ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৫২ শতাংশ হিসাব নিষ্ক্রিয়

প্রকাশিত: ১২:১৭, ১৫ মে ২০১৯

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৫২ শতাংশ হিসাব নিষ্ক্রিয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অর্ধেকেরও বেশি হিসাবে লেনদেন হচ্ছে না। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে এই সেবার আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৫৮ হাজার। সেই হিসাবে প্রায় ৫২ শতাংশ হিসাবই নিষ্ক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে শুধু একটি ব্যাংক হিসাব চালুর বাধ্যবাধকতা চালু, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ হুন্ডি তৎপরতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপসহ লেনদেনের ওপর নানা বিধি-নিষেধের ফলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বেশ তৎতপরতা চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় কমপ্লায়েন্স আসছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৪০ হাজার। যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৬৬ হাজার। এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার। তবে গ্রাহক সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা বাড়েনি সেই হারে। টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুত, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিটেন্স প্রেরণ ইত্যকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন পছন্দের মাধ্যম। পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, মার্চে শেষে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৫৮ হাজার। সেই হিসাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ৫২ শতাংশ হিসাবই নিষ্ক্রিয়। ফেব্রুয়ারিতে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৩০ হাজার। এমএফএস এ গত মার্চে প্রতিদিন গড়ে ৬৭ লাখ ৪৪ হাজার লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ১১৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আদান-প্রদান হয়েছে। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১৯ হাজার ১৯১ জন। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, মার্চ মাসে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে ১৩ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা জমার বিপরীতে উত্তোলন করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসেবে টাকা স্থানান্তর হয়েছে ৫ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে ৭৫৬ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সরকারী পরিশোধ ২ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৫২৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারী খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দৈনিক ও মাসিক লেনদেনের সীমা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে একজন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। পূর্বে এই হার ছিল ২৫ হাজার টাকা। গ্রাহক দৈনিক দুই বার এবং মাসে ১০ বার এই সেবা নিতে পারবেন, যা আগে ছিল দৈনিক তিন বার এবং মাসে ১০ বার। একইসঙ্গে দৈনিক জমার সীমাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে এখন থেকে দিনে সর্বোচ্চ দুই বারে ১৫ হাজার টাকা করে পাঠানো যাবে। যা মাসে সর্বমোট ধ২০ বারে এক লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না। আগে দিনে পাঁচ বারে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ ২০ বারে দেড় লাখ টাকা করে জমা করা যেত। এছাড়া একটি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে টাকা জমার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই হিসাব থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার বেশি নগদ উত্তোলন করা যাবে না। পাশাপাশি ৫০০০ টাকা বা এর অধিক লেনদেন করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিপত্র প্রদর্শনের বিধান করা হয়েছে। এমনকি রেজিস্ট্রারে গ্রাহকের স্বাক্ষর বা টিপসই সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোন এজেন্ট এই ধরনের কার্যাদি যথাযথভাবে সম্পন্ন না করলে বা গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে এজেন্টশিপ বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিয়মানুযায়ী, কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেই তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। কিন্তু সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অপব্যবহার ঠেকাতে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে হিসাব খেলা ও পরিচালনা এবং লেনদেনে আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, এখন একজন ব্যক্তি একটি সিম দিয়ে যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব চালু রাখতে পারবেন। ওই নির্দেশনার পর যাদের একাধিক হিসাব ছিল তা বন্ধ করা হয়। চলমান রয়েছে, তা দ্রুত বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
×