ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ কার্ডিফে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচ

পাকিদের হারাতে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৪১, ২৬ মে ২০১৯

পাকিদের হারাতে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ তিন বছর আগে থেকেই পাকিস্তানকে এমন হারের বাক্সে বন্ধী করেছে বাংলাদেশ, তা থেকে আর বের হতে পারছে না দলটি। আজ দুই দলের মধ্যকার বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ রয়েছে। আজও কী তাহলে পাকিস্তানকে হারাবে বাংলাদেশ? বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি কার্ডিফে বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হবে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রিকেট পরিসংখ্যান দেখতে এখন কত ভাল লাগে, তাই না? যে পাকিস্তান দলটিকে বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর প্রায় ১৬ বছর কোন ওয়ানডে ম্যাচে হারাতে পারেনি, সেই দলটিকেই ২০১৫ সাল থেকে টানা হারিয়েই চলেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে ম্যাচেও হারেনি বাংলাদেশ। শুধুই জয় সঙ্গী হয়েছে। চার ম্যাচে লড়াই করে চারটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। আজ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান আরেকটি ম্যাচ রয়েছে। এটি যদিও বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ। এই ম্যাচ দিয়েই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কতদূর যাবে তা ধীরে ধীরে বোঝা হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের জন্যও এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। বিশ্বকাপের আগে যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ রয়েছে পাকিস্তান ও ভারতের (২৮ মে) বিপক্ষে, দুটিতেই বাংলাদেশের শক্তিমত্তা দেখা হবে। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ শিরোপা জিতেছে ঠিক। কিন্তু ফাইনালের দলটিও যে পুরোশক্তির ছিল না সেটিও বাংলাদেশ ক্রিকেটার, কোচদের ভাল করে জানা। তাই পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে যেহেতু প্রস্তুতি ম্যাচ বিশ্বকাপের ঠিক আগেই খেলা হচ্ছে আর পুরোশক্তির দলই প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে খেলতে পারে, তাই এই ম্যাচগুলোই বিশ্বকাপের আগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে সিনিয়র পাঁচ ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছাড়াও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রুবেল হোসেন, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান রুম্মনের সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিঠুন, আবু জায়েদ রাহী, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও লিটন কুমার দাস রয়েছেন। প্রত্যেক ক্রিকেটারই আছেন ফর্মে। মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদুল্লাহরতো তুলনাই হয় না। তাদের ওপরই আসলে মূল দায়িত্ব থাকছে। তারা যে দলের সিনিয়র। রুবেল যদি পুরো ফিট থাকেন তাহলে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জেতানো ম্যাচটির মতো ঝলকানি দেখিয়ে দিতে পারলেইতো হলো। প্রতিপক্ষ কাত। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে লিস্ট-এ ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করা সৌম্য সরকারের ব্যাটিং জৌলুসতো ত্রিদেশীয় সিরিজেও দেখা গেল। সাব্বির যে কতটা বিপজ্জনক তাতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতেই প্রমাণ দিয়েছেন। মুস্তাফিজতো পেস আক্রমণের মধ্যমণিই হয়ে আছেন। মেহেদী হাসান মিরাজ বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে বিপদের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন। সৈকতকো নিজেকে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের মাধ্যমে অনেক ওপরে নিয়ে গেছেন। তার ওপর তাই নির্ভরশীলও হয়ে থাকতে হচ্ছে। সুযোগ মিললেই ব্যাটিং ঝড়ের সঙ্গে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিংটাও আবারও যে কোন দলের সঙ্গে দেখিয়ে দিতে পারেন সৈকত। মোহাম্মদ মিঠুনকে মাঝপথে ভরসা করা হচ্ছে। সেটির প্রতিদান এখন কতটা মিঠুন দিতে পারেন সেদিকে নজর থাকছে। আবু জায়েদ রাহীকে নিয়ে অনেক জল ঘোলা হলেও শেষ পর্যন্ত রাহী দলে টিকে আছেন। ত্রিদেশীয় সিরিজে এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে একাদশে নিজের খেলার দাবিও তুলে রেখেছেন। সাইফউদ্দিনকেতো ভবিষ্যতে দলের সেরা পেস অলরাউন্ডারই ভাবা হচ্ছে। লিটনতো ড্যাশিং ব্যাটসম্যান। সুযোগ পেলেই ব্যাটিং শৈলী দেখিয়ে নিজেকে উজাড় করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের দল। খেলবেন মাঠে এগারোজন। সেই এগারোজন যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেন তাহলে প্রতিপক্ষ কী পারার কথা? একদমই না। পাকিস্তান দলকেতো নড়বড়েই লাগছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৪-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে পাকিস্তান। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। নাহলে হয়তো সেটিও হারতে পারত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে যে ম্যাচটি ব্রিস্টলে খেলল পাকিস্তান, সেখানেও দাপট নেই। উল্টো ৩ উইকেটের হার হয়েছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে টানা ১০ ওয়ানডে হারের পর আফগানদের কাছেও হার হয়েছে পাকিস্তানের। পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলে আবার শেষ মুহূর্তে তিনটি পরিবর্তনও আনা হয়েছে। যদিও ইংল্যান্ডে পাকিস্তান বরাবরই শক্তিশালী দলই থাকে। শুরুতে তাদের আমলে নেয়া হয় না। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে পাকিস্তান ফ্রন্টলাইনে চলে আসে। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে হওয়া বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয় পাকিস্তান। আবার ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও জিতে নেয়। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের ২৫ বছর পর আবার কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে পাকিস্তান। দলে আবার ফখর জামান আছেন। যিনি প্রথমবার কোন টুর্নামেন্ট (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) খেলতে নেমে প্রথমবার জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে টুর্নামেন্টে ফাইনালে ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি (১১৪ রান) করে পাকিস্তানকে শিরোপা এনে দেন। ফখরের সঙ্গে ইমাম উল হক, বাবর আজম, হারিস সোহেল, অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, সরফরাজ আহমেদ, ইমাদ ওয়াসিম, সাদাব খান, হাসান আলীর সঙ্গে পরে দলে ঢোকা মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজরা আছেন। দল শক্তিশালীই। এই দলকেই এখন যদি বাংলাদেশ হারাতে পারে তাহলে বিশ্বকাপে যে দল ভাল করবে তাও ধরে নেয়া হবে। আর হারলে পথ যে কতটা কঠিন তা ধরা পড়বে। বাংলাদেশ দল এরই মধ্যে কার্ডিফে অনুশীলনও করেছে। পুরো দল অনুশীলন করেছে। নিজেদের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। শুধু এখন মাঠে ভাল খেলার অপেক্ষা। সেই ভালর শুরুটা আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে হয়ে গেলেওতো খারাপ হয় না। ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতে দলের ক্রিকেটাররা অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। সেই আত্মবিশ্বাস দিয়ে পাকিস্তানকে আজ হারাতে পারলে বিশ্বকাপেও যে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুছড়ে দেয়া যাবে সেই বিশ্বাসও তৈরি হয়ে যাবে। মানসিকভাবেও ক্রিকেটাররা অনেক চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এখন পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই হলো। পাকিস্তানকে হারাতে না পারলে তখন উল্টোটাও হয়ে যেতে পারে। বিশ্বকাপ মঞ্চের কঠিন পথ যে আরও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠতে পারে। ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস এবং মানসিকতায় ভাটা দেখা যেতে পারে। যা দলের ওপরই প্রভাব পড়বে। আর তাই আজ পাকিস্তানকে হারানো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পারবে বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানকে হারাতে?
×