ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রমজান এলেই-

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৬ মে ২০১৯

রমজান এলেই-

রমজান এলেই দেশের মানুষের ওপর অবধারিতভাবে চাপে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা। রোজার মাসে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া যেন অনেকটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। রমজানে রোজাদাররা সেহরি ও ইফতারিতে ভালমন্দ খেয়ে থাকেন। এ সময় বিশেষ কয়েকটি খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা একটি চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সুযোগটি কাজে লাগায় এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ব্যবসায়ী। তারা খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান তাদের কাছে হয়ে দাঁড়ায় অতিরিক্ত মুনাফার মাস। পণ্যমূল্য বাড়লে সে ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাজারে টান পড়ে সাধারণ মানুষের। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই রমজানে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গত কয়েক মাস ধরে দেশে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল। এটি নিঃসন্দেহে বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি সাফল্য। মাঝে-মধ্যে দু’একটি পণ্য নিয়ে বাজার একটু সরগরম হলেও তা নিছক ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া বিকল্প কিছু বলা যাবে না। আরও একটি বিষয় হলো, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারেও ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সরবরাহ এবং মজুদও পর্যাপ্ত। রমজানে ব্যবসায়ীরা নানা কারসাজি করে থাকে প্রতিবছরই। দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা নানা সময় নানা অজুহাতও দিয়ে থাকেন। কখনও বলেন আকস্মিক মৌসুমী বৃষ্টিপাত, কখনওবা বৈশাখ মাস, কখনও বলেন চাহিদা বেশি, যোগান কম ইত্যাদি। চালের বাজার বর্তমানে স্থিতিশীল। এবার ধানের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। সুতরাং চালের দাম বাড়ার কথা নয়। কেননা, দেশ ধান-চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অন্যদিকে বিশ্বে সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ এবং গবাদিপশু ও পোল্ট্রিতে উৎপাদন বাড়লেও ক্রেতাকে এসব পণ্যই কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। ফলে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস ওঠে আর অসহায় হয়ে পড়ে গরিব ক্রেতারা। এবার তেমনটি হবে না বলে মানুষ আশা করে। ব্যবসা-বাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি থাকবেই। তবে এ সবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। অস্বীকার করার নয় যে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর সাময়িক প্রভাব পড়তে পারে বাজারে। ফেরি পারাপার বন্ধ থাকায় দক্ষিণ বঙ্গ থেকে সবজিবাহী ট্রাকগুলো সময়মতো রাজধানীতে আসতে পারেনি। এছাড়া ফণীর প্রভাবে সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে কিছুটা। অল্প কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তবে এসবই সাময়িক ও সীমিত আকারে। তাই ফণীর দোহাই দিয়ে চালের দাম, এমনকি নিত্যপণ্যের দাম যেন না বাড়ানো হয় সেদিকে কড়া নজরদারি রাখা প্রয়োজন। পেঁয়াজ ও চিনির দাম বাড়ার কোন যৌক্তিক কারণ না থাকলেও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে না পারে সেটিও লক্ষ্য রাখা দরকার। প্রসঙ্গত, রমজানে ইফতারিতে যে সমস্ত খাদ্যপণ্য বেশি ব্যবহার হয় সেগুলোর উৎপাদন, আমদানি, মজুতকরণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চলমান। অসাধু শিল্পপতি, উৎপাদনকারী, কৃষক, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, মজুদদার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা অধিক মুনাফার লোভে এসব খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভেজালের মিশ্রণ করে থাকে, যা মানুষের গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় উৎপাদন পর্যায় থেকে বাজারজাতসহ খাদ্য গ্রহণ পর্যন্ত খাদ্যকে নিরাপদ রাখতে জোর কার্যক্রম পরিচালনা করা যে আবশ্যক সে কথা না বললেও চলে। মোটকথা রমজানে কোন ধরনের খাদ্য নৈরাজ্য, দামের স্বেচ্ছাচারিতা ও ভেজাল মানুষ দেখতে চায় না।
×