ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অস্ত্রোপচারের তিন মাস পরও স্কুলছাত্রের জ্ঞান ফেরেনি !

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ১২ জুলাই ২০১৯

  অস্ত্রোপচারের তিন মাস  পরও স্কুলছাত্রের জ্ঞান ফেরেনি !

সংবাদদাতা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ, ১১ জুলাই ॥ শিশু সিয়ামের বয়স আট। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। এই অল্প বয়সেই তার মাথায় করা হয়েছে দুইবার অস্ত্রোপচার। এতেও যেন তার দুর্যোগ কাটছে না। অস্ত্রোপচারের তিন মাস কেটে গেলেও এখনও তার জ্ঞান ফিরেনি। তিনমাসের মধ্যে একবারের জন্যও খোলেনি তার চোখ। চিকিৎসক জানিয়েছে আরেকটি অপারেশন করতে হবে। কিন্তু এতেও তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এদিকে কখন জেগে উঠবে বুকের ধন এই প্রতীক্ষায় দিন-রাত শিয়রের পাশে বসে আছে মা। ছেলের দু’চোখ বন্ধ থাকায় ভিজে গেছে মায়ের চোখ। আর বাবা অর্থ যোগাতে না পেরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। সিয়ামের বাড়ি উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনা গ্রামে। জানা গেছে, দরিদ্র সব্জি বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিন ও হাদিছা বেগমের শিশুপুত্র সিয়াম। সে স্থানীয় মেরাকোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এ বছরের শুরুতেই সিয়াম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তীব্র মাথাব্যথায় অস্থির হওয়ার পাশাপাশি বমি করা শুরু করে। স্থানীয় চিকিৎসকদের ওষুধ খেয়ে কিছুটা ভাল হলেও পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ১২ ফেব্রুয়ারি নিউরোসার্জারি বিভাগে তাকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির সাত দিন পর নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ইউনিট চীফ ডাঃ সুকৃতি দাস এবং সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ এলিনা শাহনাজের তত্ত্বাবধানে সিয়ামের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ৪ মার্চ পরিবারের লোকজন তাকে সুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু এক মাস পর সিয়ামের মাথায় আবার তীব্র যন্ত্রণা দেখা দেয়। এতে সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। সিয়ামের বাবা গিয়াস উদ্দিন জানান, ৬ এপ্রিল ছেলেকে নিয়ে তিনি আবারও ঢাকায় যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা সিয়ামের মাথায় টিউমার হওয়ার কথা জানায়। তখন বাড়ি এসে শেষ সম্বল ১০ শতক জমি বিক্রি করে সিয়ামের মাথায় দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচার করান। দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের পর থেকে সিয়ামের জ্ঞান ফিরেনি। ২৪ দিন আইসিইউ থাকার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অচেতন সিয়ামকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করে। অর্থ ফুরিয়ে গেলে এক সময় বাধ্য হয়ে তিনি অজ্ঞান ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। এ অবস্থায় ২৮ জুন সিয়ামকে ময়মনসিংহের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিউরো ও স্পাইন সার্জন ডাঃ সৌমিত্র সরকারকে দেখানো হলে তিনি পূর্বের চিকিৎসাপত্র দেখে সিয়ামের আরও একটি অপারেশন করার পরামর্শ দেন। বৃহস্পতিবার সকালে সিয়ামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিশু সিয়ামকে ঘরের বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। নাকে ও প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তায় লাগানো রয়েছে নল। পাশেই বসে আছে মা হাদিছা। এ সময় কান্নাজরিত কণ্ঠে হাদিছা জানায়, তিনি আশায় আছেন। যে কোন সময় চোখ খোলবে ছেলে। তাই তিনি সারাক্ষণ ছেলের পাশেই বসে থাকেন।
×