানো বা সাজা কার্যকরে বিলম্ব করতে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে দেয়া ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি প্রয়োগ করতে পারবেন। আইনবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এটিই বোধহয় ফৌজদারি মামলায় প্রথম কোন আসামির আমৃত্যু কারাদন্ডের রায়। এর আগে কোন ফৌজদারি বা হত্যা মামলায় কোন আসামিকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হয়নি।
×