ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোমবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এ নিয়েই চিন্তা

বোলিং নিয়েই যত ভাবনা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৯:২১, ২৩ জুন ২০১৯

বোলিং নিয়েই যত ভাবনা বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ ক্যাচ মিস খেলার অংশ। ফিল্ডিংও মাঝে মাঝে মিস হতে পারে। কিন্তু বোলিংটা করতে হয় একটানা। দুর্দান্ত আরেকটি ক্যাচ নিয়ে দুঃখ ভোলানো যায়। অসাধারণ ফিল্ডিং করেও হাততালি মিলতে পারে। কিন্তু টানা বোলিংয়ে খারাপ হতে থাকলে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে জেতা কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের বেলাতেও তাই হচ্ছে। সোমবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাউদাম্পটনে খেলতে নামার আগে এই বোলিং নিয়েই যত ভাবনা বাংলাদেশের। সেমিফাইনালে ওঠার পথ এখনও খোলা আছে। একদম বন্ধ হয়ে যায়নি। সামনে যে আফগানিস্তান, এরপর ২ জুলাই ভারত ও ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ রয়েছে, ম্যাচগুলো জিততে পারলে সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ তৈরি হতে পারে। কিন্তু এই ম্যাচগুলো জিততে হলে বাংলাদেশ যে ব্যাটিংটা অসাধারণ করছে, এর সঙ্গে বোলিংটাও হতে হবে দুর্দান্ত। তা না হলে হার কপালে জুটতে পারে। তখন শেষ চারে খেলার সম্ভাবনাও তৈডর করতে পারবে না বাংলাদেশ। বোলিং নিয়ে আরও বেশি করে আফসোস যোগ হবে। ব্যাটিংটা বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে অসাধারণ করছে। তা সবাই দেখছে। যে পাঁচটি ম্যাচের বল মাঠে গড়িয়েছে, তিনটিতেই ৩০০ রানের গ-ি ছড়িয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিু আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩০ রান করে ২১ রানে জিতেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রানের টার্গেট ৫১ বল বাকি থাকতেই করে ফেলেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৮২ রানের টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে ৩৩৩ রান করেছে। বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে এবং ব্যাটিং দিয়ে লড়াই করে প্রশংসাও কুড়াচ্ছেন টাইগাররা। এবারই প্রথম বিশ্বকাপ, যেখানে বাংলাদেশের তিনটি (সাকিব দুটি, মুশফিক একটি) সেঞ্চুরি হয়েছে। কিন্তু বোলিংটাই ডুবাচ্ছে। দক্ষিু আফ্রিকার বিপক্ষে জেতা ম্যাচে যেমন ৩৩০ রান করেও স্বস্তি মিলেনি। প্রোটিয়ারা ৩০৯ রান পর্যন্ত করে ফেলে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেটে হারা ম্যাচে অবশ্য ২৪৪ রান করেও জেতার আশা তৈরি করে বাংলাদেশ। কিন্তু বোলিংটা আরও ভাল হলে হয়তো জেতাও যেত। ইংল্যান্ড যে ৩৮৬ রান করে ১০৬ রানে জিতে ফেলল, সেটিতো বোলারদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই। ওয়েস্ট ইন্ডিজও ৩২১ রান করে আতঙ্ক তৈরি করে দিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াকে ৩৫০ রানে যদি বাধা থাকতো তাহলে ম্যাচও জিতে যেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু ৩৮১ রান করে। যা অনেক রান। এই রান অতিক্রম করা কঠিনই। বোলাররা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে পারছেন না। তাতে শক্তিশালী দলগুলো অনেক রান করে ফেলাতে শত চেষ্টাতেও ব্যাটিং দিয়েও জেতা যাচ্ছে না। এবার বিশ্বকাপে খরুচে বোলারের তালিকায় তাই বাংলাদেশের বোলাররা ওপরের দিকেই আছেন। রুবেল হোসেনকে নিয়ে এত আলোচনা হয়েছে। তাকে একাদশে রাখা উচিত। কত কথা! যখন সুযোগ পেলেন, তখন খরুচে বোলারের তালিকায় বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে শীর্ষস্থানটি তারই হলো। