ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উঁচু গাছের ঝুলন্ত মঞ্জরি, গ্রীষ্মের গোল্ডেন শাওয়ার

প্রকাশিত: ১০:১৯, ৬ মে ২০১৯

উঁচু গাছের ঝুলন্ত মঞ্জরি, গ্রীষ্মের  গোল্ডেন শাওয়ার

মোরসালিন মিজান ॥ গ্রীষ্মের কত যে ফুল! একেকটির একেক রকম সৌন্দর্য। আজ সোনালুর কথা হোক। ফুলটি এতদিনে অনেকেরই দেখা হয়ে গেছে। কিন্তু প্রসঙ্গ তুলতেই এক পরিচিত ভদ্রলোক সেদিন বলে বসলেন, না, দেখিনি তো। রং রূপ বর্ণনা করার পরও তিনি সংশয় প্রকাশ করলেন। এ অবস্থায় মোবাইল ফোনে ছবি দেখাতে হলো। অমনি পরিবর্তন। ভেতরের চাঞ্চল্য গোপন করার আর চেষ্টা করলেন না তিনি। লম্বা হয়ে ঝুলতে থাকা হলুদ মঞ্জরির দিকে তাকিয়ে বললেন, এ তো আমি রোজ দেখছি। কাঁচা হলুদ রঙের ফুলটি তাহলে সোনালু! গল্পটি বলার কারণ- এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ফুলটি দেখছেন প্রতিদিন। কিন্তু নামে চেনেন না। চেনার একটু চেষ্টা করুন। আনন্দটা বেড়ে যাবে। গাড়িতে করে যেতে যেতে দেখা নয় শুধু, সময় সুযোগ করে গাছের নিচে দাঁড়ান। খুঁটিয়ে দেখুন। চমৎকার একটা অনুভূতি হবে। হ্যাঁ, সৌন্দর্য বর্ধনের চিন্তা করে শহর ঢাকার রাস্তায় প্রচুর সোনালু লাগানো হয়েছিল। গাছগুলো ক্রমে বড় হয়েছে। এখন পাতা দেখা যায় না। ফুল আর ফুল শুধু। দেখে মনে হয় সোনারঙে মোড়ানো এক একটি গাছ। সোনালু ঠিক ফুলবাগানের গাছ নয়। সাধারণ গাছের মতো উঁচু। তাই রাস্তার ধারে বা ভবনের দেয়াল ঘেঁষে লাগানো হয়। এলোমেলো ছড়িয়ে থাকা ডালপালা ফুলের সৌন্দর্যের গুণে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। গাছটিকেই সোনালী মনে হয়। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা থেকে জানা যায়, সোনালু গাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর ইংরেজি নাম ‘গোল্ডেন শাওয়ার।’ গাছের ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসা সোনালু ফুলের মঞ্জরি শাওয়ারের জলধারার মতোই দেখায়। এ কারণে গোল্ডেন শাওয়ার নাম। ফুলের পাঁচটি পাপড়ি। দশটি পুংকেশর। ভেতরে সবুজ রঙের তিনটি গর্ভকেশর আছে। এগুলো অর্ধচন্দ্র আকৃতির। সোনালু গাছের বাকল পুরো এবং মসৃণ। ফাল্গুনে ব্যাপকহারে পাতা ঝরে। চৈত্রে পাতাহীন শুকনো কাঠির মতো গাছ হয়। ন্যাড়া দেখায়। বৈশাখে অপার সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। সোনালুর বৈজ্ঞানিক নাম কেসায়্যা ফিস্টুলা। নামটি গ্রিক ভাষা থেকে নেয়া। ফিস্টুলা শব্দের অর্থ বাঁশি। বাঁশির মতো লম্বা ফলের জন্য এমন নামকরণ বলে জানা যায়। সোনালু ফুলকে ‘বানরলাঠি’ বলেও ডাকা হয়। ফল ও গাছের পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এ কারণে একে ‘বানরলাঠি’ বলা হয়ে থাকতে পারে। ফল এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ দেখতে হয়। পাকলে কালচে লাল। সোনালুর কিছু ঔষধী গুণও আছে। গাছটি বাংলাদেশে এসেছে পূর্ব ভারত থেকে। সে বহুকাল আগের কথা। এখন সারাদেশেই কম বেশি চোখে পড়ে বলে নিসর্গবিদরা জানিয়েছেন। একই সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে...। বাংলার প্রকৃতিকে সত্যি ভরিয়ে দিয়েছে সোনালু।
×