ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ দিদারুল আহসান

এ্যালার্জি কেন হয়?

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১৮ জুন ২০১৯

এ্যালার্জি কেন হয়?

এ্যালার্জি একটি সর্বজনীন বহুল প্রচলিত শব্দ। কিন্তু এই এ্যালার্জি সম্পর্কে সঠিক ধারণা কিন্তু আমাদের অনেকেরই নেই। শ্বাসকষ্ট, এক্জিমাসহ বহু চর্মরোগেরই কারণ হচ্ছে এলার্জি। তাই এলার্জি সম্পর্কে আমাদের ধারণা রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। সচরাচর নির্দোষ বলে গণ্য কোন জিনিস যদি শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি কর তবে তাকে এ্যালার্জি বলা হয়। যেসব দ্রব্য এ্যালার্জি সৃষ্টি করে তাকে বলা এ্যালারজেন বা অন্টিজেন এবং এসব দ্রব্য দেহে প্রবেশের ফলে দেহের অভ্যন্তরে যে দ্রব্য সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় অন্টিবডি। এ্যান্টিজেন ও এ্যান্টিবডি পরস্পর মিলিত হলে যে প্রতিক্রয়া সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় অন্টিজেন-এ্যান্টিবডি বিক্রিয়া। হাঁপানির সঙ্গে এ্যালার্জির গভীর সংযোগ আছে। ফুলের পরাগ, দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রংয়ের গন্ধ, চুনকাম, ঘরের ধুলা, পুরনো ফাইলে ধুলা, দেহে এ্যালার্জিক বিক্রিয়া করে হাঁপানির রোগের সৃষ্টি করে। কাজেই যাঁরা হাঁপানিতে ভুগছেন তাঁদেরকে এগুলো পরিত্যাগ করে চলতে হবে। ছত্রাক দেহে এ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টি করে। ছত্রাক হচ্ছে অতিক্ষুদ্র সরল উদ্ভিদ। ছত্রাক ২০ সেঃগ্রেঃ থেকে ৩২ সেঃ গ্রেঃ উত্তাপে জন্মে, ভেজা পদার্থে এই ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। আবার কোন কোন খাদ্য ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়ে থাকে। পনিরে ছত্রাক মিশিয়ে তৈরি করা হয়। কোন কোন পাউরুটি এবং কেক তৈরি করাতেও yeast জাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। আলু, পেঁয়াজও ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়। এই ছত্রাক ও এ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ। ঘরের ধুলা হাঁপানি জনিত এ্যালার্জির জন্য একটি অন্যতম কারণ। ধুলাতে একটি ক্ষুদ্র জীবণু থাকে যা কিনা ‘মাইট’ নামেই সচরাচর পরিচিত। এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, শতকরা প্রায় ষাট শতাংশ ক্ষেত্রে এ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য এই ‘মাইট’ দায়ী। সে জন্য যাঁরা হাঁপানি জনিত এ্যালার্জিক সমস্যায় ভোগেন তাঁরা ঘরের ধুলা সব সময় এড়িয়ে চলবেন। বিশেষ করে যখন ঘর ঝাড়ু দেবে তখন সেখান থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। ঘরের আসবাবপত্র, কম্বল, পর্দা, তোষক, বালিশ, প্রভৃতিতে যে ধুলা জমে থাকে তা পরিষ্কার করার সময় দূর সরে থাকতে হবে। খাদ্যে প্রচুর এ্যালার্জির সম্ভাবনা থাকে। যেমন দুধে এ্যালার্জি, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গরুর দুধে খুবই বেশি এলার্জি হতে দেখা যায়। গরুর দুধে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গায়ে চুলকানি, হাঁপানি ইত্যাদি হতে দেখা যায়। এছাড়া গমে এ্যালার্জি, ডিমে, মাছে এ্যালার্জি হতে দেখা যায়। এছাড়া বাদাম, কলা, আপেল, আঙ্গুর, ব্যাঙের ছাতা, তরমুজ, পেঁয়াজ, রসুন, চকোলেট এমনকি ঠান্ডা পানীয় কোন কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ্যালার্জি সৃষ্টি করে। পতঙ্গে কামড়ে গায়ে চুলকানি, স্থানটি ফুলে যাওয়া এমনকি হাঁপানি পর্যন্তও হতে দেখা যায়। মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল প্রভৃতি পতঙ্গের কামড়ে দেহে এ্যালার্জির সৃষ্টি হয়। এছাড়া রোমশ ও পালকবিশিষ্ট জীবজন্তু; যেমন বিড়াল, কুকুর, অশ্ব প্রভৃতি গৃহপালিত পশু অনেক সময় এ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এছাড়া একটি চর্মরোগ আছে যাকে বলা হয় আর্টিকোরিয়া। বাংলায় কেউ কেউ আমবাতও বলে থকেন। এক্ষেত্রে ত্বকে চাকা চাকা হয়। আর ফুলে ওঠে চুলকাতে দেখা যায়। এটিও হলো এ্যালার্জির অন্যতম প্রকাশ। অধিকাংশ লোকের জীবনেই কোন না কোন সময় এই রোগ হতে দেখা যায়। এই আর্টিকোরিয়া শরীরের কোন অংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে অথবা সমস্ত শরীর ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে বিভিন্ন আকারের লালচে চাকা চাকা ফোলা দাগ হতে দেখা যায় এবং সেই সঙ্গে থাকে প্রচন্ড চুলকানি। অনেক কারণের মধ্যে খাদ্য এ্যালার্জি থেকেও এ রোগ হতে পারে। যেমন- বাদাম, ডাল, মাংস, ডিম ইত্যাদি। এছাড়া এই এ্যালার্জির সৃষ্টি পতঙ্গ থেকেও হতে পারে যেমন- বোলতা, মৌমাছি, ভীমরুল, মাকড়সা প্রভৃতির কামড়ে এই এ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। এছাড়া ওষুধে এ্যালার্জি হতে পারে। অনেক ওষুধই এ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য দায়ী। এর মধ্যে পেনিসিলিন আর অৎসপিরিন অন্যতম। জ্বর, গায়ে ব্যথা, মাথার ব্যথা, পাঁচড়া, ফোড়া ইত্যাদির জন্য এই ওষুধ দুটো আমরা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই খেয়ে থাকি। কিন্তু মনে রাখতে হবে এর থেকে গায়ে এ্যালার্জি জনিত চুলকানি তো হতেই পারে। এমনকি পেনিসিলিন ব্যবহারের কারণে মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। এমনি অসংখ্য ওষুধ আছে যা খেলে গায়ে এ্যালার্জির সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ কখনই খাওয়া উচিত নয়। আমরা শিশুদের টিকা দিয়ে থাকি। মনে রাখতে হবে কোন কোন টিকা বা ভ্যাকসিনে ব্যক্তিবিশেষে এ্যালার্জি হতে দেখা যায়। সুতরাং ভ্যাকসিন দেয়ার পর আপনার শিশুকে যদি এ্যালার্জি চুলকানি ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় তা হলে অবশ্যই আপনার শিশুকে ডাক্তারের কাছে নেয়া উচিত। মোট কথা, এ্যালার্জি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। আপনি এ্যালার্জিতে ভুগলে লক্ষ্য করবেন কোন খাবারে আপনার এ্যালার্জি হয় কি-না? যদি খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়, তবে সেই খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে। মোট কথা- যে কারণে আপনার এ্যালার্জি হয় সেই কারণ এড়িয়ে চলতে হবে।
×