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯ ওভারে ৮৩ রান দিয়ে ফেললেন। রুবেলের পরে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে এই ব্যর্থ তালিকায় আছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ ওভারে ৭৮ রান)। দলের সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু তিনিও ৯ ওভারে ৭৫ রান দিলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এত বেশি রান দিয়েছেন মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজের পরে আরেক ম্যাচে সাইফউদ্দিনের (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৭২ রান) কপাল পুড়েছে। সেই তালিকা থেকে সাকিব আল হাসানও (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৭১ রান) বাদ যাননি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আবার মুস্তাফিজ (৯ ওভারে ৬৯ রান) দলের খরুচে বোলার হয়েছেন। মাশরাফি বিন মর্তুজাও সেই তালিকায় রয়েছেন (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৬৮ রান)। মুস্তাফিজের অবস্থা খুবই করুণ। তিনি তিনটি ম্যাচে ৭০ রানের কাছে দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পিঠের ব্যথায় না খেলা সাইফউদ্দিনও কম নন। তিনিও দুটি ম্যাচে ৭০ রানের ওপরে দিয়েছেন। শুক্রবার পর্যন্ত মুস্তাফিজতো এবার বিশ্বকাপে ৪৪.১ ওভার বল করে সবচেয়ে খরুচে বোলারও ছিলেন। ৫ ম্যাচ খেলে ৭.২০ ইকোনমিতে সর্বোচ্চ ৩১৮ রান দিয়েছেন। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে দলের সেরা বোলারদেরই যদি এমন করুণ অবস্থা হয় তাহলে কিভাবে দল ভাল করবে? খরুচে বোলার দেশের তালিকার ব্যর্থতায় এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশই (৬.৫৭ ইকোনমি) সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। শুধু কী ব্যাটিং দিয়েই সব ম্যাচ জেতা যায়? অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যান মাইক হাসি যেমন ধারাভাষ্যে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে প্রশংসা করেছেন। তিনি বাংলাদেশের ব্যাটিংকে অস্ট্রেলিয়ার সমমানের বলেছেন। কিন্তু বোলিং নিয়ে তারও হতাশা আছে। বাংলাদেশের বোলিংটা আরও ভাল করতে হবে বলেই মনে করছেন হাসি। তিনি বলেছেন, ‘আপনি যদি দুটি (বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া) দলকে পাশাপাশি রাখেন তাহলে দেখবেন, বাংলাদেশের ব্যাটিং এতটাই উন্নতি করেছে যে, সেটা প্রায় অস্ট্রেলিয়ার সমমানের হয়ে গেছে। তবে দু’দলের মূল পার্থক্যের জায়গাটা হলো বোলিংয়ে। বাংলাদেশ যদি বোলিংয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারে, আগামী কয়েক বছরে এই জায়গাটায় আরও উন্নতি করতে পারে, কয়েকজন বিস্ময়কর স্পিনার ও গতিময় পেসার খুঁজে বের করতে পারে, আমি বিশ্বাস করি যে, তারা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরাদের কাতারে উঠে যাবে।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আসলে বাংলাদেশও এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। শনিবার ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। স্পিনাররাই ভারত ব্যাটসম্যানদের ছন্নছাড়া করে দেন। রশীদ খান একদিকে চাপ তৈরি করেন। আরেকদিকে মুজিব জাদরান, মোহাম্মদ নবী, রহমত শাহরা উইকেট নিতে থাকেন। এর আগে শ্রীলঙ্কাকেও (২০৭ রানে অলআউট) কাঁপিয়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান। দুর্বল দল আফগানরা। বিশ্বকাপে তারাই পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে আছে। কিন্তু এরপরও আফগানিস্তানকে হাল্কাভাবে নেয়ার কোন সুযোগই নেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানরা এখন যেন কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে! হারলে যে সমালোচনায় বিঁধতে হবে। জিতলে আবার বিশেষ কোন সাধুবাদ মিলে না। কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট যে পর্যায়ে গেছে, সেই পর্যায় থেকে আফগানিস্তানকে না হারানোই যে অপরাধ ধরা হয়! আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটির আগে তাই বিশেষ সতর্ক থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সেই সতর্কের মধ্যে সবার আগে থাকছে বাংলাদেশের বোলিং। এই বিভাগটি নিয়েই এখন যত ভাবনা আছে বাংলাদেশের।
×